• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
নদীভাঙনে সর্বস্বহারা মানুষের পাশে সরকার

নদীভাঙনে সর্বস্বহারা মানুষের পাশে সরকার

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

রয়টার্সের প্রতিবেদন

নদীভাঙনে সর্বস্বহারা মানুষের পাশে সরকার

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

হাতিয়া দ্বীপে নদীভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে অনেক পরিবারই পথে বসে। তেমনই সর্বস্বহারা এক পরিবার ছিল ফেরদৌসি আক্তারের। এক বছর আগেও দিশাহারা ছিলেন হাতিয়ার এই বাসিন্দা। ভিটেমাটি ছেড়ে দ্বীপের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঠাঁই খুঁজতে এসেছিলেন তিনি। দিনমজুর স্বামীর আয়ে কোনোভাবেই সংসার চলছিল না তার। পাঁচ সদস্যের এই পরিবারকে ১০ বছরের জন্য জমি ও পুকুর ইজারা দেয় সরকার। সেখানেই মাছ চাষ করে দিন ফিরতে শুরু করে তাদের।

৩৭১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের হাতিয়া দ্বীপের নদীভাঙনে সর্বস্ব হারা ৪৫টি পরিবার এখন ফেরদৌসির মতো সরকারের দেওয়া ইজারার সুফল ভোগ করছে। দরিদ্র ও ভিটাহীন মানুষগুলো বিনা ভাড়ায় ১০ বছরের জন্য জমি পেয়ে বেশ খুশি। তাদের সঙ্গে কথা বলে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

নদীভাঙনের কারণে বহু এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম ভাসিয়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে উপকূলের অধিকাংশ দ্বীপ-চর এখনও বেড়িবাঁধের আওতায় আসেনি। এইসব এলাকার লাখ লাখ মানুষ বছরের পর বছর অরক্ষিত থাকছে। ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৯টি জেলাকে উপকূলীয় জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ফেরদৌসি বলেন, ‘আমি সরকারের কাছ থেকে ১০ বছরের জন্য একটি পুকুর ও জমি পেয়েছি। এখন সেখানে মাছ চাষ করে রোজগার করছি আমরা।’ ইতোমেধ্যে ১০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছেন ফেরদৌসি। আগামী কয়েকমাসের মধ্যে এক লাখ টাকার মাছ বিক্রি করবেন বলে আশা তার।

দুই বছর আগে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প ও বাংলাদেশ সরকার এই উদ্যোগ নেয়। বন বিভাগ ভিটাহীনদের মাঝে জমি বণ্টন করছে। এখন পর্যন্ত হাতিয়ার ২২ একর জমি ৪৫টি পরিবারে বণ্টন করা হয়েছে। এর মধ্যে কেউ পুকুরে মাছ চাষ করছেন আর কেউ জমিতে ফল উৎপাদন করছেন। পরিবারগুলোকে সবজি চাষ ও হাঁস পালনের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে যেন তারা উপার্জন করতে পারে।

ইউএনডিপি কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, এই প্রকল্পের চাপ দিন দিন বাড়ছে। হাতিয়ায় মোট পাঁচ লাখ মানুষের বসবাস। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, তারা আরও ২০ হেক্টর জমি ও পুকুর ১০০টি পরিবারের মাঝে বিতরণ করতে চায়। বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ইসলাম তৌহিদুল বলেন, দ্বীপে এখনও অনেক জমি পড়ে আছে। কিন্ত জমিগুলো স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনীতিবিদরা দখল করে নিতে পারেন বলে শঙ্কা তার। তিনি বলেন, ইজারার সময়সীমা দশ বছর থেকে বাড়ানো হতে পারে।

হাতিয়ার এই বাস্তুচ্যুতি যেন খুবই স্বাভাবিক। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় সেখানে নদভাঙনও বেড়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, গত দুই বছরে নদীভাঙন কয়েকশ একর জমি, বাড়ি, বাজার, মসজিদ, স্কুল, রাস্তাঘাট ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র তলিয়ে গেছে। এখনও এই দুর্যোগ চলছে। ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক জানায়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির বর্তমান হারে ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের দুই তৃতীয়াংশ জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

২০১৮ সালের আন্তর্জাতিক খাদ্য নীতি গবেষণা সংস্থা ও ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয়, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১ লাখ ৪০ হাজার উপকূলবাসী এলাকা ছাড়ছেন। কারণ মাটির লবণাক্তা বেড়ে যাওয়া তারা আর ফসলও ফলাতে পারছেন না। আর জেলা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন আরও ৬০ হাজার মানুষ। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, হাতিয়ার চারগঙ্গা সেটশনের প্রতিবছর ৫ দশমিক ৭ মিলিমিটার পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। আর সুন্দরবনের হীরণপয়েন্টে বাড়ে ৩ দশমিক ৪৪ মিলিমিটার।

উপকূলীয় মানুষজন এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন। কারণ প্রতিবছরই তাদের এর মুখোমুখি হতে হচ্ছে। হাতিয়ার জেলে দেওয়ান হোসেন বলেন, আগে শুধু ঘূর্ণি ঝড়ের সময় তীরে সমুদ্রের পানি আসত। আর এখন প্রতিদিনই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads