• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে নুসরাতকে মরতে হতো না

নুসরাত জাহান রাফি

সংরক্ষিত ছবি

জাতীয়

প্রশাসন ব্যবস্থা নিলে নুসরাতকে মরতে হতো না

  • ফেনী প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১৯ এপ্রিল ২০১৯

ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের ঘটনার স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও মাদরাসা কমিটি সময় মতো যথাযথ ব্যবস্থা নিলে নুসরাত জাহান রাফিকে মরতে হতো না।

নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় প্রশাসনের গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ সদর দফতরের পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত দল দুই দিন ধরে সোনাগাজীতে তদন্ত করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত দলের প্রধান সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তদন্ত কমিটির প্রধান ডিআইজি (মিডিয়া) শেখ মো. রুহুল আমীন সাংবাদিকদের বলেন- স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও মাদরাসা কমিটি যদি ২৭ মার্চের ঘটনার পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করত তাহলে ৬ এপ্রিলের নির্মম ঘটনাটি এড়ানো যেত।

নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিনের জড়িত থাকার বিষয়ে ডিআইজি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন, যত বড় ক্ষমতাধরই হোক না কেন, সবার বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীরও সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।

সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের দায়িত্বে অবহেলার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা সোনাগাজীর বিভিন্ন মহল, মাদরাসা শিক্ষক এবং নুসরাতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনায় ওসির গাফিলতি ছিল বলেই তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা আরো বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছি। তদন্তে ওসির দায়িত্ব অবহেলা প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ফেনীর এসপি এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকারের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সোনাগাজীতে তদন্তে কাজ করেছি, শুক্রবার (আজ) ফেনীতেও কাজ করব। তদন্তের পর আমরা বলতে পারব। এখনো স্পষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না।

সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ (বরখাস্ত) সিরাজউদ্দৌলার বিষয়ে ডিআইজি বলেন, সিরাজউদ্দৌলা অনেক আগে থেকেই এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। যারা দায়িত্বশীল ছিলেন তারা যদি আগেই ব্যবস্থা নিতেন তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। সিরাজউদ্দৌলার সমর্থকরাই এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। কমিটির অনেকেই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

পিবিআইয়ের তদন্ত বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি জানান, পিবিআইয়ের তদন্তে যদি ক্ষমতাধর কারো নাম আসে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিআইজি (মিডিয়া) শেখ মো. রুহুল আমীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত দল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার ঘটনাস্থল ও তাদের বাড়ি পরিদর্শন করেছে।

এ প্রসঙ্গে ডিআইজি (মিডিয়া) শেখ মো. রুহুল আমীন আরো বলেছেন, তদন্ত দল ফেনীতে আরো কিছুদিন অবস্থান করবে। এ সময় আমি এখানকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, মেয়েটির পরিবার ও স্বজনসহ সবার সঙ্গে কথা বলব। এরপর তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করা হবে।

ফেনী জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার তিন দিন পর পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার প্রাথমিক তদন্তের বিষয়গুলো উল্লেখ করে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) একটি প্রতিবেদন দেন।

প্রতিবেদনে সোনাগাজীর ওসিসহ স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত দল ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনসহ প্রশাসনের কোনো ধরনের গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখবে।

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির শ্লীলতাহানি ও উক্ত ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে না নেওয়ায় গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষা কেন্দ্রে নুসরাতের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি ও ফেনীর এসপির বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে গত ৯ এপ্রিল ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। অভিযোগের বিষয়গুলো তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে পুলিশ সদর দফতর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads