• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
মর্গে মর্গে আহাজারি

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের লাশ নিয়ে যাচ্ছেন স্বজনরা।

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

মর্গে মর্গে আহাজারি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্বজনরা হাসপাতালের মর্গে মর্গে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এদের কেউ হারানো স্বজনদের মরদেহ খুঁজে পাচ্ছেন। অনেকের স্বজনরাই জানেন না তাদের প্রিয়জনের মরদেহ কোথায় আছে। স্বজনদের  খোঁজে চলছে আহাজারি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাদের খোঁজে অনেক স্বজনই ভিড় করেছেন মর্গের সামনে। কেউ কেউ ঢাকা মেডিকেলে লাশ না পেয়ে ছুটে গেছেন অন্য হাসপাতালের মর্গে। এভাবে মর্গ থেকে মর্গে প্রিয়জনের মরদেহ খুঁজছেন তারা।

চকবাজার ট্র্যাজেডিতে নিহতদের মধ্যে ২১টি মরদেহ ঢাকার ৫টি হাসপাতালে রাখা আছে। এর মধ্যে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪টি, হূদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ৫টি, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩টি এবং সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে ৪টি লাশ। তবে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরো একটি লাশের খণ্ডিত অংশ রয়েছে। ঢামেকের মর্গের সামনে স্থাপিত ঢাকা জেলা প্রশাসনের তথ্যকেন্দ্র থেকে গতকাল বিকালে এ তথ্য জানানো হয়।

মরদেহগুলোর মধ্যে ঢামেকের মর্গে রাখা ৪টি লাশের চেহারা শনাক্তযোগ্য বলে জানানো হয়েছে তথ্যকেন্দ্র থেকে। স্বজনরা এখান থেকে তাদের লাশ শনাক্ত করতে পারবেন। তবে অন্য লাশগুলো ডিএনএ টেস্ট ছাড়া শনাক্ত করার কোনো উপায় নেই।

গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে স্বজনদের খোঁজে ভিড় করেছেন অনেকে। ওই অগ্নিকাণ্ডে যারা নিখোঁজ রয়েছেন, তারা বেঁচে আছেন নাকি পুড়ে ছাই হয়ে গেছেন তাও জানেন না তারা। বেলা ১১টার দিকে লাশের সন্ধানে আসা স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষা শুরু হয় ঢামেকে। এক্ষেত্রে যাদের সঙ্গে ডিএনএ মিলে যাবে তারাই স্বজনদের মৃতদেহ ফিরে পাবেন।

সিআইডির সহকারী ডিএনএ অ্যানালিস্ট নুসরাত ইয়াসমিন সাংবাদিকদের বলেন, ১৫ মরদেহের জন্য ২০ স্বজনের কাছ থেকে ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। একটি মরদেহের জন্য তার আপন দুই ভাই থেকে ও আরেকটি মরদেহের জন্য তার আপন তিন ভাইয়ের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। লাশের সন্ধানে স্বজনদের রক্তের নমুনা রাখা হচ্ছে। ১৩ মরদেহের জন্য ১৩ জন স্বজন থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। শনাক্ত না হওয়া মরদেহের সংখ্যা ২১ জন বলে জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, অনেকের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার ভাইবোন এসেছেন। কিন্তু আসা প্রয়োজন মৃত ব্যক্তির বাবা-মা। যদি বাবা-মা না থাকেন তাহলে সন্তান। যদি এসবের কোনোটিই না পাওয়া যায়, তাহলে ভাইবোন আসতে পারেন। ডিএনএ পরীক্ষা শেষ করতে কেমন সময় লাগতে পারে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না, পরীক্ষাটি অত্যন্ত জটিল এবং সময় সাপেক্ষ। বিশেষ করে মরদেহগুলো পোড়া হওয়ায় নমুনা সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আমরা অত্যন্ত দ্রুত এই কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করি। সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৬ মাস সময় লাগতেও পারে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৪৫ জনের লাশ শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা মসজিদের পাশে একটি পাঁচতলা ভবনে আগুন লাগে। পরে আগুন আশপাশের আরো তিনটি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট প্রায় ১২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। এই অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় এবং প্রায় অর্ধশতজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads