• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
পাঁচ সরকারি প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়নে কৌশলপত্র

বিশ্বব্যাংক

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

পাঁচ সরকারি প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়নে কৌশলপত্র

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০৩ জানুয়ারি ২০১৯

আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার চলমান উদ্যোগে গতি আসছে। এরই অংশ হিসেবে অর্থ আয় ও ব্যয়ে সংশ্লিষ্ট পাঁচ সরকারি প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে কৌশলপত্র। ৩৫ কোটি ৬৫ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় ধরে বাস্তবায়নাধীন কৌশলপত্রে গতি আনতে বাড়তি ১৭ কোটি ডলারের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে। এতে ১০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে বহুজাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৮২০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থ ব্যয় করে ২০২৩ সালের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পরিকল্পনা কমিশন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) কার্যালয় ও সরকারি ক্রয় কারিগরি ইউনিটের (সিপিটিইউ) আধুনিকায়নে কাজ করা হবে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠির প্রেক্ষিতে ১০ কোটি ডলার সহায়তার প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এর অংশ হিসেবে সংস্থাটি একটি অবস্থানপত্রও তৈরি করেছে।

অবস্থানপত্রে বিশ্বব্যাংক বলেছে, ২০১২ সালের তুলনায় বাংলাদেশে আইনের শাসন, নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় বাংলাদেশের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অবনতি হয়েছে বাকস্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা, সরকারের কার্যকারিতা ও দুর্নীতি দমনের সূচকে। ছয় সূচকেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ পিছিয়ে। এ সময়ে রাজস্ব খাতে উন্নতি হলেও বাজেট প্রণয়ন, অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে সীমাবদ্ধতা। রাজস্ব আহরণের পরিমাণ এখনো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১০ শতাংশের কম। ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে সরকারের ৮০ শতাংশ প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, সরকারি প্রশাসনে ব্যয় বাজেটের ২৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকার বিষয়টি বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যবস্থার ইতিবাচক দিক। এর ফলে উন্নয়ন খাতে বাড়তি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তথ্য অধিকার আইনের সুবাদে সরকারের কার্যক্রম প্রকাশ্যে আসার সুযোগ বাড়ছে। এরপরও সরকারের মূল তত্ত্বাবধান প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষা, বিচারালয়, দুর্নীতি দমন, সংসদীয় কমিটি ও নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তা ছাড়া উন্নয়নের বড় লক্ষ্য পূরণে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধির তাগিদও দেওয়া হয়েছে অবস্থানপত্রে।

এতে আরো বলা হয়েছে, গত দুই দশকে সুশাসনের উন্নতিতে বড় ভূমিকা রেখেছে সরকারি অর্থায়ন ব্যবস্থাপনা। এরপরও এ খাতে বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ সময়ে ৩ দশমিক ১ শতাংশ থেকে বেড়ে বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সরকারি ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৩১ শতাংশে নেমে এসেছে। সরকারের উন্নয়ন ব্যয় বাজেটের ৪১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ জিডিপির ৯ শতাংশে সীমাবদ্ধ থাকার বিষয়টি বড় ধরনের উদ্বেগের কারণে পরিণত হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নের হারও কমে আসছে। সরকারের বিনিয়োগের মানও কমে আসছে। সরকারের অন্তত ৮০ শতাংশ প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে বিলম্বে। এর ফলে প্রকল্প ব্যয় বাড়ছে। বিনিয়োগ থেকে লাভ আসছে প্রত্যাশার চেয়ে কম। বাড়ছে ঋণ পরিশোধের ব্যয়।

তা ছাড়া বাজেটে খাতভিত্তিক অর্থ বরাদ্দের হার নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় অবকাঠামো দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। কৃষি খাতে ভর্তুকির নকশা ও লক্ষ্যমাত্রায় গলদ রয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বরাদ্দের পরিমাণ অনেক কম।

এতে আরো বলা হয়েছে, সরকারের খাতভিত্তিক অর্থ বরাদ্দে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কার্যকর হচ্ছে না। বিলম্বে অর্থ ছাড়ের কারণে অনেক প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মন্ত্রণালয় পর্যায়ে অনুমোদনে বিলম্বের কারণে প্রকল্প পিছিয়ে যায় অন্তত ২ মাস। ক্রয় কার্যক্রমে ধীরগতির কারণেও প্রকল্প পিছিয়ে যায়। উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালের জন্য ওষুধ কিনতে সময় লাগে ১৫ থেকে ১৮ মাস।

বিশ্বব্যাংক সূত্র জানায়, ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নেওয়া কর্মপরিকল্পনায় দরিদ্রদের প্রাধান্য দিয়ে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে রাজস্ব খাতে সংস্কারে উদ্যোগ থাকবে। থাকবে সরকারের অগ্রাধিকার খাতে অর্থায়নের পরিকল্পনা। সরকারের সম্পদ ব্যবহারে দক্ষতা, জবাবদিহিতার দিকনির্দেশনা থাকবে পরিকল্পনাটিতে।

পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে এনবিআরের আধুনিকায়নে ৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, পরিকল্পনা কমিশনের আধুনিকায়নে ২ কোটি ১ লাখ ডলার, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আধুনিকায়নে ৪ কোটি ২ লাখ ডলার, সিএজি কার্যালয় আধুনিকায়নে ১ কোটি ২ লাখ ডলার, সংসদ সচিবালয়ে ৬৪ লাখ ডলার ও সিপিটিইউ আধুনিকায়নে ৬ কোটি ডলার ব্যয় হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads