• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
বাংলা প্রচলনে শিথিলতা ও ভাষানীতি

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

বাংলা প্রচলনে শিথিলতা ও ভাষানীতি

  • গোলাম কিবরিয়া পিনু
  • প্রকাশিত ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বাংলাদেশের সংবিধানে বাংলা ভাষার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার দিকনির্দেশনা থাকলেও চার দশক পার হওয়ার পরও বাংলা দাফতরিকসহ রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে আবশ্যিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার  হচ্ছে না! এই সময়ে এসেও দেখা যায় সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, নামফলক, দেয়াল লিখন হচ্ছে ইংরেজিতে; সরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন বিলের ভাষা বাংলা নয়, ইংরেজিতে। গণমাধ্যমের বিভিন্ন পর্যায়েও বাংলা ভাষার করুণ পরিস্থিতি। ঘরে ও বাইরে অন্ধকার ঘনীভূত হচ্ছে— বাংলা ভাষার আলোটুকু গ্রাস করার জন্য। যা ইচ্ছে তা-ই ভেবে যুক্তিহীনভাবে এক ধরনের হীনমন্যতার বশে যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানেও ইংরেজি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। টিভি ও পত্রপত্রিকায় ইংরেজি বিজ্ঞাপনের জয়জয়কার! ঢাকা নগরের অনেক দোকানপাট, প্রতিষ্ঠানের নাম শুধুই ইংরেজিতে লেখা হচ্ছে!

ভাষা আন্দোলনের অন্যতম দাবি ছিল—সরকারের প্রশাসনিক কাজকর্মে বাংলা ভাষা মর্যাদার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। এই দাবি দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় কখনো কখনো জোরালো হয়েছিল, তা আজ যেন অমাবশ্যার অন্ধকারে অন্তর্ঘাতমূলক অবস্থায় পতিত হয়েছে, যার ফলে সরকারি পর্যায়ে বাংলাভাষা ব্যবহারের শিথিলতা এখন আগের চেয়ে আরো বেড়েছে!

অথচ ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির এক সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃপ্ত উচ্চারণে ঘোষণা দিয়েছিলেন— ‘ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আমি ঘোষণা করছি, আমার দল ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই সকল সরকারি অফিস-আদালত ও জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলা চালু করবে। এ ব্যাপারে আমরা পরিভাষা সৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করব না। কারণ তাহলে কোনোদিনই বাংলা চালু করা সম্ভবপর হবে না। এই অবস্থায় হয়তো কিছু কিছু ভুল হবে, তাতে কিছু যায় আসে না। এভাবেই অগ্রসর হতে হবে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আকবর আলি খানের ভাষ্যানুযায়ী বঙ্গবন্ধু যেদিন দফতরে বসেছিলেন, সেদিনই ইংরেজিতে লেখা একটি নথি নিয়ে তাকে যেতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর কাছে। ইংরেজিতে লেখা নথি দেখে বঙ্গবন্ধু উষ্মা প্রকাশ করে প্রশ্ন করেছিলেন, এই স্বাধীন দেশেও কি তাকে ইংরেজিতে লিখিত নথি দেখতে হবে। অতঃপর তিনি তাকে এই মর্মে একটি প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশ দিয়েছিলেন যে এখন থেকে সকল নথি বাংলায় লিখিত হতে হবে।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে গিয়ে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে গ্রহণ করার জন্য বলেছেন অথচ তার সরকারের দাফতরিক ভাষা হিসেবে বাংলা এখন কতটুকু গুরুত্ব পাচ্ছে, তা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। শুধু দাফতরিক কাজে নয়, আইন-আদালতসহ প্রায় সর্বস্তরে আজ বাংলা ভাষার ব্যবহার কমছে, ইংরেজির ব্যবহার বাড়ছে। আমরা ভাষা আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গৌরবে নিজেদের অহং প্রকাশে আনুষ্ঠানিকভাবে তৎপর হলেও বাংলা ভাষার বিকাশে তৎপর কতটুকু, তা বিবেচনায় টেনে আনা উচিত। ভাষা ব্যবহারের জন্য হঠাৎ হঠাৎ করা কিছু পদক্ষেপ ও ঘোষণা এসেছে কিন্তু একটি জাতীয় ভাষানীতি আমরা ভাষা আন্দোলনের ৬২ বছর পার হওয়ার পরও প্রণয়ন করতে পারিনি! এর ফলে বাংলা ভাষা নিয়ে বেদনা-বিহ্বল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অরাজক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

শহীদ দিবসে কি শুধু গতানুগতিক এক আনুষ্ঠানিকতায় আমরা ফুল দিতে যাব? বাংলা প্রচলনের শিথিলতা ও সরকারি পর্যায়ে বাংলা ভাষা প্রচলনে গাফিলতির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে স্লোগানমুখর মিছিলের সৃষ্টি করব? সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ৎ

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads