• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
৪২ কোটি টাকার ট্যাব ব্যবহারে ‘না’

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

৪২ কোটি টাকার ট্যাব ব্যবহারে ‘না’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ মে ২০১৯

নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য প্রায় ৪২ কোটি টাকা মূল্যের ট্যাব কোনো কাজে আসছে না। নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহের মাত্র ১০ দিন পর থেকে এই ট্যাবে ত্রুটি ধরা পরে এবং নির্বাচনী কাজে ব্যবহার অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। ফলে সরকারের বিশাল অঙ্কের টাকা গচ্চা যাচ্ছে।

জানা যায়, ৪২ হাজার ২০০টি ট্যাব গ্রহণের জন্য গত ১৮ মার্চ একটি কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর ১০ দিন পর (২৮ মার্চ) ইসি সিদ্ধান্ত নেয়, প্রায় ৪২ কোটি টাকা মূল্যের ট্যাবগুলো নির্বাচনে আপাতত ব্যবহার করা হবে না। এমনকি এসব ট্যাব দিয়ে প্রশিক্ষণ ও মক (অনুশীলনমূলক) ভোটিং না করার জন্যও নির্দেশ দেয় ইসি।

নির্বাচন কমিশনকে ওই ৪২ হাজার ট্যাব সরবরাহ করেছে কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেড। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ফল দ্রুত পাঠানোর জন্য এ ট্যাবগুলো অনেকটা তড়িঘড়ি করে কেনার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। দরপত্র অনুযায়ী, ট্যাবগুলোর গ্যারান্টি তিন বছর। অথচ সরবরাহের সাতদিনের মাথায় ব্যবহার করতে গেলে ট্যাবগুলোয় সমস্যা ধরা পড়ে। ট্যাবের ত্রুটির কারণে ভোটের ফল দ্রুত আসার পরিবর্তে সাধারণ কেন্দ্রের চেয়ে দেরিতে আসে। ফলে ট্যাবগুলোর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, কোনো কারণে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের ট্যাব সরবরাহ করলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্যাব সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেডের কাছ থেকে নিম্নমানের ট্যাব গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমান।

তিনি জানান, খারাপ ট্যাব গ্রহণ করলে ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বিপদে পড়বেন। ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘আর যদি এমনটি ধরা পড়ে, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

‘তবে খারাপ জিনিস ধরা পড়েছে কি না সেটা আমি জানি না,’ বলেন মোখলেছুর রহমান। ট্যাবের সফটওয়্যারে সমস্যা দেখা দিলে সেটাকে নিম্নমানের বলতে রাজি নন অতিরিক্ত এই সচিব। তার মতে, ‘হয়তো সফটওয়্যারে কোনো সমস্যা হতে পারে। নষ্ট বা খারাপ, এটা তো বলা যায় না। সফটওয়্যার কী করছে, না করছে, সেটা সফটওয়্যার প্রকৌশলীরা বলতে পারবেন। আমাদের আইটি বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তারা কী সফটওয়্যার ইনস্টল করছে, সেগুলো তারা বলতে পারবেন। সিস্টেম এনালিস্ট বলতে পারবেন।’

ট্যাবে ত্রুটি ধরা পড়লেও সিস্টেম এনালিস্ট ফারজানা আখতার দাবি করেন, ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই ট্যাবগুলো গ্রহণ করা হচ্ছে।’ ৪২ হাজার ট্যাব প্রদানের দায়িত্ব সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে উন্মুক্ত দর আহ্বান করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান ফারজানা আখতার। এ বিষয়ে কথা বলতে কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমলুক সাবির আহমেদকে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি।

যেভাবে ত্রুটি ধরা পড়ে : গত ১৮ মার্চ কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেডের কাছ থেকে ৪২ হাজার ২০০টি ট্যাব গ্রহণের জন্য সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হককে প্রধান করে সাত সদস্যবিশিষ্ট ট্যাব রিসিভিং কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সহকারী পরিচালক (তথ্য অনুসন্ধান) মো. রশিদ মিয়ার সই করা নথি থেকে জানা যায়, পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় পর্যায়ে গত ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত গোপালগঞ্জ সদর ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ভোটে এসব ট্যাব ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ট্যাব ব্যবহার করে ঠিক মতো ফলাফল পাঠানো যায়নি। এরপর ২৮ মার্চ উপজেলার চতুর্থ পর্যায়ের ভোটে ময়মনসিংহ সদর, পটুয়াখালী সদর, বাগেরহাট সদর, কক্সবাজার সদর, ফেনী সদর ও মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় এসব ট্যাব ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।

রশিদ মিয়ার সই করা নথিতে বলা হয়, ‘ট্যাব ও সফটওয়্যার ব্যবহার করে ফল পাঠানোয় কারিগরি সমস্যা পরিলক্ষিত হয়েছে। উপযুক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য উল্লিখিত ছয়টি সদর উপজেলার ইভিএম ভোটকেন্দ্রগুলোতে ট্যাব ব্যবহার না করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।’ এসব ইভিএমের প্রশিক্ষণ ও মক ভোটিংয়েও ওই ট্যাব ব্যবহার না করার জন্য বলা হয়। নথিতে উল্লেখ করা হয়, ‘৩১ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য ছয়টি সদর উপজেলার নির্বাচনে ট্যাব ব্যবহার না করা এবং ইভিএমের প্রশিক্ষণ ও মক ভোটিংয়ে এ সংক্রান্ত বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না করার জন্য আদিষ্ট হয়ে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’

গ্রহণ কমিটি পরিবর্তন : ইসি সূত্র জানায়, ট্যাব গ্রহণের জন্য গত ১৮ মার্চ একটি কমিটি গঠন করে কমিশন। পরে সেই কমিটিতে পরিবর্তন আনা হয়। কর্মকর্তাদের মাঝে দায়িত্ব নিয়ে এ ট্যাব গ্রহণে অনাগ্রহ রয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে কতগুলো ট্যাব গ্রহণ করা হয়েছে, তা বলতে পারেননি সিস্টেম এনালিস্ট ফারজানা আখতার। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কতগুলো ট্যাব নেওয়া হয়েছে, তা কমিটি বলতে পারবে।’ ওই দুই কমিটির তিনজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউই কতগুলো ট্যাব এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়েছে, তা জানাতে রাজি হননি।

কী হবে ৪২ হাজার ট্যাবের? : ট্যাবের সমস্যা ব্যাখ্যা করে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যখন আইফোনটা কিনি, কেনার পরই কি ব্যবহার করতে পেরেছি? এখানে তো কিছু সফটওয়্যার ইনস্টল করা লাগে, তাই না? আমরা ট্যাবগুলো কিনেছি। ট্যাব কেনার পরে কিছু সফটওয়্যার ইনস্টল করতে গেলে যদি কোনো কারণে ঝামেলা হয়, তাহলে ট্যাবও ঝামেলা করবে। দুই জায়গায় এ ধরনের ঝামেলা হয়েছে। মানে সফটওয়্যারে কিছুটা জটিলতা ছিল।’ ইসির কাছে ট্যাব আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার করার জন্য দেওয়া হয়েছিল বলে জানান এ কমিশনার। তিনি বলেন, ‘এটা ট্যাব কিন্তু একটা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারকে ভিত্তি করে তাকে কাজ করতে হবে। ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারকে সিনক্রোনাইজ হতে হবে ট্যাবের সফটওয়্যারের সঙ্গে। ট্যাবের সঙ্গে ম্যানেজমেন্টের সফটওয়্যার সিনক্রোনাইজ না হলে ঝামেলা হবে।’ ট্যাবগুলো পরবর্তীতে ব্যবহার করা হবে উল্লেখ করে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ট্যাবে সমস্যা দেখা দিয়েছে, এটা সংশোধন করে দিলেই হবে। আর ট্যাব ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুপক্ষের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads