• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
তুমব্রু খালে এবার স্লুইস গেট মিয়ানমারের

বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে তুমব্রু খালে পিলার নির্মাণের পর এবার স্লুইস গেট নির্মাণ

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গা তাড়ানোর পাঁয়তারা

তুমব্রু খালে এবার স্লুইস গেট মিয়ানমারের

  • মাহাবুবুর রহমান, কক্সবাজার
  • প্রকাশিত ২০ এপ্রিল ২০১৯

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে তুমব্রু খালে পিলার নির্মাণের পর এবার স্লুইস গেট নির্মাণ করছে মিয়ানমার। দুই দেশের দুটি সীমান্ত বিওপি (বর্ডার আউট পোস্ট) থাকা সত্ত্বেও চোরাচালান ও সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশের অজুহাতে মূলত শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গাদের সরাতে দেশটি এমন পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ রোহিঙ্গাদের। খালে পিলার ও স্লুইচ গেট নির্মাণের ফলে শূন্যরেখার পাশাপাশি পুরো ঘুনধুম ইউনিয়নের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাবে বলে দাবি স্থানীয় জনপ্রতিনিধির। তবে গত বৃহস্পতিবার বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ও বিজিপির (বর্ডার গার্ড পুলিশ) মধ্যে পতাকা বৈঠকে স্থাপনা নির্মাণের পরও দুই দেশের পানির গতিপথ স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্ত হলেও স্লুইচ গেট পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে বিজিপির কাছে লিখিত চেয়েছে বিজিবি।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু খাল দিয়ে দুই দেশের পানি প্রবাহিত হয়। কিন্তু হঠাৎ চোরাচালান ও সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশের দোহাই দিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারির শুরু দিকে নিজেদের অংশে তুমব্রু খালের ওপর পিলার নির্মাণের কাজ করে মিয়ানমার। এর পর থেকেই ওই স্থানে ধারাবাহিকভাবে পিলার নির্মাণের কাজ চালিয়ে যায় দেশটি।

এ ব্যাপারে বারবার প্রতিবাদলিপি দেওয়া হলেও মিয়ানমার কোনো সাড়া দেয়নি। এরপর পিলারের ওপর তৈরি করে কাঁটাতারের বেড়া। তবে তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গাদের দাবি, মূলত তাদের শূন্যরেখা থেকে সরাতে খালের ওপর এই স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।

শূন্যরেখায় অবস্থান করা রোহিঙ্গা দিল মোহাম্মদ বলেন, তুমব্রু খালে মিয়ানমারের এই স্থাপনার কারণে বর্ষা মৌসুমে পানির ঢল এসে সব তলিয়ে যাবে। আমরা শূন্যরেখায় যে রোহিঙ্গারা আছি মূলত তাদের ক্ষতি করার জন্য মিয়ানমারের এই পাঁয়তারা।

আরিফ নামে আরেক রোহিঙ্গা বলেন, বান্দরবান হয়ে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অসংখ্য খাল রয়েছে। কিন্তু ওইখানে তো মিয়ানমার চোরাচালান ও সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ বন্ধের জন্য খালের ওপর পিলার ও কাঁটাতার দেয়নি। শুধু তুমব্রু খালের ওপর মিয়ানমার এই স্থাপনা দিচ্ছে কেন? এতে বোঝা যায়, মূলত আমাদের সরাতেই এই উদ্যোগ। কিন্তু আমরা এখান থেকে কোথাও সরব না; সরতে হলে এখান থেকে অধিকার নিয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাব।

৩ নং ঘুনধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, খালে পিলার ও স্লুইচ গেট নির্মাণের ফলে শূন্যরেখায় বসবাসকারীদের পাশাপাশি চলতি বর্ষা মৌসুমে পুরো ঘুনধুম ইউনিয়নের স্থানীয়দের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাবে। আগে হয় তো মানুষ ১০ ঘণ্টা পানিতে কষ্ট পেত, এখন সেটা ১০ দিনও ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এদিকে সর্বশেষ গত ১ এপ্রিল পিলারের নিচে বসানো হয় বেড়া আকৃতির লোহার পাত। বিজিবি এর জোর প্রতিবাদ জানায়। ফলে ৫ এপ্রিল কাজ বন্ধ করে দেয় মিয়ানমার। কিন্তু ৯ এপ্রিল আবারো কাজ শুরু করে। এরপর বিজিবি বারবার প্রতিবাদ লিপি ও যোগাযোগ করার পর এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পতাকা বৈঠকে সম্মত হয়। এদিন সকাল ১০টায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজসংলগ্ন সীমান্ত পিলার-৩১/১-এস-এর কাছে বাংলাদেশ অংশে বিজিবি এবং বিজিপি ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে দেন বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদ এবং বিজিপির ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে দেন ১নং ব্রাঞ্চের অধিনায়ক লে. কর্নেল ক্যাউ উইন হ্যালিং। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলে ওই বৈঠক। বৈঠক শেষে পরস্পরের মধ্যে শুভেচ্ছা উপহার বিনিময় করা হয়।

বৈঠক শেষে লে. কর্নেল আবু হায়দার আজাদ আহমেদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে তুমব্রু খাল দিয়ে যাতে কোনো ধরনের চোরাচালান, পাচার কিংবা সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ করতে না পারে তার জন্য এই বেড়া দিচ্ছে। তারা ওই স্থাপনা নির্মাণের ছবি দেখিয়ে আমাদের বর্ণনাও দিয়েছে। এটা মূলত স্লুইচ গেটের মতো করেছে, যখন পানির স্রোত বেড়ে যাবে তখন গেটটি খুলে দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।

তবে এই স্লুুইচ গেটটি কারা ব্যবহার করবে— এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিবি অধিনায়ক বলেন, গেটটির নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেলে কারা এটি পরিচালনা করবে পরে সে বিষয়ে বিজিপি আমাদের বিস্তারিত জানাবে বলে জানায়।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছে সাড়ে ৪ হাজার রোহিঙ্গা।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads