• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
নতুন সরকারের একনেকের প্রথম বৈঠক আজ

নতুন সরকারের একনেকের প্রথম বৈঠক আজ

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

নতুন সরকারের একনেকের প্রথম বৈঠক আজ

উঠছে ১ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকার আট প্রকল্প

  • জাহিদুল ইসলাম ও নাজমুল হোসাইন
  • প্রকাশিত ২২ জানুয়ারি ২০১৯

প্রায় আড়াই মাসের ব্যবধানে আজ আবার বসছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক। সর্বশেষ গত বছরের ৭ নভেম্বর একনেকের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে লম্বা বিরতির পর নতুন সরকারের প্রথম বৈঠকে মোট ৯টি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে। অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা আট প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৯৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। প্রকল্প ব্যয়ের পুরো অর্থ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করা হবে। চলমান একটি প্রকল্প বাতিল করতে উঠবে পৃথক একটি প্রস্তাব। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গত বুধবার ১৫ সদস্যের একনেক কমিটি পুনর্গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে চেয়াপারসনের দায়িত্বে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকল্প চেয়ারপারসন হিসেবে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সভা শেষে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত সংবাদ মাধ্যমে তুল ধরবেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মন্নান।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আজ একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা আট প্রকল্পের মধ্যে ছয়টিই অবকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত। ভৌত অবকাঠামো বিভাগের আওতাধীন যাত্রাবাড়ী (মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার)-ডেমরা (সুলতানা কামাল সেতু) মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ শীর্ষক প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ করবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, যাত্রাবাড়ী-ডেমরা-শিমরাইল-নারায়ণগঞ্জ সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক। সড়কটি দুটি প্রধান জাতীয় মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেটকে সংযুক্ত করেছে। প্রস্তাবিত সড়কটি এরই মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মূল অংশের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কাঁচপুর সেতু ও পোল্ডার সড়ক নির্মাণের ফলে এই সড়কে যান চলাচল বেড়ে যায়।

ভৌত অবকাঠামো বিভাগের আওতাধীন নেত্রকোনা জেলার চল্লিশা (বাগড়া)-কুনিয়া-মেদনী-রাজুরবাজার সংযোগ মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়কে বিদ্যমান ৯টি সরু ও জরাজীর্ণ সেতুর স্থলে ৯টি আরসিসি/পিসি গার্ডার সেতু নির্মানে উঠছে পৃথক প্রকল্প।

আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের বিদ্যমান ৭টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের উন্নয়ন ও নতুন ৬টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৫৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের জাদুঘর ভবন সম্প্রসারণ ও অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। 

শিল্প ও শক্তি বিভাগের আওতায় গোপালগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী উঠছে একনেকে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতায় ও দারিদ্র্যবিমোচনের লক্ষ্যে পুষ্টিসমৃদ্ধ উচ্চমূল্যের অপ্রধান শস্য উৎপাদন এবং অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প উঠছে একনেকে। এর বাইরে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণে চলমান একটি প্রকল্প বাতিল করার প্রস্তাব উঠবে একনেকে। এর বিকল্প হিসেবে অন্য এক প্রকল্পের আওতায় মুক্তিযোদ্ধাদের ভিটায় ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে ৫ বছরে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল একনেক বৈঠক। তবে নির্বাচনের আগে প্রকল্পের চাপে ঘন ঘন বিশেষ একনেক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ গত ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় একনেক বৈঠক। এ ছাড়া ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ একনেক বৈঠক।

নতুন মেয়াদে সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৬ জানুয়ারি ১৫ সদস্যের একনেক পুনর্গঠন করে গেজেট জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ছাড়াও কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী।

একই সঙ্গে সহায়তাদানকারী কর্মকর্তা হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব, অর্থসচিব, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের সকল সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগের সচিবরা একনেক সভায় উপস্থিত থাকবেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, অবকাঠামোর  উন্নয়নে এতদিন বিদ্যুৎ খাত বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে আসছে। এখন গুরুত্ব দেওয়া হবে সড়কে। নতুন সড়ক নির্মাণের চেয়ে বিদ্যমান সড়ক সংস্কার, প্রশস্তকরণ, উন্নয়ন, চার লেনে উন্নীতকরণ ইত্যাদি কার্যক্রমে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, নির্বাচনের আগে সর্বশেষ একনেক বৈঠকে উপস্থাপনের কথা থাকলেও অনুমোদন না পাওয়া প্রকল্প নতুন সরকারের প্রথম বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা আগেই হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads