• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
নির্বাচনী প্রকল্প বাড়াচ্ছে এডিপির আকার

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

নির্বাচনী প্রকল্প বাড়াচ্ছে এডিপির আকার

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০৭ মে ২০১৯

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বাস্তবায়ন করতে চলতি অর্থবছরের আট মাসে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ৪০৮ প্রকল্প। এর মধ্যে গত ডিসেম্বরের নির্বাচন সামনে রেখে তড়িঘড়ি করে নেওয়া হয়েছিল প্রায় আড়াই শ প্রকল্প। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে আগামী বছর এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মুখ দেখছে। এসব প্রকল্পের শুরু থেকেই গতি ধরে রাখতে প্রয়োজন হবে বিপুল পরিমাণের অর্থ। বাস্তবতা উপলব্ধি করে সরকারের নিজস্ব তহবিল ও বিদেশি সহায়তা থেকে আগামী অর্থবছর প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়তি দেওয়া হবে প্রায় ৩৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সব মিলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের এডিপির আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকায়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়নের জন্য তিনি জানান, ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। বাস্তবায়নে গতি না আসায় তা ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এবারের সংশোধিত এডিপির (আরএডিপি) সঙ্গে ৩৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা যোগ করে ২ লাখ ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার নতুন এডিপি প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ করে আনছে পরিকল্পনা কমিশন। এ হিসাবে আরএডিপির তুলনায় এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ছে প্রায় ২৫ শতাংশ।

সূত্র জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে অনুমোদন দেওয়া প্রকল্পের অধিকাংশই নেওয়া হয়েছিল পল্লী অঞ্চলের উন্নয়নে। এর ফলে নতুন এডিপিতে অর্থ বরাদ্দেও অগ্রগাধিকার পাবে পল্লী উন্নয়ন। তা ছাড়া নির্বাচনের আগে ভোটার টানতে বিভিন্ন এলাকার সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, কালভার্ট নির্মাণ ও উন্নয়নে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় পরিবহন খাত নতুন এডিপিতে বাড়তি বরাদ্দ পাবে। বরাবরের মতোই বিদ্যুৎ খাত থাকবে শীর্ষ অগ্রাধিকার পাওয়া কয়েকটি খাতের মধ্যে।

নতুন এডিপিতে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করার লক্ষ্য রয়েছে। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে ৬০ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে বিদেশি সহায়তা ধরা হয়েছে ৫৩ হাজার কোটি টাকায়। নতুন এডিপিতে মূল এডিপির তুলনায় ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ও আরএডিপির তুলনায় ২০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বাড়ছে বিদেশি সহায়তা। আরএডিপির তুলনায় শতকরা হিসাবে বিদেশি সহায়তা সাড়ে ৪০ ভাগ বাড়ানো হচ্ছে।

নতুন এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়েছে। সংশোধিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ আছে ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে নতুন এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিলের বরাদ্দ ১৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। শতকরা হিসাবে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ বাড়বে ১৪ দশমিক ২১ ভাগ।

সূত্র জানায়, নতুন এডিপির প্রাথমিক কাজ শেষ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ। সপ্তাহের শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আসলে এ বিষয়ে তার সম্মতি নেওয়া হবে। পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় অনুমোদনের পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবটি এনইসি সভায় তোলা হবে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আগামী ১৩ বছরে অতিরিক্ত ৯২ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন বাংলাদেশের। এ অর্থের মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থায়ন বিদেশি উৎস থেকে পাওয়া যাবে। সরকারের একার পক্ষে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বাংলাদেশে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সফলতার হার এমনিতেই কম। দীর্ঘসূত্রতার কারণে কয়েক গুণ বাড়তি ব্যয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেকটাই নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় আগামীতে বড় এডিপি প্রণয়নের চাইতে বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র গবেষণা ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান এ বিষয়ে বলেন, হাতে গোনা কয়েকটা প্রকল্প পিপিপি ভিত্তিতে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের বাইরে পিপিপি প্রকল্পের সফলতা নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় পিপিপিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারের পিপিপি কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে উদ্যোগ না নিয়ে ৩০ শতাংশ প্রকল্প পিপিপিতে বাস্তবায়ন করতে চাইলে তালিকাই শুধু দীর্ঘ হবে। তিনি আরো বলেন, সড়ক ও পরিবহন খাতে পিপিপি প্রকল্প হাতে নিতে হলে জনসাধারণের জন্য বিকল্প রাস্তা রাখতে হবে। শিল্প ও বাণিজ্যের প্রয়োজনে অনেকেই টোল পরিশোধ সাপেক্ষে পিপিপি অবকাঠামো ব্যবহার করবে। জনসাধারণের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে পরিবহন ব্যয় বাড়বে বলেও মনে করেন তিনি।

সূত্র জানায়, এডিপি বাস্তবায়নে গতি আনতে চলতি বছরে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর অনুকূলে বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে। পর্যাপ্ত অর্থ দেওয়া হবে সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ প্রকল্পগুলোতে। পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পদ্মা রেল সংযোগ, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া পর্যাপ্ত। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর এবং মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে অর্থ ব্যয়ের চাপ থাকবে।

প্রসঙ্গত, মার্চ মাসে নতুন অর্থবছরের এডিপি প্রণয়নের নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। নীতিমালায় নতুন এডিপিতে ৩০ শতাংশ প্রকল্প সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। এডিপি প্রণয়ন নীতিমালায় বলা হয়েছে, আগামীতে শুধু অনুমোদিত প্রকল্প এডিপিতে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। প্রকল্প অনুমোদনে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ, বৈদেশিক সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে-এমন প্রকল্প ও আগামী অর্থবছরে কাজ শেষ হবে এমন অধিক অগ্রগতির প্রকল্পকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং মধ্যমেয়াদি কৌশল ও লক্ষ্য বাস্তবায়ন অগ্রাধিকার পাবে নতুন এডিপিতে। অগ্রাধিকার খাতে পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দের মাধ্যমে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন, পরিবহন, পরিবহন, ভৌত ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, নগর উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও মধ্যম আয়ের দেশের রূপরেখা থাকবে এডিপিতে।

২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সফটওয়্যার শিল্প ও তথ্যপযুক্তি সেবা বিকাশের মাধ্যমে রফতানি বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিমূলক প্রকল্পগুলো বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এডিপিতে। চলতি অর্থবছরের বরাদ্দহীন অননুমোদিত প্রকল্প নতুন এডিপিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। পরিকল্পনা কমিশন প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিবেচনা করেনি এমন প্রকল্প বাদ দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads