• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
এফআর ভবনকে তিনবার নোটিশ দেওয়া হয়

রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারটি বিপজ্জনক ঘোষণা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

এফআর ভবনকে তিনবার নোটিশ দেওয়া হয়

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩০ মার্চ ২০১৯

রাজধানীর বনানীতে অগ্নিকাণ্ডের শিকার এফআর টাওয়ারে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টি আগেই জেনেছিল ফায়ার সার্ভিস। এ ব্যাপারে তিনবার ভবন কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে নোটিশও দেওয়া হয়। ওই নোটিশে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয় ফায়ার সার্ভিস। এছাড়া কিছু সুপারিশও করা হয়েছিল।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জুলফিকার রহমান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভবন পর্যবেক্ষণ করে ইতোপূর্বে তিনবার নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও ভবন কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, এফআর টাওয়ারটি একাধিকবার পরিদর্শন করে এর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার বিভিন্ন ত্রুটির বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিছু সুপারিশও করা হয়েছিল। কিন্তু ভবনের ফায়ার সেফটি ইস্যুতে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভবন মালিকদের গাফিলতির প্রমাণ স্পষ্ট। পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা কিংবা সংকীর্ণ জরুরি বহির্গমন পথের প্রমাণও এর আগে পাওয়া যায়। এছাড়া ১৮ তলা ভবনের অনুমোদন নিয়ে ২৩ তলা করার কারণ হিসেবে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য দিতে পারেনি ভবন কর্তৃপক্ষ।

ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (ডিডি) দেবাশিষ বর্ধন জানান, এর আগে আমরা এফআর টাওয়ারটি একাধিকবার পরিদর্শন করি। ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার বিভিন্ন ত্রুটিসহ সেগুলো সমাধানে কিছু সুপারিশও করা হয়। এ বিষয়ে তাদের দুবার নোটিশও করা হয়। কিন্তু ভবন কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে পুলিশের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী ২৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হন আরো ৭৩ জন। তাদের মধ্যে ৫৬ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে ওই ভবনটিতে সুসংগঠিত আগুন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকলে হতাহতের সংখ্যা এত হতো না বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, আগুন লাগলে যা যা প্রয়োজন তার প্রায় সবই ছিল এফআর টাওয়ারে। তবে এগুলোর কোনোটিই কার্যকর ছিল না। ভবনের একমাত্র ইমার্জেন্সি এক্সিট (জরুরি বহির্গমন পথ) অপরিকল্পিত ও অপরিপক্ব ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ভবনে যে ইমার্জেন্সি এক্সিট ছিল, সেটা এমন ছিল যে, সেটা দিয়ে মানুষ বের হলে আরো বিপদে পড়তেন। অধিকাংশ মৃতের ঘটনা ইমার্জেন্সি এক্সিটের সিঁড়িতে হয়েছে। সিঁড়ির লবি এবং সিঁড়ি থেকে মোট ১১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে তিনজন সম্পূর্ণ পুড়ে যান।

ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) খন্দকার আবদুল জলিল বলেন, গতকালের (বৃহস্পতিবার) ঘটনায় কিছু মানুষ লাফ দিয়ে মারা যান। বাকিরা সবাই ধোঁয়ার কারণে। এরপর আগুনে পুড়ে যান। স্মোক ম্যানেজমেন্টের (ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ) বিষয়টা এফআর টাওয়ারসহ কোনো ভবনই ফলো করে না। নিয়ম হচ্ছে, ইমার্জেন্সি এক্সিটের সিঁড়িতে বন্ধ (ভরাট) দরজা থাকতে হবে, এটা কাচ বা কাঠের হতে পারে। যাতে ধোঁয়া সিঁড়িতে না যেতে পারে। কিন্তু এফআর টাওয়ারের ফায়ার ডোরটি গ্রিল দিয়ে তৈরি। ফলে সিঁড়িতে ধোঁয়া গেছে এবং এ কারণে অনেকে মারা গেছেন। এ ভবনের ইমার্জেন্সি সিঁড়ি ব্যবহারযোগ্য ছিল না।

গত বৃহস্পতিবার অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ভবনটিতে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের যথেষ্ট ব্যবস্থা ছিল না। যেগুলো ছিল সেগুলো ইউজঅ্যাবল ছিল না। এমনকি যে পাইপটি আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার হয় সেটিও পুড়ে যায়। ফলে তাৎক্ষণিক ফায়ার ফাইটিং করা সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads