• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইটি বাজার থেকে সরানোর নির্দেশ

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইটি বাজার থেকে সরানোর নির্দেশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

ইতিহাস ‘বিকৃতির’ কারণে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইটির সব কপি বাজার থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বইটির সম্পাদক শুভঙ্কর সাহাকে তলব করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আগামী ১২ মার্চ স্বশরীরে হাজির হয়ে বইটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি কেন স্থান পায়নি এবং বইটিতে কেন ইতিহাস বিকৃতির ঘটনা ঘটেছে সে ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন, শুভঙ্কর সাহার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জুবায়ের রহমান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার।

পরে ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন জানান, বইটি বাজার থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বইটি যেন বইমেলাসহ কোথাও না পাওয়া যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ বিবাদীদেরকে সে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া বইটির সম্পাদনা পরিষদের সম্পাদক শুভঙ্কর সাহাকে তলব করা হয়েছে।

এর আগে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন মঙ্গলবার আদালতের কাছে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের নামকরণ করেছিলেন। ১৯৭২ সালের ১২৭ নং রাষ্ট্রপতির আদেশ দ্বারা এই ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হয়। অথচ ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ গ্রন্থে স্থান পায়নি তার (জাতির পিতা) ছবি। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে জাতির পিতার ছবি ওই বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল।

গ্রন্থটিতে বঙ্গবন্ধুর ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে বলে মনে করেছে তদন্ত কমিটি।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সম্পাদনা কমিটি বলেছে গ্রন্থটিতে তদানীন্তন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি না ছাপানোই শ্রেয় ছিল। এ দু’জনের ছবি ছাপানোও ছিল সকলের ভুল বলে বইটির সম্পাদক শুভঙ্কর সাহা স্বীকার করেন। তবে বইটিতে আইয়ুব খানের দমন পীড়নের কথা রয়েছে। কিন্তু গ্রন্থটিতে তার একাধিক ছবি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পরস্পরবিরোধী।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্পাদনা কমিটি বলেছে- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট জাতির পিতার ছবি খুঁজেছেন। কিন্তু এ সংক্রান্ত দল বঙ্গবন্ধুর ছবি সংগ্রহ করতে পারেনি। এ কারণে ছবি ছাপানো যায়নি। কিন্তু গ্রন্থটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ ব্যাংক’ এর ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। এজন্য স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট অথবা বঙ্গবন্ধুর অন্য যে কোন ছবি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা যেতো।

এদিকে প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর শুভঙ্কর সাহার আইনজীবী ভুল হয়ে গেছে উল্লেখ করে আদালতের কাছে মৌখিকভাবে ক্ষমা চান।

এ সময় আদালত বলেন, ‘ক্ষমা চাইলেই হবে না। জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে দেখান। এটা আমরা শেষ পর্যন্ত দেখবো। পরে শুভঙ্কর সাহাকে তলব করে ওই আদেশ দেন।’

২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইটি প্রকাশিত হয়। বইতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং ইস্ট পাকিস্তনের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এ অবস্থায় বইতে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি না থাকায় এবং ৭ই মার্চের ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ইতিহাস বিকৃতি করায় বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ইকতেদার আহমেদ গত বছরের ২ অক্টোবর রিট আবেদনটি দায়ের করেন।

পরে ওই দিনই শুনানি নিয়ে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি রুল জারি করেন। রুলে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি না থাকা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। অর্থ সচিবসহ ছয়জন বিবাদীকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads