• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
খাওয়া তো দূরের কথা গোসলও করা যায় না

রাজশাহী ওয়াসা

জাতীয়

শোধন ছাড়াই ৪ লাখের বেশি  গ্রাহককে পানি সরবরাহ

খাওয়া তো দূরের কথা গোসলও করা যায় না

  • রাজশাহী ব্যুরো
  • প্রকাশিত ২০ এপ্রিল ২০১৯

শোধন ছাড়াই শহরের ৪ লাখ গ্রাহককে পানি সরবরাহ করছে রাজশাহী ওয়াসা। ফলে সরবরাহকৃত পানি খাওয়াতো দূরের কথা, গোসল পর্যন্ত করা যায় না বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। তবে ওয়াসার দাবি- তাদের সরবরাহকৃত পানি রোগ-বালাইমুক্ত।

গ্রাহকদের অভিযোগ, রাজশাহী ওয়াসা থেকে সরবরাহকৃত পানি ফুটিয়ে পাত্রে রাখলেও পানির ওপরে সাদা স্তর জমে, যা দেখলে খাওয়ার রুচি হয় না। ফলে এ পানি খাওয়া তো দূরের কথা, গোসল পর্যন্ত করা যায় না। শুধু ঘর মোছা, কাপড় ও থালা-বাসন ধোয়া যায়।

জানা গেছে, রাজশাহী ওয়াসার ৫টি পানি শোধনাগারের মধ্যে ৪টিই পরীক্ষামূলকভাবে চালুর পর থেকে বিকল। যে শোধনাগারটি চালু আছে, সেটাও চলে বছরের মাত্র ৪ মাস। ফলে শোধন ছাড়াই শহরের ৪ লাখ ৪ হাজার ২১০ জন গ্রাহককে পানি সরবরাহ করছে রাজশাহী ওয়াসা।

ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দাবি- কোনো স্বীকৃত ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করা হলেও তাদের সরবরাহকৃত পানি রোগ-বালাইমুক্ত। নিজস্ব পরীক্ষায় তারা এমনটি দাবি করছে। একই সঙ্গে দ্রুত বিকল শোধনাগারগুলো চালু করে পরীক্ষিত সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিতে কাজ করছে। জানা গেছে, ২০১১ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) পানি সরবরাহ বিভাগ থেকে পৃথক হয়ে যাত্রা শুরু করে ‘রাজশাহী ওয়াসা’। সংস্থাটির লক্ষ্য ছিল- রাসিকের পানি সরবরাহ বিভাগের থেকে অধিক স্বাস্থ্যকর এবং সুপেয় পানি মহানগরবাসীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। তবে মহানগরীর সচেতন বাসিন্দারা বলছেন- গত আট বছরে সেই লক্ষ্য পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে সংস্থাটি।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৩০ জন অধিবাসীর রাজশাহী শহরে ওয়াসার পানি সরবরাহের আওতায় এসেছে ৪ লাখ ৪ হাজার ২১০ জন গ্রাহক। মহানগরজুড়ে ওয়াসার পানি সরবরাহ লাইন রয়েছে ৭১২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। এর ৯৬ শতাংশই আসছে ভূগর্ভ থেকে। শতকরা হিসাবে পানির কাভারেজ ৭৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। দৈনিক ৫ দশমিক ১০ কোটি লিটার পানি বিক্রি করছে ওয়াসা। সংস্থাটি দিনে ১২ ঘণ্টা পানি সরবরাহ করে থাকে। তবে এ পানির মান নিয়ে রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ।

মহানগরীর সাগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন আহমেদ জানান, ওয়াসা থেকে যে পানি দেয়, তাতে ময়লা ছাড়াও প্রচুর আয়রন থাকে। পাত্রে সংরক্ষণ করলে লাল স্তর পড়ে যায়। ফুটিয়ে পান করতে গেলে দেখা যায় নিচে সাদা স্তর।

রাণীনগর এলাকার গৃহবধূ সাজেদা আক্তার জানান, লাইনের (ওয়াসার) পানি দিয়ে শুধু ধোয়া-মোছার কাজ করা যায়। ওই পানিতে গোসল করাও যায় না। টানা ১০ দিন গোসল করলে চুল নষ্ট হয়ে যায়। বিমানবন্দর রোড, সপুরা থেকেও কালো, দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহের অভিযোগ আছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার জানান, ত্রুটিপূর্ণ সংগ্রহ, শোধন ও সরবরাহ ব্যবস্থার কারণে ওয়াসার পানি সুপেয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এটি সমস্যার একটি দিক। তবে সরবরাহ লাইন সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করা গেলে এবং রাসায়নিকভাবে শোধন না করলে বিপদ দ্বিগুণ হবে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতান আব্দুল হামিদের কার্যালয়ে গিয়েও দেখা মেলেনি। গতকাল শুক্রবার সকালে তার ব্যক্তিগত নম্বরে কল করলে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আঞ্চলিক গবেষণাগারের সিনিয়র কেমিস্ট শফিকুল ইসলাম জানান, দক্ষিণ এশিয়ার স্ট্যান্ডার্ড বিবেচনায় রাজশাহী ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি মোটামুটি বিশুদ্ধ বলা চলে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কোনো স্বীকৃত ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। তবে নিজস্ব পরীক্ষায় ওয়াসার পানিতে পানিবাহিত রোগবালাইয়ের জীবাণু মেলেনি।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads