• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ভিন্ন আয়োজনে হবে এবারের পুলিশ সপ্তাহ

ভিন্ন আয়োজনে হবে এবারের পুলিশ সপ্তাহ

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

পুলিশ হবে মানুষের সেবক শাসক নয় : প্রথম পুলিশ সপ্তাহে বঙ্গবন্ধু

ভিন্ন আয়োজনে হবে এবারের পুলিশ সপ্তাহ

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ ২০১৯। নির্বাচনের কারণে জানুয়ারির পরিবর্তে পুলিশ সপ্তাহ ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে নির্বাচনী ধকল শেষে ফুরফুরে আমেজে এবারের পুলিশ সপ্তাহ পালিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া বছরজুড়ে যারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে পুলিশ বাহিনীর যে সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন পদক প্রাপ্তিতে তাদের অগ্রাধিকার দেবে কমিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নতুন বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে জমকালো কুচকাওয়াজের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন। এবার সেটা ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে বার্ষিক প্যারেড সালাম গ্রহণ শেষে পদক বিতরণ ও উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির স্টল পরিদর্শন শেষে পুলিশ অডিটরিয়ামে পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কল্যাণ সভায় যোগ দেবেন তিনি। সভায় পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন নেতারা তাদের সার্বিক অবস্থা বর্ণনা করে কিছু দাবি দাওয়া তুলে ধরবেন। পুলিশ বাহিনীর সমস্যা সমাধান ও লজিস্টিক বাড়াতে সরকারের নেওয়া নানা প্রশংসনীয় উদ্যোগও তুলে ধরা হবে সভায়। মধ্যাহ্নভোজের মধ্য দিয়ে এই সভার সমাপ্তি ঘটবে। ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেবেন। ৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা বঙ্গভবনে যাবেন। সেখানে রাষ্ট্রপতি তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এ ছাড়া সপ্তাহজুড়ে পুলিশ বিভিন্ন সভা সেমিনারের আয়োজন করবে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট নিজেদের ২০১৮ সালের কাজের মূল্যায়ন করে নতুন বছরের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করবেন। পরিশেষে ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশ অফিসার্স মেস ও বাংলাদেশ পুলিশ অফিসার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আইনশৃঙ্খলা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত মতবিনিময় করবেন। এ ব্যাপারে পুলিশের এআইজি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন মো. সোহেল রানা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এবারের পুলিশ সপ্তাহ বৈচিত্র্যময় হবে। পুলিশ সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সপ্তাহটি পালন করবে। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২-৩ মাস আগে থেকেই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত ছিল। নির্বাচনী ধকল শেষে এবারের পুলিশ সপ্তাহটি স্বাচ্ছন্দ্যেই পালিত হবে।

পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত গতকাল এক সভায় পুলিশ মেসকে নতুনরূপে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে সারা দেশ থেকে আগত পুলিশ সুপার ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা এই মেসে উঠবেন। তাদের বাসযোগ্য এবং সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পুলিশ পদক প্রসঙ্গে অতিরিক্ত আইজিপি প্রশাসন মোখলেসুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বছরজুড়ে যারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে একটি অংশ, যারা বিভিন্ন ক্রাইসিস যেমন জঙ্গি দমন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে স্টুডেন্ট মুভমেন্ট, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির নামে সহিংসতা মোকাবেলায় আহত/নিহত হয়েছে বা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে তাদের বিশেষ বিবেচনায় রাখা হয়েছে পদকের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন সেবা ধর্মী কাজে যেসব পুলিশ সদস্যরা দৃষ্টান্তমূলক কাজ করেছেন তাদের দেওয়া হবে। (পিপিএম  সেবা ) রাষ্ট্রপতি পদক ও (বিপিএম সেবা) বাংলাদেশ পুলিশ পদক। এ ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র, মাদক উদ্ধার, চিহ্নিত সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারে যারা সফলতারা পরিচয় দিয়েছে তাদেরও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালে প্রথম পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হয় রাজার বাগ পুলিশ লাইন মাঠে। ৪৩ বছর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো : আজ তিন বছর হলো বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। আজ প্রথম আমাদের পুলিশ সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। এখন একটা কথা আমাদের মনে রাখা দরকার,  যে রক্ত দিয়ে আমরা স্বাধীনতা এনেছি, সেই রক্ত দিয়েই স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। পুলিশ বাহিনীর ভাইয়েরা, এই রাজারবাগে যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের কথা মনে রাখতে হবে। তারা আপনাদেরই ভাই। তারাও পুলিশে চাকরি করতেন। জনগণের সঙ্গে তারা হাত মিলিয়েছিলেন। ত্রিশ লাখ লোকের সঙ্গে পুলিশের অনেক লোকও আত্মত্যাগ করেছিলেন। তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়। তাদের ইজ্জত আপনারা রক্ষা করবেন। তাদের সম্মান আপনারা রক্ষা করবেন। তাদের আত্মা যাতে শান্তি পায়, সেদিকে  খেয়াল রাখবেন। মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা পাওয়া  যেমন কষ্টকর, স্বাধীনতা রক্ষা করাও তেমনি কষ্টকর।

আমি জানি, আপনাদের নানা রকম অসুবিধা আছে। ৭০  থেকে ৮০টা থানা হানাদার বাহিনী ধ্বংস করে দিয়েছিল। মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল। সেগুলো আমরা নতুন করে গড়তে  চেষ্টা করছি। অনেকগুলো গড়া হয়েছে। অনেকগুলোর কাজ চলছে। আপনাদের কিছুই ছিল না। আজ আস্তে আস্তে কিছু কিছু হতে চলেছে। এক দিনে কিছুই হবে না। বাংলাদেশের মানুষ দুঃখী, বাংলাদেশের মানুষ গরিব, বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে কষ্ট পায়। যুগ যুগ ধরে তারা শোষিত হয়েছে। আজ তাদের অবস্থা যে কেমন। আপনারা ভাড়াটিয়া নন। আপনারা বাংলা মায়ের ছেলে। আপনাদের বাপ-মা এই বাংলাদেশে রয়েছেন। তাদের অবস্থা আপনারা জানেন। গ্রামে গ্রামে আপনারা দেখেছেন মানুষ হাহাকার করে, না খেয়ে কষ্ট পায়। বন্যা, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ে কষ্ট আরো বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসের দাম অত্যন্ত বেড়ে গেছে। ফলে মানুষের খাবার জোগাড় করতে আমাদের  বেশ  বেগ পেতে হচ্ছে। আজ গরিবের ওপর ট্যাক্স ধরার ক্ষমতাও আমাদের  বেশি  নেই। তারা টাকা  কোত্থেকে  দেবেন? তারা না খেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। এবার  যে বন্যা হয়েছে, যে দুর্ভিক্ষ হয়েছে, তা আপনারা  দেখেছেন।

আমি আপনাদের কাছে এই আশা করব, আপনারা হবেন আমার গর্বের বিষয়। বাংলাদেশের মানুষ যেন আপনাদের জন্য গর্ব অনুভব করতে পারে। আপনারা যদি ইচ্ছা করেন, আপনারা যদি সৎ পথে থেকে ভালোভাবে কাজ করেন, যদি দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থাকেন, তাহলে দুর্নীতি দমন করতে পারবেন। আপনারা যদি আজকে ভালোভাবে থাকেন, শৃঙ্খলা বজায় রাখেন, তাহলে আমি বিশ্বাস করি, যে থানায় ভালো অফিসার আছেন এবং ভালোভাবে কাজ করছেন, সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো প্রকার সমস্যা সৃৃষ্টি হতে পারে না। কারণ, তারা সবসময় সজাগ থাকেন এবং দুষ্টকে দমন করেন। যিনি  যেখানে রয়েছেন, তিনি সেখানে আপন কর্তব্য পালন করলে দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে না। মনে রাখবেন, আপনাদের মানুষ  যেন ভয় না করে। আপনাদের যেন মানুষ ভালোবাসে। আপনারা জানেন, অনেক দেশে পুলিশকে মানুষ শ্রদ্ধা করে। আপনারা শ্রদ্ধা অর্জন করতে শিখুন।

আমি আপনাদের এই সপ্তাহে কামিয়াবি কামনা করি এবং আরো কামনা করি সব পুলিশ কর্মচারী যিনি যেখানেই থাকুন না কেন, সবাই  যেন সৎ হওয়ার এবং মানুষকে ভালোবাসার সুযোগ পান। আজকে আপনারা আরো প্রতিজ্ঞা করুন, আমরা এমন পুলিশ গঠন করব, যে পুলিশ হবে মানুষের  সেবক, শাসক নয়। আমি পুলিশ বাহিনীর ভাইদের আন্তরিক  মোবারকবাদ জানিয়ে বলছি, একদিন বাংলার মানুষ সুখী হবে, এ বিষয়ে আমার  কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। সৎ পথে থাকতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads