• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

শ্রীপুর সাফারি পার্কে বাঘ শাবকের জন্ম

  • রেজাউল করিম সোহাগ, শ্রীপুর
  • প্রকাশিত ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আফ্রিকা থেকে আমদানি করা একটি বাঘ মা হয়েছে।  এর আগে পার্কটিতে সিংহ, ক্যাঙ্গারু, উট পাখি,গয়ালসহ বেশ কিছু বিরল প্রাণীর বাচ্চা হয়েছে। তবে আমদানি করা কোনো বাঘ শাবকের জন্ম হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। এ ঘটনায় পার্কটিতে আনন্দের বন্যা বইছে।   

পার্ক সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ থেকে ফ্যালকন ট্রের্ডাসের মাধ্যমে প্রথম ধাপে দুইটি পুরুষ বাঘ ও চারটি নারী বাঘ কেনা হয়। পরে সব বাঘগুলো অবাধ বিচরণের জন্য টাইগার বেষ্টনীতে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাঘ দম্পত্তির মেলামেশার দৃশ্য চোখে পড়ে। পরে নিয়মিত ওই বাঘিনীকে পর্যবেক্ষণে রাখে কর্মকর্তারা।  একটা সময় যখন নিশ্চিত হওয়া গেছে বাঘিনী গর্ভবতী হয়েছে তখন থেকেই অন্য বাঘগুলো থেকে আলাদা করে নিরাপত্তার জন্য অন্য একটি বেষ্টনীতে রাখা হয় গর্ভবতী বাঘিনীকে। মাস দেড়েক আগে জন্ম নিলেও আজ ১৪ ই জানুয়ারি গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ করে পার্ক কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই এতো দিন খবরটি গোপন রাখা হয়। 

পার্কের ওয়াল্ড লাইফ সুপার ভাইজার আনিসুর রহমান জানান, এর আগেও ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে বাঘ বাচ্চা দিয়েছে। তবে সেই সব বাঘগুলো আমাদের দেশীয় সুন্দরবনের বাঘ ছিল। দেশের বাইরে থেকে আনা কোনো বাঘিনী সাফারি পার্কে বাচ্চা দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। বাঘ ১০৪ দিন থেকে ১০৬ দিনে বাচ্চা প্রসব করে। তবে পরিবেশগত কারণে এটা ব্যতিক্রম হতে পারে। বাঘিনী ২-৫ টি বাচ্চা প্রসব করে থাকে। আমরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখছি শাবকগুলোকে। পার্কে এখন ১৩ টি বাঘ রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি নারী ও ৪টি পুরুষ বাঘ। 

বাঘের বাচ্চা দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা অ্যানিমেল কিপার নরুন্নবী মিন্টু বলেন, আগে ডুলাহাজরা সাফারি পার্কে চাকরি করতাম। পরে এখানে আমাকে এই পার্কে আনা হয়েছে। এর মধ্যে আমার দেখভালের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার সিংহ বাঘ বাচ্চা দিয়েছে। তবে বাঘের বাচ্চা দেওয়ার ঘটনায় নিজের মধ্যে অন্যরকম সুখ অনুভব করছি। এ ঘটনায় পার্কেও অন্যরকম আনন্দ বিরাজ করছে।  

ওয়াইল্ড লাইফ সুপার ভাইজার সারোয়ার হোসেন খান বলেন, ওই বাঘিনী গর্ভবতী হয়েছে নিশ্চিত হয়েই নিরাপদ পরিবেশ দিতে আলাদা বেষ্টনীতে স্থানান্তর করি। সাধারণত পুরুষ বাঘ ৪-৫ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয় আর ৩-৪ বছরে নারী বাঘ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। প্রসবের সময় বাচ্চার চোখ ফোটেনা ও দাঁত থাকে না। দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চার চোখ ফোটে । ৮-৯ সপ্তাহের মধ্যে স্থায়ী দাঁত গজায়। বাঘ বছরের যে কোনো সময়ই বাচ্চা দিতে পারে। তবে নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পযর্ন্ত বাঘের প্রকৃত প্রজণনকালীন সময়। দুই মাস বয়স থেকেই মাংস খাওয়ার আগ্রহ তৈরি হয় বাঘ শাবকের।  জন্ম থেকে ৬ মাস পযর্ন্ত বাঘ শাবক মায়ের দুধ পান করে থাকে। ৩ বছর হলেই মায়ের সঙ্গ ছেড়ে আলাদা হয়ে একা একা চলাফেরা করতে থাকে শাবক।

প্রকৃতিতে বাঘ ১০ বছর আর আবদ্ধ অবস্থায় ২৬ বছর পযর্ন্ত বাঘের বাঁচার রেকর্ড রয়েছে। বাঘিনী বাচ্চা নিয়ে আড়াই বছর একত্রে থাকে, তবে যদি বাচ্চা না থাকে সে ক্ষেত্রে পাঁচ মাস পরেই আবার ব্রিডিং করে বাঘিনী।

ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গর্ভকালীন সময় মা বাঘিনী নির্জনে চলে যায় অন্য বাঘগুলো থেকে আলাদা হয়ে। তিন মাস পর্যন্ত বাচ্চার ঝুঁকিপূর্ণ সময়। তবে এখানো শাবকগুলো সুস্থ্য সবল রয়েছে।

প্রাণী বিষেশজ্ঞ ড. তপন কুমার দে বলেন, সাফারি পার্কে বাঘ শাবকের জন্ম আমাদের প্রাপ্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে আবারো বেশি পরিমাণে বাঘ অবাধে বিচরণ করবে এমন স্বপ্ন দেখছি।

সাফারি পার্কে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সদ্য মা হওয়া বাঘিনীর ভাল পরিবেশ নিশ্চিত করতে আলাদা বেষ্টনীতে রেখেছিলাম। এমন সাফল্য আমাদের সবাইকে আরো দায়িত্বশীল করে তুলবে। পার্কের সকলের প্রচেষ্টায় এ সাফল্য। এমন সাফল্যের ধারাবাহিকতা আবারো বনে অবাধে ফিরবে বেঙ্গল টাইগার। আশা করি বাঘ সংরক্ষণে বড় ভুমিকা রাখবে এ সাফারি পার্ক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads