• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
নতুন রূপে সেজেছে ডাকসু ভবন

ঢাবির রোকেয়া হলে অনশনে থাকা ছাত্রীদের সঙ্গে ডাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক

ছবি : বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

নতুন রূপে সেজেছে ডাকসু ভবন

  • ঢাবি প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৫ মার্চ ২০১৯

প্রায় তিন দশক পর নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।  সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে নবনির্বাচিত প্রতিনিধিদের বরণ করে নিতে নতুন রূপে সাজানো হয়েছে ডাকসু ভবন। সংস্কারের পাশাপাশি ভবনটির নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। ভিপি, জিএসসহ নতুন নেতাদের কার্যালয়ও সাজানো হয়েছে নতুন রূপে। পুরনো আসবাব সরিয়ে নবনির্বাচিত প্রতিনিধিদের পছন্দ অনুযায়ী নতুন আসবাবেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডাকসুর নবনির্বাচিত প্রতিনিধিদের বরণ করতে প্রস্তুত করা হয়েছে ডাকসু ভবন। ভবনের দেয়াল সংস্কারের পাশাপাশি বিভিন্ন কারুকাজ করা হয়েছে। পুরনো আসবাবগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রতিনিধিদের পছন্দমতো নতুন আসবাব দেওয়া হবে সেখানে। সেই সঙ্গে রুমগুলোকে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন করে দেওয়া হচ্ছে টেলিফোন সংযোগ।

জানা গেছে, দীর্ঘ ২৮ বছর অচল থাকার পর সচল হওয়া ডাকসুর ভিপি, জিএসসহ নতুন নেতাদের কার্যালয় সাজাতে বেশ কিছু কাজ করা হয়েছে। ভবনের প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে নানা কারুকাজ করা হয়েছে। পুরনো সবকিছু বদলে নতুন করে সাজানো হয়েছে। নবনির্বাচিত প্রতিনিধিরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কক্ষের ডিজাইন করে নিতে পারবেন। সঙ্গে পছন্দমতো আসবাবপত্রও। এ জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো কক্ষের আসবাবপত্র কেনা হয়নি।  

গত ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন হওয়ার পর কর্মচাঞ্চল্যহীন হয়ে পড়ে থাকা ভবনটিতে এখন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ভবনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। ডাকসুর প্রতিনিধিদের কাজে ব্যবহূত কক্ষগুলোতে দীর্ঘদিন জমে থাকা ধুলো-ময়লা পরিষ্কার করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে নতুন ফ্যান। নেতাদের জন্য ২০টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকাও রাখা হচ্ছে।

ডাকসু ভবনের সহকারী স্টাফ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভবনটির অনেক কাজ করা হয়েছে। ভবনটির কক্ষগুলোতে নতুন করে রঙ করা, ধোয়া-মোছার পাশাপাশি দেয়ালে কারুকাজ করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ৯টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এসব ক্যামেরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হবে। ভবনের চারপাশে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তা ধরা পড়বে এসব সিসি ক্যামেরায়, যা পরবর্তীতে দালিলিক প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। কক্ষগুলোতে নতুন তালাও লাগানো হয়েছে।

সরেজমিন গতকাল ডাকসু ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দ্বিতীয় তলায় আটটি কক্ষ রয়েছে। ডাকসুর অফিস কক্ষে বসে কাজ করছেন আবুল কালাম। তিনি তার সহকারীকে বিভিন্ন বিষয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

ডাকসু ভবনের কলাপসিবল গেট পার হয়ে বাঁ পাশের প্রথম কক্ষটি সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) ও দ্বিতীয় কক্ষটি সাধারণ সম্পাদকের (জিএস) জন্য বরাদ্দ। বাকি ৬টি কক্ষের মধ্যে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস), সাহিত্য সম্পাদক, সম্পাদক ও সদস্য, খেলাধুলার কক্ষ, কনফারেন্স হল ও পত্রিকা পড়ার জন্য রাখা হয়েছে। এসব কক্ষের মধ্যে পুরনো বেশ কয়েকটি আলমারি, কিছু বই, পত্রিকা ও ফাইল দেখা গেছে।

আবুল কালাম আজাদ জানান, কক্ষগুলো পরিষ্কার করে পুরনো জিনিসপত্রগুলো গুছিয়ে রাখা হয়েছে। নতুন আসবাবপত্র কেনা হয়নি। কারণ আমরা আসবাবপত্র  কিনলে যদি নেতাদের পছন্দ না হয়, এই কারণে নেতারা দায়িত্ব গ্রহণ করলে তাদের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী জিনিসপত্র কিনে কক্ষগুলো সাজানো হবে।

তিনি আরো জানান, ডাকসুর দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিন, সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করার জন্য একটি মনিটরও কেনা হয়েছে। এসব কাজের জন্য একজন কম্পিউটার অপারেটরও নিয়োগ দেওয়া হবে।

ভবনের নিচের তলায় রয়েছে ডাকসু সংগ্রহশালা ও ক্যাফেটেরিয়া। সংগ্রহশালায় গিয়ে দেখা যায়, ৭ মার্চ হাত উঁচিয়ে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের আদলে নির্মিত ভাস্কর্য, ’৫২-র ভাষা আন্দোলন যেখানে শুরু হয়েছিল সেই ঐতিহাসিক আমগাছের গোড়ার অংশও স্থান পেয়েছে সংগ্রহশালায়। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বিভিন্ন দেশের প্রাচীন মুদ্রাও রাখা হয়েছে সংগ্রহশালায়।

গত ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত ৩৭তম ডাকসু নির্বাচনে ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরল হক নুর। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জয়লাভ করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) নির্বাচিত হন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, নির্বাচিতদের মেয়াদ হবে এক বছরের। এ জন্য পৃথক কোনো শপথের বিধানও নেই। নির্বাচিত কর্মকর্তারা এক সেশনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন এবং পরবর্তী নির্বাচিত নেতৃত্ব দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার আগ পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন।

উল্লেখ্য, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৩-৫৪ শিক্ষাবর্ষে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে পূর্বনাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’ গ্রহণ করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ৩৬ বার ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডাকসুর প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক হন যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। ডাকসুর সর্বশেষ ভিপি ও জিএস ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান ও দলটির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন। এরপর দীর্ঘদিন ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। সর্বশেষ নির্বাচন নিয়ে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়, ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করতে হবে। এরপরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১১ মার্চ নির্বাচনের আয়োজন করে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads