• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
‘আমার কলিজা দাউ দাউ করে জ্বলছে’

নুসরাতের বাবা

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

‘আমার কলিজা দাউ দাউ করে জ্বলছে’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১২ এপ্রিল ২০১৯

আমার একমাত্র মেয়ে নুসরাত। সেদিন পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল সে। আর ওই সময়ই তার সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। আমার ভেতরে কী চলছে, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। মেয়ে হারানোর বেদনায় কলিজায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সামনে এভাবেই কথাগুলো বলে অঝোরে কাঁদছিলেন নুসরাতের বাবা একেএম মুসা।

নুসরাতের বাবা বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সবাই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আপনাদের কারণে আমার মেয়ের এই পরিণতির কথা সবাই জানতে পেরেছেন। এই কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় বার বার বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ছিলেন কেএম মুসা।

নুসরাতের বাবা আরো বলেন, সেইদিন আমার মেয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল। কিন্তু সেইদিনই আমার একমাত্র মেয়ের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটেছে। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কী বলব জানি না। আমার ভেতরে যে কী চলছে, তা আমি বোঝাতে পারছি না। আমার কলিজায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।

দোষীদের বিচার দাবি করে নুসরাতের বাবা বলেন, এরই মধ্যে আমার মেয়ের বিষয়ে সবকিছুই প্রকাশিত হয়েছে। আমার দাবি, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যেন সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার হয়।

পোড়া শরীর নিয়ে টানা পাঁচ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে লড়াই করে গত বুধবার রাতে না-ফেরার দেশে চলে গেছেন নুসরাত। গতকাল ময়নাতদন্তের পর তার মরদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্বজনদের সঙ্গে বাড়ি যায় নুসরাতের নিথর দেহ। বিকাল ৫টায় তার মরদেহ ফেনীর নিজ বাড়িতে পৌঁছায়। সন্ধ্যার আগে জানাজা শেষে দাদির পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন নুসরাত। 

নুসরাত এবার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা থেকে আলিম (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি সোনাগাজীর উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের মাওলানা কেএম মুসার মেয়ে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। গত শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাদরাসা ভবনের ছাদে দুর্বৃত্তরা তার গায়ে আগুন দেয়। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফেনী সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।

পরিবারের অভিযোগ, মাদরাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ-উদ-দৌলা গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহানের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। নুসরাত বিষয়টি বাসায় জানালে তার মা সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে। এরপর মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় অধ্যক্ষের লোকজন। কিন্তু নুসরাত অপারগতা প্রকাশ করেন।

নুসরাতকে গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে অধ্যক্ষসহ কয়েকজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads