• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
বয়স্ক ভাতায় স্বচ্ছতা চায় বিশ্বব্যাংক

বয়স্ক ভাতায় স্বচ্ছতা চায় বিশ্বব্যাংক

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

বয়স্ক ভাতায় স্বচ্ছতা চায় বিশ্বব্যাংক

# দুই দশকে সুবিধাভোগী বেড়েছে ১০ গুণ # মাথাপিছু বরাদ্দ ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০০ টাকা # জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২৪ মার্চ ২০১৯

চার লাখ দরিদ্রকে দিয়ে বয়স্ক ভাতা চালু হলেও বর্তমানে এ সুবিধা পাচ্ছেন অন্তত ৪০ লাখ মানুষ। মাথাপিছু ১০০ টাকা থেকে বেড়ে বয়স্ক ভাতা উন্নীত হয়েছে ৫০০ টাকায়। ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে পরবর্তী ১০ বছরে এ খাতে সরকারের বরাদ্দ বেড়েছে চার গুণ। এর ফলে দরিদ্রতম ১০ শতাংশ পরিবারের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে ৩০ শতাংশ। ভাতা সুবিধা পাওয়া সাড়ে ৭৩ শতাংশ পরিবারে বেড়েছে বাড়তি খাবার গ্রহণের সামর্থ্য। এত কিছুর পরও বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগী নির্বাচন, অর্থ পরিশোধসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী সংস্থা বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

বাংলাদেশে বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির সার্বিক দিক নিয়ে সম্প্রতি একটি পলিসি ব্রিফ তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে দেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। অন্যদিকে কমে আসছে জন্মহার। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়েই চলেছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা। ফলে ২০ বছরে বয়স্ক ভাতার আওতায় আসা মানুষের সংখ্যা উন্নীত হয়েছে ১০ গুণে। আর মাথাপিছু ভাতার পরিমাণ বেড়েছে পাঁচ গুণ। প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মানব উন্নয়ন সূচকের সঙ্গে জন্মহার ও মৃত্যুহার তাৎপর্যপূর্ণ হারে কমেছে। দেশের জনসংখ্যা পিরামিডে এক সময় বিপুল পরিমাণে শিশুর স্থলে এখন রয়েছে অনেক বৃদ্ধ। ২০১১ সালে দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশের বয়স ছিল ৬২ বছরের বেশি। ২০৫০ সালে এ হার দাঁড়াবে ২০ শতাংশের ওপরে। এ অবস্থায় বয়স্কদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি পরিণত হয়েছে বয়স্কদের দারিদ্র্য নিরসনের বড় হাতিয়ারে।

বয়স্ক ভাতার সুবিধাপ্রাপ্তদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, সরকারের এ সহায়তার সুবাদে অনেক পরিবারে খাদ্যবাবদ ব্যয়ের পরিমাণ বেড়েছে। এর ফলে চিকিৎসা সুবিধাও নিতে পারছেন অনেকেই। এতে বলা হয়েছে, বয়স্ক ভাতার সাড়ে ৭৩ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে খাবার বাবদ। এ ভাতা পাওয়া পরিবারগুলোর আমিষ গ্রহণের প্রবণতা অন্যান্য পরিবারের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে বয়স্ক ভাতার ১৮ দশমিক ২০ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে চিকিৎসা বাবদ। কিছু পরিবার বয়স্ক ভাতার অর্থ ব্যবহার করে আয়ের বিকল্প উৎস সৃষ্টি করতে পেরেছে। তবে প্রায় ২০ শতাংশ পরিবারে বয়স্ক ভাতা কোনো কাজে লাগছে না।

বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগী নির্বাচন, অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়া ও নালিশি ব্যবস্থায় এখনো বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। এসব বিষয়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নজরদারি বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সুবিধাভোগী নির্বাচনে দরিদ্রবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আরো বেশি তথ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পরিশোধ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অর্থ বিতরণ কেন্দ্র বাড়াতে হবে। অসুস্থতা ও বয়স বিবেচনায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিশোধ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক কার্ডের প্রচলন নিশ্চিত করারও তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সামাজিক নিরাপত্তায় সরকারের ব্যয়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত মেয়াদে সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র বাস্তবায়ন করছে সরকার।

কৌশলপত্রটি প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম এ বিষয়ে বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে কিছু অনিয়ম রয়েছে। দরিদ্রদের বাদ দিয়ে অনেক সময় ধনীদের কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। অনেক সময় প্রকৃত সুবিধাভোগীদের না দিয়ে অন্যরা এ অর্থ নিয়ে যায়। এসব সমস্যার সমাধানে কৌশলপত্রে বিভিন্ন সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বয়স্ক ভাতার অর্থ ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ শুরু হয়েছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সামর্থ্য বিবেচনায় মাথাপিছু ভাতার পরিমাণ বাড়বে বলেও জানিয়েছেন এ অর্থনীতিবিদ।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বয়স্কদের মধ্যে শুধু অবসর নেওয়া সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ভাতা পেতেন। মোট শ্রমশক্তির মাত্র ৫ শতাংশের ভাগ্যে জুটত সরকারি কর্মীর অবসর ভাতা। আর মোট বয়স্ক মানুষের মাত্র ১ শতাংশ পেতেন এ ভাতা। সরকারি কর্মীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক অনেক খাতেই এখনো অবসর ভাতা চালু হয়নি। পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে ৬২ বছর বা বেশি বয়সী নারী এবং ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী পুরুষের জন্য ভাতা চালু করে সরকার।

বয়স্ক ভাতার ক্রমবিকাশ পর্যালোচনা করে বিশ্বব্যাংক জানায়, শুরুতে প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ জন নারী ও পাঁচজন পুরুষ মিলে সারা দেশে মাত্র ৪ লাখ বয়স্ক মানুষকে সুবিধার আওতায় আনা হয়। ওই সময় প্রতিজন মাসে ১০০ টাকা করে বছরে ১ হাজার ২০০ টাকা বয়স্ক ভাতা হিসেবে পেতেন। সময়ের ব্যবধানে মাথাপিছু বয়স্ক ভাতার পরিমাণ উন্নীত হয়েছে ৫০০ টাকায়। এ হিসাবে ১০ বছরে মাথাপিছু বয়স্ক ভাতার পরিমাণ উন্নীত হয়েছে ৫ গুণে।

পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি বয়স্ক ভাতার আওতায় আসা মানুষের সংখ্যাও এক দশকে বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বর্তমানে প্রায় ৪০ লাখ বয়স্ক মানুষ ভাতা পেয়ে থাকেন। মোট বয়স্ক মানুষের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এসেছেন ভাতার আওতায়। এ ভাতা বিতরণের ফলে দরিদ্রতম ১০ শতাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

সুবিধার আওতায় আসা মানুষের সংখ্যা ও ভাতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বয়স্ক ভাতা বাবদ সরকারের ব্যয়ও বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছর এ খাতে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৬০০ কোটি টাকা। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে এ খাতে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয়ের ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে বয়স্ক ভাতায়। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় এ হার দশমিক ১ শতাংশ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads