• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সিএসআর ব্যয় বাড়ছে ব্যাংকের

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সিএসআর ব্যয় বাড়ছে ব্যাংকের

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৫ মে ২০১৯

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোর করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) ব্যয় বাড়ছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় এই ব্যয় আরো পরিকল্পিতভাবে করতে হবে। সেটি করা গেলে অর্থবহ হবে এ ব্যয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ব্যাংকগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে মোট ব্যয় করেছে ৬৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের প্রায় ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক মোট ব্যয়ের ১০ শতাংশ এ খাতে ব্যয় করার সুযোগ রয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে প্রায় ৯০৫ কোটি টাকা সিএসআরে ব্যয় করেছে তফসিলি ব্যাংকগুলো। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরো চার কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এসব অর্থের বেশিরভাগই ব্যয় হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়। জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বেশি ব্যয় বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান প্রদান, শীতবস্ত্র প্রদান এবং পদ্মা নদী ভাঙনের ফলে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদানে ব্যয়িত সিএসআর ব্যয় এ খাতে দেখানো হয়েছে।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে ব্যাংকগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় করেছে ৩৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। পরের ৬ মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে ব্যয় করেছে ৩০ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, গত অক্টোবর মাসে পদ্মা নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াবে দেশের তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রজ্ঞাপন মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দেওয়া হয়। সিএসআরের আওতায় ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে। পদ্মা নদীর ভাঙনে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার কয়েক হাজার বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় পরিবারগুলো। এ পরিস্থিতিতে সিএসআরের অর্থ এই এলাকার মানুষের জন্য ব্যয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়।

গতকাল ভোরে বাংলাদেশে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ফণী। এতে উপকূলবর্তী সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর ক্ষয়ক্ষতিতে যদি ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হয় তবে সেটি অবশ্যই করা হবে। আমরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। প্রয়োজনে নির্দেশনা পাঠানো হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া বিধি মোতাবেক, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তার কর-পরবর্তী মুনাফার ৫ শতাংশ সিএসআর খাতে ব্যয় করতে পারে। তবে এই খাতের ৩০ শতাংশ কেবল শিক্ষা খাতে ব্যয় করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে দেশে কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে তা জানানোর অনুরোধ জানিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে, যা ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে বলে গতকাল  মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সারা দেশে কোথাও বেড়িবাঁধ ভাঙলে বা ভাঙার উপক্রম হলে দেশের আপামর জনসাধারণকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

টেকসই উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার ক্ষেত্রে করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) বর্তমান বিশ্বে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটা এক ধরনের ব্যবসায়িক শিষ্টাচার বা রীতি, যা সমাজের প্রতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনকে ব্যবসার নিয়মের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত কার্যক্রমের ফলে উদ্ভূত নানারকম পরিবেশগত বিরূপ প্রভাব পড়ে। এসব প্রভাব দূরীকরণের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে বিদ্যমান ক্ষোভ, অসমতা ও দারিদ্র্য কমানো সিএসআরের মূল উদ্দেশ্য। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কর-পরবর্তী নিট আয় থেকে সিএসআরের অর্থ ব্যয় করে। এর বাইরে অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও এখন সিএসআরে বড় অংশ ব্যয় করছে।

অন্যান্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায় বেশি। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে মানুষের অর্থ থাকে বেশি। তাই তাদের জবাবদিহিও অন্যদের চেয়ে বেশি। এ কথা বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সিএসআরের অর্থ কোথায় ব্যয় করবে, তারও একটি নির্দেশনা দেওয়া আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় ব্যাংকগুলোকে তাদের সিএসআর খাতের মোট ব্যয়ের ৩০ শতাংশ শিক্ষা খাতে, ২০ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে এবং ১০ শতাংশ জলবায়ু ঝুঁকি বা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী ব্যাংকগুলো আটটি খাতে সিএসআরের অর্থ ব্যয় করতে পারে। এসব খাত হলো— শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ, সাংস্কৃতিক কল্যাণ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অধিকারবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য আয়বর্ধক কর্মসূচি এবং অন্যান্য খাত।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads