• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
ব্যবহারবিধি না জানায় বাড়ছে দুর্ঘটনা

গ্যাস সিলিন্ডার

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

ব্যবহারবিধি না জানায় বাড়ছে দুর্ঘটনা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ এপ্রিল ২০১৯

ফুটপাথের দোকানে যে চুলা জ্বলছে সেখানেও ব্যবহার হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। আবার আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ, ভরসা সিলিন্ডারেই। এ ছাড়া খাবার হোটেলসহ রেস্টুরেন্টেও ব্যবহার হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার।

গ্যাসের এই সিলিন্ডারের ব্যবহারবিধি সম্পর্কে অনেকেরই ধারণার অভাব স্পষ্ট। ইদানীং প্রায়ই গ্যাস সিলিন্ডার থেকে অগ্নিদুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। সিংহভাগ ক্ষেত্রেই বিস্ফোরণ কারণ নয়, গ্যাস লিকেজ বা ঠিকমতো গ্যাস বন্ধ না করাই আগুন লাগার মূল কারণ বলে জানা যায়। অর্থাৎ সিলিন্ডার ব্যবহারকারীদের অদক্ষতায় প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো স্থানে ঘটছে এই অগ্নিদুর্ঘটনা।

ফায়ার সার্ভিসের অনুসন্ধান বলছে, সারা দেশে যত আগুন লাগে, তার ১৮ শতাংশ ঘটে চুলার আগুন থেকে। আর এর সিংহভাগই আবার গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে। গত বছর মোট তিন হাজার ৪৪৯টি বা ১৮ শতাংশ অগ্নিকাণ্ড ঘটে চুলার আগুন থেকে। আর এর বেশিরভাগই আবার ঘটেছে সকালে চুলা জ্বালাতে গিয়ে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, রান্নাঘরের একটি জানালা খোলা থাকলে লিক করা গ্যাস ঘরে ঠাসা অবস্থায় থাকবে না। সে ক্ষেত্রে আগুন ধরার আশঙ্কা কম। আরো কিছু সাবধানতা আছে। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহ, সিলিন্ডার পরীক্ষা না করা, ক্রেতাদের কোনো ধরনের সতর্কবার্তা না দেওয়ার বিষয়টিও আছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘটে যাওয়া বেশ কিছু সিলিন্ডার দুর্ঘটনার দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, রাতে সিলিন্ডার ব্যবহারের পর ‘রেগুলেটর’ খুলে রাখার উদাসীনতা থেকে আগুনের সূচনা হচ্ছে।

সিলিন্ডার বিক্রির সময় বিক্রেতাদের পক্ষ থেকে যেসব সতর্কবার্তা ব্যবহারকারীদের বলা হয়, ব্যবহারকারীরা তা ভুলে যান বলে দাবি করেছেন সিলিন্ডার বিক্রেতারা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর নবীনগর হাউজিংয়ের গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান আইডিয়াল এন্টারপ্রাইজের মালিক মিজানুর রহমান জানান, সিলিন্ডার বিক্রির সময় ব্যবহারের বেশ কিছু নিয়ম তারা ক্রেতাদের জানিয়ে দেন। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের যেসব ঘটনা ঘটছে, সিলিন্ডার ব্যবহারকারীরা নিয়মগুলো অনুসরণ করলে তা ঘটত না। তিনি বলেন, ‘আমরা বলে দিই সিলিন্ডার ব্যবহার শেষে রেগুলেটরটা খুলে রাখতে। কিন্তু অলসতার কারণেই হোক বা অন্য কারণেই হোক, এটা কেউ করতে চায় না। রেগুলেটর খোলা থাকলে গ্যাস লিক হয় না।’ ‘গ্যাস ব্যবহারের সময় চুলা চালু করে তারপর ম্যাচ (দেয়াশলাই) খোঁজে। ম্যাচ খুঁজে পেতে পেতে দেখা যায় পুরো রান্নাঘর গ্যাসে ভরে গেছে। তখন আগুন জ্বালালে দুর্ঘটনা তো ঘটবেই।’ মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার নাভা এন্টারপ্রাইজের মালিক শহিদ উল্লাহ জানান, সিলিন্ডার বিক্রির সময় লিখিত কোনো সতর্কবার্তা না দেখা হলেও মুখে বলে দেওয়া হয়। তা ছাড়া সিলিন্ডারের গায়েও বেশ কিছু সতর্কবার্তা লেখা আছে। সেগুলো মেনে চললেও দুর্ঘটনা কমে আসবে।

তবে ব্যবহারকারীদের একটি বড় অংশ বর্তমানে সিলিন্ডার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্ক। সারা দেশে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ড কিছুটা হলেও টনক নাড়িয়েছে তাদের। তাওহিদ রবিন নামে একজন দুই বছর ধরে বাসায় রান্নার কাজে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করেন। তবে প্রথম থেকে তিনি নিয়মকানুন সঠিকভাবে জানতেন না। বেশ কিছু দুর্ঘটনার পর তিনি সতর্ক হয়েছেন। নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে শিখেছেন সিলিন্ডার ব্যবহারের সব দিক। বলেন, ‘উদাসীন হওয়া যাবে না। যখন সিলিন্ডার ব্যবহার করব, তখন চাবি অন করব। ব্যবহার শেষ চাবি বন্ধ। সিলিন্ডারের আশপাশে আগুন জাতীয় বা আগুন জ্বলতে পারে এমন জিনিস রাখা যাবে না।’ তবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে গ্যাস সিলিন্ডারের উদাসীন ব্যবহার। রাজধানীর ফুটপাথগুলোতে চায়ের দোকানে দেখা গেছে সিগারেট বিক্রি হয়। আর সিলিন্ডারের পাশে দাঁড়িয়ে ধূমপান করতে দেখা যায় ক্রেতাদের। বিপজ্জনক জেনেও ‘কিছু করার নাই’ এমন কথা জানালেন অধিকাংশ দোকানি। মিরপুর কাজীপাড়া এলাকায় চায়ের দোকান লিয়াকত হোসেনের। এই দোকানে এই চিত্র দেখার পর বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘কতজনরে কমু? তারা কি দেখে না এইডা সিলিন্ডার? সবাই ঐডার পাশে গিয়া সিগারেট খায়। আমি তো সরতে কই, সরে না।’ আরো বিপজ্জনক পরিস্থিতি দেখা যায় বেশ কিছু খাবার হোটেলে। হোটেলের বাইরে গ্যাস সিলিন্ডারে চলছে রান্না। সিলিন্ডার থেকে চুলার দূরত্ব চার থেকে পাঁচ ফুট। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে জেনেও এ অবস্থায় কাজ করছেন কর্মচারীরা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads