• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
মহান বিজয় দিবস আজ

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

মহান বিজয় দিবস আজ

  • সোহেল অটল
  • প্রকাশিত ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। আরাধ্য দিন বাঙালির। পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির সঙ্গে দিনটি উৎসব-আনন্দের। একাত্তরের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণে জন্ম নেয় নতুন দেশ বাংলাদেশ। বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদ্বয় ঘটে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সবুজ এক ভূখণ্ড। উদয় হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সূর্য। শেষ হয় বাঙালির দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম। অবসান ঘটে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাড়ে তেইশ বছরের নির্বিচার শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের কালো অধ্যায়। বিজয়ের ৪৭ বছর পূর্ণ হলো আজ।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকালে ঢাকার ঐতিহাসিক রোসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রায় ৯২ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণে সূচিত হয় বিজয়ের চরম মাহেন্দ্রক্ষণ। দাম্ভিক পাকিস্তানি সৈন্যরা যে অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে বাঙালির বুকে, হাতের সেই অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সামনে। মরণপণ লড়াই করে বীর বাঙালি ছিনিয়ে এনেছিল লাল-সবুজের পতাকা।

পূর্বাচলে আজ উদিত যে সূর্য, প্রতিদিনের হয়েও সে প্রতিদিনের নয়, তার রক্তিমতায় নাম জানা-অজানা তিরিশ লাখ শহীদের রক্ত আমাদের মনে পড়বে, আকাশ যে কোমলতায় আজ উদ্ভাসিত, একাত্তরের সম্ভ্রমহারা দশ লাখ মা-বোন-জায়ার ক্রন্দনধোঁয়া সে উদ্ভাস। দেন-দরবার কিংবা কারো দয়ায় নয়, সাগর-সমান রক্তের দামে স্বাধীনতা। বিজয়ের এই দিনে অভিবাদন তোমাকে, বাংলাদেশ। আনন্দ-উৎসবের পাশাপাশি গভীর বেদনায় দেশে-বিদেশে বাঙালিরা স্মরণ করবে দিনটি। স্বাধীনতার জন্য যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, কৃতজ্ঞ জাতি গভীর বেদনা ও পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে মৃত্যুঞ্জয়ী সেই বীর সন্তানদের। স্বাধীনতা অর্জনে দীর্ঘ সংগ্রামদীপ্ত পথ পাড়ি দিতে হয়েছে বাঙালিকে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে অভ্যুদয় পাকিস্তান রাষ্ট্রের। বাঙালির ওপর নেমে এসেছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ, নির্যাতন। প্রথম আঘাত আসে মাতৃভাষার ওপর। ১৯৫২ সালে বুকের রক্তে রাজপথ রাঙিয়ে বাংলা মায়ের সন্তানরা মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল বিশ্বে। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে স্বাধিকার চেতনার স্ফুরণ ঘটেছিল, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় কালক্রমে তা স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার সামনে ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

এর ১৭ দিন পর ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র, নিরপরাধ ঘুমন্ত বাঙালির ওপর ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বর্বর হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল তারা। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে ওই রাতেই তারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। তবে তার আগেই তিনি বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার বার্তা দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণায় তিনি বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।

কর্মসূচি : ভোরে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচির সূচনা হবে। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামবে কৃতজ্ঞ জনতার ঢল। বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মহান ত্যাগের কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞ জাতি শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। দেশব্যাপী আজ সকল ভবনের শীর্ষে উড্ডীন থাকবে রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ পৃথক বাণী দিয়েছেন।

যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বিদেশি কূটনীতিকরা শ্রদ্ধা জানাবেন স্মৃতিসৌধে। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের বিশিষ্টজনদের সংবর্ধনা দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। মহান বিজয় দিবসে সব সরকারি-বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা, সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। শনিবার রাত থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকাসহ অন্যান্য পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে।

হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা, ভবঘুরে কেন্দ্রসমূহে পরিবেশন করা হবে উন্নতমানের খাবার। বহির্বিশ্বের বাংলাদেশের মিশনসমূহে বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে বিজয় উৎসব। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে কাল সোমবার বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিহক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, সিপিবি, সাম্যবাদী দল, গণফোরাম, গণতন্ত্রী পার্টি, জাকের পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ অনেক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পালন করছে বিস্তারিত কর্মসূচি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads