• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ডাস্টবিনে ৩১ মানব ভ্রূণ

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

ডাস্টবিনে ৩১ মানব ভ্রূণ

  • বরিশাল ব্যুরো
  • প্রকাশিত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ময়লার ডাস্টবিন থেকে অন্তত ৩১টি মানব ভ্রূণ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার রাত ৯টার দিকে হাসপাতালের পানির ট্যাংক সংলগ্ন ডাস্টবিন থেকে এসব মানব ভ্রূণ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত এসব মানব ভ্রূণের অধিকাংশ অপরিণত।

সোমবার রাতে শেবাচিম হাসপাতালের ময়লার ডাস্টবিনে এসব মানব ভ্রূণ দেখতে পান পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। পরে পুলিশকে বিষয়টি জানান তারা। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল মোদাচ্ছের আলী কবির বলেন, রাতে হাসপাতালের পশ্চিম পাশে কেন্দ্রীয় পানির ট্যাংক সংলগ্ন ডাস্টবিনের ময়লা অপসারণ করছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। এ সময় ময়লার ভেতরে বালতি ভরা অপরিণত শিশুর মরদেহগুলো দেখতে পান তারা। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি বলেন, ওখানে ৩১টি অপরিণত মানব ভ্রূণ রয়েছে। এ সংখ্যা বেশিও হতে পারে।

মোদাচ্ছের কবির বলেন, অনেক মায়ের অপরিণত বাচ্চা জন্মায়, যা অনেক সময় পরিবারের লোকেরা নিয়ে যায়। আবার অনেকে ফেলে যায়। রেখে যাওয়া মানব ভ্রূণ দিয়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস নেওয়া হয়। পরে তা কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মাটি চাপা দেওয়া হয়। কিন্তু মানব ভ্রূণগুলো মাটিচাপা না দিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হলো কেন সে বিষয়টি আমার জানা নেই।

কোতোয়ালি থানার ওসি নুরুল ইসলাম বলেন, ৩১টি মানব ভ্রূণ উদ্ধার করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা   নেয়া হবে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মী রিয়াজুল ইসলাম জানান, ময়লা পরিষ্কার করতে এসে এখানে অনেক মানব ভ্রূণ পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিষয়টি হাসপাতালের লোকজনকে জানালে তারা এখানে এসে মাটি খুঁড়ে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।

হাসপাতালে প্রত্যক্ষদর্শী খান আব্বাস জানান, সোমবার রাত ৮টায় িসটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের লোকজন হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ময়লা অপসারণ করতে গেলে জরুরি বিভাগ-সংলগ্ন পানির ট্যাঙ্কের নিচ থেকে খোলা এবং বোতলজাত অবস্থায় অপরিপক্ব শিশু এবং মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখতে পায়। এ ঘটনা জানাজানি হলে পুরো হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। শত শত মানুষ সেখানে ভিড় করেন। অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী জহিরুল ইসলাম জানান, কিছু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ড্রেন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অধিকাংশই পাওয়া গেছে পানির ট্যাঙ্কের নিচে ডাস্টবিনে।

হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালের গাইনি বিভাগে অনেক মা অপরিণত (ইমম্যাচিউরড) বাচ্চা প্রসব করেন। অনেক সময় পরিবারের লোকেরা এসব ভ্রূণ নিয়ে বাড়িতে যান। আবার অনেকে হাসপাতালে ফেলে যান। যেসব ভ্রূণ ফেলে যান, সেগুলো দিয়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস নেওয়া হয়। পরে তা কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মাটিচাপা দেওয়া হয়। রাত সোয়া ৯টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ভ্রূণগুলো ময়লা-আবর্জনার একপাশে রাখা হয়েছে। লোকজন সেখানে ভিড় করে এসব দেখছেন। ভ্রূণগুলোর অধিকাংশের হাত-পা-মাথা রয়েছে।

এ বিষয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম বাকির হোসেন বলেন, এই ভ্রূণগুলো ২৫-৩০ বছর আগের। হাসপাতালে অনেক নারীর অপরিণত বাচ্চা জন্মায়।  এগুলো শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ছিল। কলেজের গাইনি বিভাগের ল্যাবরেটরিতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু এবং মানবদেহের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংরক্ষিত থাকে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখানোর জন্য এগুলো ব্যবহার হয়। এগুলো আর গবেষণার উপযুক্ত না থাকায় তা ডাস্টবিনে ফেলা হয়েছে। যেটা উচিত নয়। এর দায়ভার আমিও এড়াতে পারি না। যেগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে সেগুলো নিয়ম অনুযায়ী মাটিতে পুঁতে ফেলতে হয়। কিন্তু গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. খুরশিদ জাহানের নির্দেশে ওই বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির নারী কর্মচারীরা অব্যবহূত শিশু ও মানবদেহের অঙ্গগুলো মাটিতে না পুঁতে ড্রেন ও ডাস্টবিনে ফেলেছে, যা মোটেই ঠিক হয়নি। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি ও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কেন তা ঘটল, তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতাল পরিচালক অবশ্য দাবি করেছেন, অপরিপক্ব শিশু ও মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সব বোতলজাত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads