• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ এপ্রিল ২০১৯

রোজা সামনে রেখে রাজধানীর বাজারগুলোতে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ, পেঁপে ও বেগুনের দামে আগুন। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি মসুর ডালের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। চিনিতে বেড়েছে ৩ টাকা। ছোলা কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শাক-সবজি, মাছ-মাংসের চড়া দামের মধ্যে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম কমেছে। টানা দুই সপ্তাহে ডিমের দাম ডজনে কমেছে প্রায় ২০ টাকা।

রমজান মাসকে কেন্দ্র করে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকার মতো। এ নিয়ে টানা দুই সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বাড়ল প্রায় ১০ টাকা।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

রামপুরা ও খিলগাঁও অঞ্চলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, শুধু ডিম বিক্রি করেন এমন ব্যবসায়ীরা ডিমের ডজন বিক্রি করছেন ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। এ হিসাবে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে কমেছে ২০ টাকা।

মুদি দোকানে ও খুচরা বিক্রেতারা প্রতি পিস ডিম বিক্রি করছেন ৭ থেকে ৮ টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১০ টাকা। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম পিসে ৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

ডিমের দামের বিষয়ে হাজীপাড়ার ডিম ব্যবসায়ী মোতালেব মিয়া বলেন, আর কিছুদিন পরেই রোজা শুরু হবে। রোজা শুরু হওয়ার আগে হঠাৎ করেই প্রচণ্ড গরম পড়তে শুরু করেছে। এ কারণেই ডিমের দাম কিছুটা কমে গেছে। এমন গরম অব্যাহত থাকলে রোজার মধ্যে ডিমের দাম আরো কমে যেতে পারে।

এ ব্যবসায়ী বলেন, রোজা ও গরমের মধ্যে ডিমের চাহিদা তুলনামূলক কম থাকে। প্রতি বছরই রোজার মধ্যে ডিমের দাম কমে যায়। এবার রোজা শুরু হওয়ার আগেই ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। গরম পড়ার কারণেই হয়তো ডিমের দাম কমছে। কারণ অনেকেই গরমের মধ্যে ডিম খান না।

ডিমের দাম কমার বিষয়ে প্রায় একই ধরনের তথ্য দেন খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী হাসান আলী। তিনি বলেন, ডিম গরম খাবার হিসেবে পরিচিত। গরমের মধ্যে বেশি ডিম খেলে অনেক সময় পেট খারাপ হয়। এ কারণে গরম পড়লে কিছু মানুষ ডিম খেতে চান না। ফলে গরমের সময় ডিমের দাম কিছুটা কম থাকে। তাছাড়া আর দিন দশেক পরেই রোজা শুরু হবে। রোজার সময় অনেকেই ডিম খান না। এসব কারণেই এখন ডিমের দাম কমে গেছে।

রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে তার দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজ, পেঁপে, বেগুন ও শসার দাম। এর পাশাপাশি সব ধরনের সবজি, মাছ ও মাংস চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি করছেন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২০ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১০০ টাকা। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম পাল্লায় বেড়েছে ৩০ টাকা পর্যন্ত।

পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়ে বাজারটির ব্যবসায়ী  হোসেন আলী বলেন, রোজার কারণে এখন পেঁয়াজের দাম একটু বেড়েছে। সামনে হয়তো আরেকটু বাড়তে পারে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রবণতা তুলনামূলক কম। কারণ, এবার পেঁয়াজের ফলন খুব ভালো হয়েছে।

রামপুরা ও খিলগাঁও অঞ্চলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি করছেন ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা। আর দুই সপ্তাহ আগে ছিল ২৫ টাকা। অর্থাৎ খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে যে পেঁয়াজ ২৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি এখন তা ৩৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। মূলত রোজার কারণেই পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। রোজায় হয়তো দাম আরো বাড়বে।

বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। বাজার ও মানভেদে কাঁচা পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে অনেক বাজারে কাঁচা পেঁপে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল।

কাঁচা পেঁপের মতো দাম বেড়েছে শসা ও বেগুনের। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকার মতো বেড়ে শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। আর গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

তবে কিছুটা দাম কমেছে পাকা টমেটোর। বাজারভেদে পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৪০ টাকা। গত সপ্তাহে কোনো বাজারে পাকা টমেটোর কেজি ৪০ টাকার নিচে বিক্রি হয়নি।

দাম অপরিবর্তিত থাকা সবজির মধ্যে পটল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, শজনে ডাঁটা ৬০ থেকে ৮০, বরবটি ৬০ থেকে ৭০, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০, করলা ৬০ থেকে ৭০, শিম ৪০ থেকে ৬০, ধুন্দুল ৭০ থেকে ৮০, গাজর ৩০ থেকে ৪০, ঢেঁড়স ৪০ থেকে ৫০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির কেজি আগের সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা থেকে ১৭৫ টাকায়, লাল লেয়ার মুরগি ২১০ থেকে ২২০ টাকা, পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি।

মুরগির মতো দাম অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের। বাজারভেদে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৩০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি। আর খাসির মাংস ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি।

অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দামও। তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি, পাঙাশ ১৫০ থেকে ১৮০, রুই ২৮০ থেকে ৬০০, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০, টেংরা ৫০০ থেকে ৮০০, শিং ৫০০ থেকে ৬০০ এবং চিতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads