• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মুক্ত এলাকাগুলোতে ভিক্ষুকের আখড়া

মুক্ত এলাকাগুলোতে ভিক্ষুকের আখড়া

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

মুক্ত এলাকাগুলোতে ভিক্ষুকের আখড়া

  • রানা হানিফ
  • প্রকাশিত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়ে সাইন বোর্ডে ফলাও করে লেখা ‘ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা’। অথচ ট্রাফিক সিগন্যালে যানবাহন আটকা পড়া মাত্রই চারদিক থেকে ছুটে আসে ভিক্ষুকরা। আর হোটেল রূপসী বাংলার মোড় থেকে কাকরাইল মসজিদ পর্যন্ত মিন্টো রোড ও মন্ত্রিপাড়ার আশপাশের এলাকাগুলোকেও ঘোষণা করা হয়েছে একই রূপ ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা হিসেবে। তবে দিনের বেলা এই অঞ্চলেও রয়েছে ভিক্ষুকদের দৌরাত্ম্য আর রাত গভীর হলেই রমনা উদ্যানের গা ঘেঁষা ফুটপাথই হয় ভিক্ষুকদের রাত্রিযাপনের আশ্রয়স্থল।

ঢাকার ভিআইপি এলাকা খ্যাত এই দুটো অঞ্চলের মতো নতুনবাজার মোড় থেকে গুলশাল-২ গোলচত্বর পর্যন্ত কূটনৈতিক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ঘোষিত ভিক্ষুকমুক্ত এলাকা। তবে অভিজাত এই এলাকারটিও চিত্র ঢাকার অন্যান্য এলাকার মতোই।

বিজয় সরণি মোড়ে কথা হয় শিশু ভিক্ষুক ফয়সালের সঙ্গে। ১০-১২ বছর বয়সী ফয়সালের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। দুঃসম্পর্কের এক খালার মাধ্যমেই ঢাকা শহরে তার ভিক্ষাবৃত্তির হাতেখড়ি। গত দুই বছর ধরে ফার্মগেট, খেজুরবাগান এলাকা, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও বিজয় সরণিতে ভিক্ষা করছে ফয়সাল। এই এলাকাটিতে ভিক্ষা করা নিষিদ্ধ এমন কোনো কিছুই জানা নেই তার। মিন্টো রোডে ষাটোর্ধ্ব আবদুর রহিম মোল্লাও জানেন না ওই অঞ্চলে ভিক্ষা করা নিষেধ। ভিভিআইপি চলাচল ও বিশেষ বিশেষ দিন ব্যতীত এই অঞ্চলে ভিক্ষা করতে কেউই বাধা দেয় না তাদের। ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৩ সালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমতি নিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় রাজধানীর ভিভিআইপি এলাকা বিমানবন্দর, সেনারগাঁও হোটেল, হোটেল রূপসী বাংলা, হোটেল র্যাডিসন, বেইলি রোড, মিন্টো রোড, কূটনৈতিক জোন ও দূতাবাস এলাকায় ভিক্ষুকমুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সমাজসেবা অধিদফতরের নেতৃত্বে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংগঠনের (এনজিও) সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। অধিদফতর তাদের ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই নিয়মিত রাজধানীর নির্দিষ্ট এলাকাগুলোয় ভিক্ষুকমুক্তকরণ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে থাকে বলেও সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়।

করপোরেশন দুটো বলছে, রাজধানীর বিশেষ বিশেষ এলাকা ভিক্ষুকমুক্ত ও তাদের পুনর্বাসন চলমান একটি প্রক্রিয়া। রাজধানী ভিক্ষুকমুক্ত করা সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কোনো কার্যক্রম নয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সমাজসেবা অধিদফতর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভিক্ষুকমুক্তকরণ ও পুনর্বাসনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সিটি করপোরেশন এলাকায় করপোরেশন ছাড়া আরো বেশ কয়েকটি সংস্থা ও বেসরকারি সংগঠন এ কার্যক্রমে সহযোগিতা করে থাকে।

এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সমাজকল্যাণ মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, রাজধানীকে বিশেষ করে ভিআইপি ও ভিভিআইপি এলাকাগুলো ভিক্ষুকমুক্ত করা সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কোনো প্রকল্প না। এটা একটি সমন্বিত চলমান প্রক্রিয়া। কার্যক্রমটি মূলত সমাজসেবা অধিদতরের। আমরা শুধু সরকারের এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে থাকি। যে দিন অভিযান থাকে সেদিন অধিদফতর আমাদের অভিহিত করে। অভিযানের দিন আমাদের সমাজকল্যাণ বিভাগের কর্মকর্তারা ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থিত থাকেন। অভিযান শেষ হলে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কর্মকর্তা ওই এলাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি লাগিয়ে দেন।

তিনি বলেন, আমাদের আওতাভুক্ত কূটনৈতিক জোন, গুলশান, বনানী এলাকা, ভিভিআইপি ও ভিআইপি এলাকাগুলো নিয়মিত ভিক্ষুকমুক্ত অভিযান পরিচালিত হয়। এটা একটা নিয়মিত কার্যক্রম। বেশ কিছু মানবিক দিক বিবেচনা করেই আমাদের এসব অভিযান চালাতে হয়। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন না করে তাদের ওপর কঠোর হওয়া যায় না। তাই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভিক্ষুক পুনর্বাসন কার্যক্রমের অধীনেই এসব অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের কয়েক দিনের মধ্যে পুনরায় ভিক্ষুকদের দখলে চলে যায়। তবে কূটনৈতিক জোন ও এয়ারপোর্ট এলাকায় একটু কড়াকড়ি করা হয়। এসব এলাকায় পুলিশ নিয়মিত নজরদারি করে।

ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণার পর ওই সব এলাকা আবার ভিক্ষুকদের দখলে চলে যাওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সেটা আমরাও জানি, ভিক্ষুকমুক্ত করার কয়েক দিনের মধ্যেই ওই সব এলাকা পুনরায় ভিক্ষুকদের দখলে চলে যায়। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নেই। প্রথমত এটা আমাদের নিজস্ব কার্যক্রম না, দ্বিতীয়ত আমাদের লজিস্টিক কোনো বাহিনী নেই, যারা এসব এলাকায় নিয়মিত নজরদারি করবে। আসলে অভিযানে ডিএমপিও অংশ নেয়, তারা তো সব সময় মাঠেই থাকে। তাই আমাদের চেয়ে তাদের পক্ষেই এসব এলাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত রাখা সহজ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads