• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
সময় বাড়ল দুই দিন

বইমেলায় পছন্দের বই কিনছেন ক্রেতারা

ছবি : বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

প্রতিদিনের বই মেলা

সময় বাড়ল দুই দিন

  • সোহেল অটল
  • প্রকাশিত ০১ মার্চ ২০১৯

বৈরী আবহাওয়ার কারণে ক্রেতা সঙ্কটে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ বই বিক্রি না হওয়ায় প্রকাশকদের দাবির মুখে অমর একুশে গ্রন্থমেলার সময় আরো দুদিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

অতীতের নিয়ম অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবারই শেষ হওয়ার কথা ছিল বাঙালির এ মিলনমেলা। এদিন সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির মূল মঞ্চে আয়োজিত মেলার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ সময় আরো দুদিন বাড়ানোর ঘোষণা দেন।

ফাল্গুনের মাঝামাঝি বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের কারণে ঝড়ো হাওয়া-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হন মেলায় অংশ নেওয়া প্রকাশকরা। ফলে তারা মেলার সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন সরকারের কাছে। তবে বুধবারও তা নাকচ করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক।

এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী খালিদ বলেন, ‘কয়টা দিন কষ্ট হয়েছে, ঝড়-বৃষ্টিতে  প্রকাশকদের ক্ষতি হয়েছে, আমরা সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’ তিনি বলেন, ‘মেলার প্রকাশকরা আমাদের অনুরোধ করেছেন মেলার সময়সীমা বাড়ানো যায় কি না? বইমেলা মূলত ফেব্রুয়ারি মাসকে ঘিরে। এ ছাড়া ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠান হবে।’

বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মেলার সময়সীমা আরো দুই দিন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে আগামী ২ মার্চ মেলার সমাপ্তি হবে।

এদিকে মেলার শেষ দিন মাথায় রেখে গতকাল বৃষ্টির বাধা উপেক্ষা করে প্রচুর পড়ুয়াদের ভিড় লক্ষ করা গেছে মেলায়। বেচাকেনায় ব্যস্ত ছিলেন প্রকাশকরাও। গতকাল গ্রন্থমেলা চলে বেলা ২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত রাত ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্যমতে, মেলায় গতকাল নতুন বই এসেছে ১৫৩টি। গল্পগ্রন্থ ৩১, উপন্যাস ২১, প্রবন্ধ ১২, কাব্যগ্রন্থ ৫২ ও অন্যান্য বিষয়ক গ্রন্থ ৩৭টি। পুরো মাসজুড়ে মেলায় নতুন বই এসেছে মোট ৪ হাজার ৬৮৫টি।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’-এর সদস্যসচিব ড. জালাল আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নিরাপদ মিডিয়ার চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, গ্রন্থমেলা উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য দেশবাসীর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। ২০১৯-এর গ্রন্থমেলা অতীতের যেকোনোবারের তুলনায় ছিল বিস্তৃত, ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য। প্রথমবারের মতো গ্রন্থমেলার আয়োজনে এবার যুক্ত ছিল- লেখক বলছি মঞ্চ, কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, বাচিকশিল্পীদের পরিবেশনা এবং নান্দনিক সমাপনী আয়োজন। তবে মেলার শেষ মুহূর্তে আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রকাশকদের যে ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি করেছে, সে জন্য আমরা সমবেদনা ও দুঃখ প্রকাশ করছি। এই দুর্যোগ আবারো প্রমাণ করেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজনের জন্য স্থায়ী মেলা মাঠ বরাদ্দের কোনো বিকল্প নেই, যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে।

প্রতিবেদন উপস্থাপন করে ড. জালাল আহমেদ বলেন, আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি (গতকাল) পর্যন্ত বাংলা একাডেমি আনুমানিক দুই কোটি ১৫ লাখ ৯১ হাজার টাকার বই বিক্রি করেছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং আজকের সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করলে বলা যায় যে, এবার বইমেলায় গতবারের বিক্রির তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়েছে (২০১৮’র গ্রন্থমেলায় বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭০ কোটি ৫০)। মেলায় প্রকাশিত ৪ হাজার ৬৮৫টি বইয়ের মধ্যে মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা ১১৫১টি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেএম খালিদ বলেন, একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। এই মেলা সারা দেশের জ্ঞানজগতে যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে, তা অবিস্মরণীয়। এটি শুধু বিকিকিনির মেলা নয় বরং একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক উৎসবে রূপ নিয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলা এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এক বিশাল জ্ঞানোৎসব। এবারের মেলা দেশ-বিদেশের জ্ঞানপিপাসু মানুষের মনে যে সাড়া জাগিয়েছে তা প্রমাণ করে এ দেশের মানুষ জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, একুশে গ্রন্থমেলায় মানুষের মধ্যে বই নিয়ে যে আগ্রহ দেখা গেছে তাতে প্রমাণ হয় প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশেও মুদ্রিত বইয়ের গুরুত্ব কিছুমাত্র কমেনি।

অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের যেকোনো শাখায় সার্বিক অবদানের জন্য কবি নির্মলেন্দু গুণকে কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯ দেওয়া হয়। পুরস্কারের অর্থমূল্য দুই লাখ টাকা।

গুণিজন স্মৃতি পুরস্কার ঘোষণা

২০১৮ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কথাপ্রকাশ-কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০১৯, ২০১৮ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে গোলাম মুরশিদের ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত : নজরুল-জীবনী’ গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশনকে, মইনুদ্দীন খালেদের ‘মনোরথে শিল্পের পথে’ গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুক্সকে এবং মারুফুল ইসলামের ‘মুঠোর ভেতর রোদ’ গ্রন্থের জন্য চন্দ্রাবতী একাডেমিকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৯ দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডকে রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০১৯ এবং ২০১৯ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মধ্যমা (এক ইউনিট), বাতিঘর (বহু ইউনিট), পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.-(প্যাভিলিয়ন)-কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৯ প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত সব প্রকাশককে ২৫ হাজার টাকার চেক, সনদ ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়।

‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন সলিমুল্লাহ খান, সাগুফতা শারমিন তানিয়া, সুমন রহমান, মিছিল খন্দকার ও নাহিদা আশরাফী। 

মেলার মূল মঞ্চে সাংস্কৃতিক আয়োজনে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফরিদা পারভীন, আকরামুল ইসলাম, মহিউজ্জামান চৌধুরী ও ইয়াসমিন মুশতারী।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads