• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
১৫ মেগা প্রকল্পে ব্যয় হবে ২ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা

১৫ মেগা প্রকল্পে ব্যয় হবে ২ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা

ছবি : সংরক্ষিত

জাতীয়

অনুসন্ধান চলছে ২ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকার বিদেশি সহায়তা

১৫ মেগা প্রকল্পে ব্যয় হবে ২ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২২ মার্চ ২০১৯

কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের পর এবার চটগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত পৃথক একটি মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করতে চায় সরকার। চার লেনের এ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৫৭৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের আর্থিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) প্রকল্পটি বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া সাপেক্ষে অনুমোদনের লক্ষ্যে বরাদ্দ ছাড়াই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সম্প্রতি অনুমোদন পাওয়া আরএডিপি পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, আরএডিপিতে বিদেশি সহায়তা অনুসন্ধানের সুবিধার্তে বরাদ্দ ও অনুমোদন ছাড়া মোট ২৫৬ প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা বা বেশি ব্যয়ের প্রকল্প রয়েছে ১৫টি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পে ২ লাখ ৪৩ হাজার ২১০ কোটি টাকার বিদেশি সহায়তার অনুসন্ধান করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।

ইআরডি সূত্র জানায়, সড়ক ও বিদ্যুতের প্রক্রিয়াধীন ছয় মেগা প্রকল্পে অর্থায়নের প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে চীন সরকার। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। জি-টু-জি ভিত্তিতে চীন থেকে এসব প্রকল্পে আসবে ৯৪ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ। এ ছাড়া বেশ কিছু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক (এআইআইবি), ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি), জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), মালয়েশিয়ার সরকারসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সহায়তা পাওয়া গেছে।

ইআরডির কর্মকর্তারা এ বিষয়ে জানান, প্রতিবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিদেশি সহায়তা অনুসন্ধানের জন্য বেশ কিছু প্রকল্প জুড়ে দেওয়া হয়ে থাকে। এসব প্রকল্প সরকারের উন্নয়ন অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়ে এ তালিকা সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তবে এ তালিকার অনেক প্রকল্প বিদেশি সহায়তা না পাওয়ায় অনুমোদন ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে এডিপিতে যুক্ত থাকে। অনেক সময় নিজস্ব অর্থায়নেই এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধ্য হয় সরকার।

অবশ্য বিদেশি সহায়তা নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, একের পর এক বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নে। সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে ঋণ আসছে বেশি। এসব ঋণে বাড়তি সুদের পাশাপাশি বিভিন্ন শর্ত দেওয়া থাকে। এ অবস্থায় চীনের ঋণের বিকল্প অনুসন্ধানের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণে বিদেশি সহায়তা পেতে পারে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ, পরিবহনের মতো অবকাঠামো খাতে এখানে চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। নমনীয় শর্তে বিদেশি সহায়তায় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। তবে কঠিন শর্তে দ্বিপক্ষীয় উৎসের ঋণ পরিহার করে সহজ শর্তের ঋণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

সংশোধিত এডিপিতে অনুমোদন ছাড়াই জুড়ে দেওয়া গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ৪১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এ বিষয়ে প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (পিডিপিপি) ইতোমধ্যে অনুমোদন করেছে পরিকল্পনা কমিশন। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ করতে যেকোনো উৎস থেকে ২৯ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা চায় সরকার।

বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে বিদেশি সহায়তায় পাঁচটি বড় প্রকল্প নিতে চায় সরকার। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে চার প্রকল্পে চীন সরকারের ৪৯ হাজার ২২৩ কোটি টাকা সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এক প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক থেকে চাওয়া হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। দুই উৎস থেকে পাঁচটি প্রকল্পে ৬৯ হাজার ২২৩ কোটি টাকার সহায়তা চাওয়া হচ্ছে।

চীনের সহায়তায় মহেশখালী পাওয়ার হাবের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, ড্রেজিং ও বন্দর নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। মহেশখালী ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ২৭ হাজার ১১ কোটি টাকার মধ্যে চীন থেকে চাওয়া হয়েছে ১৫ হাজার ২০২ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুতের ৩৩ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড কেব্ল্ স্থাপন প্রকল্পে ব্যয়ের ১৫ হাজার ৬৮০ কোটি টাকার পুরোটাই চাওয়া হয়েছে চীন সরকারের কাছে। ডিপিডিসি এলাকায় বিদু্যুৎ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও সম্প্রসারণে ১১ হাজার ৬৯১ কোটি টাকার মধ্যে ৭ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা চাওয়া হচ্ছে চীনের কাছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) আধুনিকায়ন ও সমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছে চাওয়া হবে ২০ হাজার কোটি টাকা।

এর বাইরে এআইআইবি বা এডিবির সহায়তায় ১০ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। ১০ হাজার ২১০ কোটি টাকায় প্রস্তাবিত ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের জন্য যেকোনো উৎস থেকে ঋণ অনুসন্ধান চলছে। রংপুর বুড়িমারী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ১০ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে এডিবির কাছে।

বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পে দাতা হিসেবে প্রথমবারের মতো অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে মালয়েশিয়ার নাম। দেশটির সরকার ঢাকা পূর্ব পশ্চিম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। ১৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পে মালয়েশিয়া থেকে আশা করা হচ্ছে ১৩ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা।

এ ছাড়া পায়রা বন্দরের মূল অবকাঠামো নির্মাণে ১৪ হাজার কোটি টাকা। সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনে ২০ হাজার কোটি টাকার অনুসন্ধান চলছে। এ বিষয়ে চীন সরকারের পাশাপাশি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে জাইকা, এডিবি, আইডিবি ও বিশ্বব্যাংকে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাউন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নেও খোঁজা হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads