• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
সুশাসনে উন্নতি

লোগো পরিকল্পনা কমিশন

জাতীয়

সুশাসনে উন্নতি

অবনতি আইন প্রয়োগে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৯ এপ্রিল ২০১৯

সুশাসন ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক বছরে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। ২০১০ সালে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অর্জন ছিল ১৪ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট। ২০১৬ সালে এ সূচকে বাংলাদেশ পেয়েছে ২১ দশমিক ১৫। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ৯ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট থেকে এ সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪৮। মান নিয়ন্ত্রণে ২২ দশমিক ১ পয়েন্ট থেকে সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ১২ পয়েন্টে। আইন প্রয়োগে ২৫ দশমিক ৫৯ থেকে বেশ অগ্রগতির সুবাদে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে। বিশ্বব্যাংকের এসব তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সুশাসনের ক্ষেত্রে বেশ এগিয়েছে বলে দাবি করেছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনের ‘রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মধ্যবর্তী মূল্যায়ন’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব বিষয় উঠে এসেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার স্টিয়ারিং কমিটির সভায় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। ২০২১ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম।  পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীসহ কমিটির সদস্য এবং বিভিন্ন  মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সুসাশনে উন্নতি হলেও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অবনতি হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে,  ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সুশাসনে বাংলাদেশের অর্জন ৩৬ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৩-এ। সুশাসনের কার্যকারিতায় ২৬ দশমিক ৩২ থেকে নেমে ঠেকেছে ২৫ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে। সার্বিক বিবেচনায় এখনো অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে কম্বোডিয়া ও ইথিওপিয়ার মতো দেশগুলো বাংলাদেশের কাছাকাছি রয়েছে। আফগানিস্তান ও নেপাল রয়েছে বাংলাদেশের পেছনে। মধ্যবর্তী, ভালো ও অতি ভালো শ্রেণির বেশ কিছু দেশ বাংলাদেশের সামনে রয়েছে।

প্রেক্ষিত পরিকল্পনার লক্ষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে বিনিয়োগে কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে যেতে পারেনি বলে স্টিয়ারিং কমিটির সভায় দাবি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- দারিদ্র্যের হার কমানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখা, সবার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং নারী-পুরুষের সমতার মতো সূচকগুলোতে ভালো করেছে বাংলাদেশ।

সভাশেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অর্জন অনেক ভালো। সুশাসনের কোনো মাপকাঠি নেই। একেক রকম পণ্ডিতের কাছে সুশাসনের ব্যাখা একেক রকম। তবে দেশে সুশাসন অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে। আরো ভালো করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সুশাসন একটি চলমান প্রক্রিয়া। অনেক পক্ষের সমাহারে সুশাসন নিশ্চিত হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় অনেক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সংসদ সদস্য জেল খেটেছেন বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন- সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ অনেক উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সম্পদের হিসাব তলব করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার বিষয়ে সভায় অনেক সচিব মত দিয়েছেন জানিয়ে এমএ মান্নান বলেন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হলে ঢাকার ওপর চাপ কমবে। সচিবদের কাছ থেকে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণের প্রস্তাবকে সুশাসনের লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করেন মন্ত্রী।

অপরদিকে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, প্রেক্ষিত পরিকল্পনার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) লক্ষ্য অনেকাংশেই পূরণ হয়নি। পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় একটু উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল। লক্ষ্য অর্জিত না হলেও ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

এতে বলা হয়, ২০১০-১১ অর্থবছরের ৬ দশমিক ৭ শতাংশ লক্ষ্যের বিপরীতে প্রবৃদ্ধি হয় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে ৭ শতাংশ লক্ষ্যের বিপরীতে অর্জন ৬ দশমিক ৫  শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে লক্ষ্য ৭ দশমিক ২ শতাংশে উঠলেও প্রবৃদ্ধি নেমে আসে ৬ শতাংশে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ লক্ষ্যের বিপরীতে অর্জন ৬ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো লক্ষ্য ৮ শতাংশে উন্নীত হলেও প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

লক্ষ্যের সঙ্গে অর্জনের ব্যাপক পার্থক্যের কারণে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। ৬ শতাংশের বৃত্ত ভেঙে সেবারই প্রথম প্রবৃদ্ধি হয় ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ লক্ষ্যের বিপরীতে সমান প্রবৃদ্ধি হয়।

এ বিষয়ে ড. শামসুল আলম বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পর চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সংশোধন করে কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে পরে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপির ৩১ শতাংশ বিনিয়োগের লক্ষ্য ছিল। এ সময় অর্জন দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৫ শতাংশে। এর মধ্যে ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ লক্ষ্যের বিপরীতে বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছে ২৩ দশমিক ১ শতাংশ। তবে বেসরকারি বিনিয়োগ বেড়েছে লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশি।

ড. শামসুল আলম বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। এই পরিকল্পনা তৈরি করা হবে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনার আলোকে। বিষয়টি বিবেচনায় আগেভাগেই দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তৈরির কাজ করা হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads