• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
ভারত ও সৌদি আরব থেকে আসছে রোহিঙ্গা

ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছেন রোহিঙ্গারা

ফাইল ফটো

জাতীয়

ভারত ও সৌদি আরব থেকে আসছে রোহিঙ্গা

  • আহমদ আতিক
  • প্রকাশিত ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই সমস্যা সমাধানে দফায় দফায় আলোচনা চলছে। এই আলোচনার মধ্যেও রোহিঙ্গাদের আসা বন্ধ নেই। প্রতিবেশী বন্ধু দেশ ভারত থেকেই গত দেড় মাসে ১৩শ’ রোহিঙ্গা শরণার্থী এ দেশের এসেছে। সুযোগ বুঝে সৌদি আরবও সেখানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে শুরু করেছে। তবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ এখনো আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জানা গেছে, ভারত থেকে জোর করে আবার মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়ার কারণে ভয়ে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এখন বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ পরিবারের এক হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে এসেছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইকবাল হোসেন বলেন, ভারত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা এ রকম ৪৮ জন রোহিঙ্গাকে কুমিল্লা জেলা পুলিশ তাদের হেফাজতে নেয়। গত ৩ জানুয়ারি এদের কক্সবাজার জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে উখিয়া থানা পুলিশের মাধ্যমে এদের ঘুমধুম বালুখালী ইউএনএইচসিআর’র ট্রানজিট ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়। এদের মধ্যে ১০ জন নারী, ১১ জন পুরুষ এবং ২৭ জন শিশু রয়েছেন।

উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-৪-এর হেডমাঝি আবদুর রহিম জানান, ভারতে থাকা-খাওয়ার খুব সমস্যা। দিনমজুরি বা অন্যান্য কাজ করে যা পাওয়া যায়, তা দিয়ে সংসার চলে না। তা ছাড়া ওখান থেকে জোর করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সে কারণে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে চলে আসছেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বলছেন, মিয়ানমারে তাড়িয়ে দেওয়ার ভয়ে ভারত থেকে আরো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে। বিশেষ করে মুসলিম অধ্যুষিত জম্মুু-কাশ্মীর, হায়দরাবাদ ও নয়াদিল্লিতে ধরপাকড়ের মাত্রা ব্যাপক। মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ভয়ে তারা সীমান্তের বিভিন্ন পথ দিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে। তিনি বলেন, মাস দেড়েকের মধ্যে ভারত থেকে আসা ১৩ শতাধিক রোহিঙ্গাকে জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থার কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং শরণার্থী শিবির সংলগ্ন ট্রানজিট ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের কুমিল্লা, বেনাপোল, সাতক্ষীরা ও কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে তারা বাংলাদেশে আসছে। আরো অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে আসার জন্য অপেক্ষা করছে। ভারত থেকে আসাদের জন্য নতুন জায়গা খোঁজা হচ্ছে। বিয়ষটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ভারতে আশ্রয় নেওয়া ৪০ হাজার রোহিঙ্গার অনেককে দুই দফায় স্বদেশে ফেরত পাঠায় ভারত সরকার। এ নিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে রয়েছে দিল্লি। জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়ে আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করছে ভারত।

এদিকে বাংলাদেশে না পাঠানোর জন্য সৌদি আরবের একটি কারাগারে রোহিঙ্গা বন্দিরা অনশন শুরু করেছেন বলে মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। বন্দিদের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, গত মাসে জেদ্দায় অবস্থিত সুমাইছি কারাগার থেকে বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয় সৌদি আরব। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া ঠেকাতে অনশন করছেন রোহিঙ্গারা। এসব বন্দি তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপও চেয়েছেন। সৌদি আরবে গত গত চার মাসের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার রোহিঙ্গা বন্দিরা অনশন করছেন।

কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে শীতকালীন রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবদুল মতিন জানান, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে জলবসন্তসহ (চিকেন পক্স) শীতকালীন রোগের প্রকোপ দেখা গিয়েছে। সাধারণত সাত দিন পর এ রোগ ভালো হয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে,  এ রোগ প্রতিরোধে যে টিকা রয়েছে, তা আমাদের দেশে নেই।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এই ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যাম্পের ৮৩২ জন জলবসন্তে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৫১ শতাংশ উখিয়ার এবং ৪৯ শতাংশ টেকনাফের। এ ছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে ৩৯ শতাংশের বয়স পাঁচ বছরের কম। এ জন্য সংস্থাটি নজরদারি বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোল্টজ গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে বলেন, জার্মান সরকার সব সময় বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের সহায়তার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সহায়তার কথাও ভাবছে জার্মানি। কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের সহায়তা করা যায়, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেতনো মারসুদি গত বুধবার বাংলাদেশের নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনকে অভিনন্দন জানানোর জন্য ফোন করলে রোহিঙ্গা সঙ্কটের দ্রুত সমাধানের জন্য দেশটির কাছ থেকে অব্যাহত সমর্থন চান আবদুল মোমেন।

গত সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সঙ্গে আলাপকালে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্র্রদায়কে আরো সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ সঙ্কটকে ঘিরে যাতে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি না হয়, সে সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক ও দায়িত্বশীল হতে হবে। তিনি বলেন, সরকারের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে দীর্ঘদিনের এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের বিষয়টি বিবেচনায় থাকবে। তবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান খুব সহজে হবে না। এর জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে দায়দায়িত্ব ছিল, সেটা তারা পালন করেনি। এ সমস্যা জিইয়ে থাকলে ভারত, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার কেউ লাভবান হবে না। চীনের স্বার্থও বিঘ্নিত হবে। বিভিন্ন পক্ষ এতে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করবে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থি রাখাইনদের নির্মম নির্যাতনের মুখে রাখাইন থেকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্টের পর ওই রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে পালিয়ে আসাসহ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১১ লাখের বেশি।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads