• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ই-পাসপোর্ট চলতি বছরেই

ই-পাসপোর্ট

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

ই-পাসপোর্ট চলতি বছরেই

  • রেজাউল করিম হীরা
  • প্রকাশিত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

চলতি বছরের জুন থেকে ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে শেষ হতে চলছে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি)। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এ পাসপোর্টের মেয়াদ হবে ১০ বছর। সাধারণ ২১ দিন, এক্সপ্রেস ১৫ দিন ও সুপার এক্সপ্রেস ২৪ ঘণ্টায় মিলবে এই পাসপোর্ট। এতে নিরাপত্তা চিহ্ন হিসেবে থাকছে চোখের মণির ছবি ও আঙুলের ছাপ। পাসপোর্টধারীর সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে এর পাতায় থাকা চিপে। তবে এর ফি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৬ সালে এমআরপির পাশাপাশি ই-পাসপোর্ট চালুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। একই সময় পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেদিন থেকে ই-পাসপোর্ট চালু হবে সেদিন থেকে এমআরপি পাসপোর্ট রিনিউ করতে গেলে ই-পাসপোর্ট করতে হবে। গত জুলাই মাসে অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান জার্মানির ভেরিডোসের সঙ্গে ই-পাসপোর্টের চুক্তি করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু করার কথা ছিল। পরে চলতি বছরের মার্চ মাসে ই-পাসপোর্ট সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় বিলম্ব হয়।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব (বহিরাগমন-১) মো. মুনিম হাসান বলেন, রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুন মাসে ই-পাসপোর্ট দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করছি। জানতে চাইলে ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান বলেন, এখনো কাজ চলছে। যত শিগগিরই সম্ভব ই-পাসপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছি। কাজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত  সুনির্দিষ্ট তারিখ বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা এ বছরের জুন মাসকে টার্গেট করে কাজ করছি।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ই-পাসপোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে জার্মানির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। চুক্তি অনুযায়ী, পাসপোর্টের ইলেকট্রনিক চিপে দশ আঙুলের ছাপ থাকার কথা। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের পর মাত্র দুটি আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করতে চায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী জার্মান কোম্পানি। দুই আঙুলের ছাপে ভবিষ্যতে জালিয়াতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় এ প্রস্তাবে রাজি নয় পাসপোর্ট অধিদফতর। এ বিষয়ে কয়েক দফা বৈঠক ও চিঠি চালাচালিও হয়েছে। কিন্তু বিষয়টির কোনো সমাধান হয়নি। তবে ই-পাসপোর্ট নিয়ে কোনো জটিলতা থাকবে না বলে জানান প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান।

ই-পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর রাখার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও এখনো মন্ত্রণালয় থেকে ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন খান এ তথ্য জানান।

দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, অধিদফতর থেকে স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য তিন ধরনের ফি’র পরিমাণ প্রস্তাব করা হয়। ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের ফি নির্ধারণ কমিটির প্রস্তাবে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ৬ হাজার (২১ দিন), এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১২ হাজার (৭ দিন) এবং সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১৫ হাজার টাকা (১ দিন) প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পাসপোর্টের দুই ধরনের ক্যাটাগরি হচ্ছে। একটা ৪৮ পৃষ্ঠার। আরেকটা ৭২ পৃষ্ঠার। যারা বেশি নিতে চান তাদের ফিও একটু বেশি দিতে হবে।

অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এটি ৪ হাজার কোটি টাকার একটি বৃহৎ প্রকল্প। বর্তমান অর্থবছরের বাজেট হয়েছে জুনে। এর মাসখানেক পর ই-পাসপোর্ট প্রকল্প চুক্তি হয়। সরকার যেহেতু বাজেটে ই-পাসপোর্টের বরাদ্দ রাখেনি তাই এই কার্যক্রমে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।

পাসপোর্ট অধিদফতর জানায়, শুরুতে ২০ লাখ ই-পাসপোর্ট জার্মানি থেকে প্রিন্ট করিয়ে সরবরাহ করা হবে। এরপর আরো ২ কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বাংলাদেশে প্রিন্ট করা হবে। সেজন্য উত্তরায় কারখানা স্থাপন করা হবে। পরে ওই কারখানা থেকেই পাসপোর্ট ছাপানো অব্যাহত রাখা হবে।

অত্যাধুনিক এই ই-পাসপোর্ট একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি এমবেডেড ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ থাকবে। এই মাইক্রোপ্রসেসর চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙুলগুলোর ছাপ ও চোখের মণি) তথ্য সংরক্ষণ করা হবে, যাতে পাসপোর্টধারীর পরিচয়ের সত্যতা থাকে। ই-পাসপোর্ট চালু হলে জালিয়াতি ও পরিচয় গোপন করা কঠিন হবে বলে দাবি করেছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর।

ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বাতিল হবে কি-না এমন শঙ্কাও আছে অনেকের। তবে কারো পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তাকে এমআরপির বদলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে। যাদের এমআরপি রয়েছে সেটিও গ্রহণযোগ্য হবে। ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। বর্তমানে এমআরপি ডাটাবেজে যেসব তথ্য আছে, তা ই-পাসপোর্টে স্থানান্তর করা হবে বলে অধিদফতর জানায়।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। পুরো টাকাই বাংলাদেশ সরকার বহন করবে। বর্তমানে বই আকারের পাসপোর্টে সরকারের যে টাকা ব্যয় হয়, সেই অনুপাতে ই-পাসপোর্ট চালু হলে পাসপোর্টপ্রতি সরকারের প্রায় ৩ ডলার করে সাশ্রয় হবে বলে ধারণা করছেন তারা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads