• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
আগুন আতঙ্ক

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

আগুন আতঙ্ক

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ৩১ মার্চ ২০১৯

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার আগুনের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই আগুন লাগে রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর এফআর টাওয়ারে। গত বৃহস্পতিবার বহুতল ওই ভবনে লাগা আগুন কেড়ে নিয়েছে ২৬ জনের প্রাণ। একই দিনে এলিফ্যান্ট রোডের একটি বিপণিবিতানে আগুন লাগে। এরপর দুই বছরের ব্যবধানে গতকাল শনিবার গুলশান-১-এর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।

পুরান ঢাকা থেকে অভিজাত এলাকা কোনো জায়গাই বাদ নেই। আগুনের ভীতি তৈরি হয়েছে রাজধানীবাসীর মধ্যে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নিয়ে বেশি শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত ৫ বছরে ঢাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ২৮ হাজার ১৩টি। অর্থাৎ বছরে গড়ে পাঁচ হাজার ৬০২টি অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। এ হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ১৫টির বেশি ছোট-বড় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটছে ঢাকায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে আগুনের ঘটনা বেশি ঘটে। তবে এবার গ্রীষ্ম শুরুর আগেই আগুন জনমনে ব্যাপক ভীতি তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই সময় শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার। আর বসে থাকার সময় নেই। দুর্ঘটনা মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিরোধের দিকে যেতে হবে। রাজধানীর বহুতল ভবনগুলো নিরীক্ষা করতে হবে। নিরীক্ষা করে যেসব ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দুর্বল সেগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এখানে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া যাবে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানী ঢাকায় প্রায় ২০ লাখের বেশি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ বহুতল ভবনের অবস্থা খারাপ। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা দুর্বল। ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। দুই কোটি মানুষ আগুনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এর মধ্যে হাসপাতাল, বিপণিবিতান,  আবাসিক ফ্ল্যাট, অফিসপাড়া কিছুই বাদ নেই। হাসপাতালগুলোর ৯৫ শতাংশই আগুনের ঝুঁকিতে। সম্প্রতি শেরেবাংলা নগরের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আগুনের ঘটনা আলোচনায় উঠে আসে। সরিয়ে নিতে হয় রোগীদের।

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, রাজধারীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর তালিকা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে।

ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ১৯৯৬ এবং ২০০৮ মোতাবেক, আবাসিক, বাণিজ্যিক যেকোনো ধরনের ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে জরুরি সিঁড়ি ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকতে হবে।

ফায়ার সার্ভিসের একটি হিসাব বলছে, অভিজাত এলাকার প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ভবন আগুনের ঝুঁকিতে। বিধিমালা মানছেন না নির্মাতারা। ছয়তলার ওপরে ভবনগুলো বহুতল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সব মিলিয়ে ঢাকায় প্রায় ১২ হাজার ভবন আগুনের ঝুঁকিতে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ভবন মালিক ও নির্মাতারা ভবনের নকশা অনুমোদনকালে যথাযথভাবে উপস্থাপন করে থাকেন। তবে ব্যয় পরিহার করতে তা লঙ্ঘন করে চলছেন। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়। তবে সরকার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সরঞ্জামাদি আমদানিতে কোনো ধরনের কর আরোপ করছে না বর্তমানে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক আবু নাঈম মো. শহিদুল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন, বহুতল ভবনে প্রত্যেক তলায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকার কথা। এজন্য ভবন মালিকরা ব্যয় করতে চান না। এটি আজকের খারাপ পরিণতির জন্য দায়ী। এখন কেবল কথা বললে হবে না। পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু পদক্ষেপ নিয়ে বসে থাকলে হবে না। পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কঠোর নজরদারি থাকতে হবে। অন্যথায় মৃত্যু আর দুর্ঘটনা থামবে না।  

স্থপতি ইকবাল হাবীব সম্প্রতি এ ব্যাপারে বলেন, পুরান ঢাকা থেকে নতুন ঢাকা সব এলাকায় আগুন একটি উদ্বেগের কারণ। নানা দুর্বলতায় এটি নজরদারি হয়নি। কিন্তু এভাবে প্রাণহানি মানা যায় না। এখন বলা যায়, ঢাকার মানুষ আগুনের মধ্যে বসবাস করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০৮ সালের আগে দেশে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ভবনের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল না। ফলে তার আগে যেসব ভবন করা হয়েছে সেগুলোতে কোনো ধরনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। পরে বিধিমালা সংশোধন করে এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে্যেছ। কিন্তু অনেকেই মানছে না। এসব কারণে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি।

তারা বলছেন, দুর্ঘটনা মোকাবেলায় সক্ষমতা বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে। বিশ্বে এখন এ খাতে আধুনিক নানা প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসকে তহবিলের জোগান দিয়ে সরঞ্জামাদির আমদানি বাড়াতে হবে। লোকবল সমস্যা থাকলে নিয়োগ দিতে হবে, যাতে তারা দুর্ঘটনা মোকাবেলায় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি কমাতে পারে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ঢাকার ভবনগুলো অগ্নিনির্বাপণ কমপ্লায়েন্স কি না, তা দেখতে শিগগিরই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও সিটি করপোরেশন যৌথভাবে কাজ করবে। এখন আমাদের কথা বলার আর সময় নেই। অ্যাকশন নিতে হবে। 

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, অগ্নিকাণ্ডসহ যেকোনো দুর্ঘটনা মোকাবেলায় প্রশিক্ষণ, মহড়া এবং আইনের যথাযথ বাস্তাবয়ন একান্ত অপরিহার্য। ভবনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পরীক্ষা করে যত দ্রুত সম্ভব পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads