• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
শঙ্কা না থাকলেও বাড়তি নিরাপত্তা

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপন

শঙ্কা না থাকলেও বাড়তি নিরাপত্তা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ মে ২০১৯

আগামী ১৮ মে শনিবার বুদ্ধপূর্ণিমা। দিনটিকে ঘিরে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবু নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দেশের মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এমনটাই জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, বিদেশিদের বাসা-কর্মস্থলে তাদের চলাফেরায় নজরদারি ও সতর্কতা বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পুলিশ সদর দফতরে দাখিল করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে জঙ্গিদের ব্যাপারে মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করে পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আরো তথ্য সংগ্রহ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, যে কোনো নাশকতা ঠেকাতে পুলিশকে আরো সতর্ক হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় খুলনা জেলার ১৩১টি গির্জায় নজরদারি বাড়ানো রয়েছে। সেখানে কর্তব্যরত ধর্মযাজক ও ভিনদেশি নাগরিক বিশেষ করে চীন, ভারত ও নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত জেলা কোর কমিটি এ সিদ্ধান্তের কথা জেলা প্রশাসন, কেএমপি ও জেলা পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছে।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপনকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক হামলার সুনির্দিষ্ট কোনো আশঙ্কা নেই। তবু বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। বিশেষ করে বৌদ্ধমন্দিরসহ দেশের সব ধর্মীয় উপাসনালয়কে সুরক্ষিত রাখতে সব ইউনিটকে প্রয়োজনীয় নির্দশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

গত শনিবার রাতে পুলিশ সদর দফতর থেকে বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে এমন নির্দেশনার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।

এ উপলক্ষে রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি কার্যক্রম চালাবে পুলিশ। এছাড়া স্থানীয় ধর্মীয় নেতারা ও জনগণের সঙ্গে পরামর্শ করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজাতে বলা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি পুলিশিং ও স্থানীয় ভলানটিয়ারদের সহায়তা নিতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, আসন্ন বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপনে কোনো ধরনের নাশকতার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তারপরও বাড়তি সতর্কতা হিসেবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপনের স্বার্থে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া কথা জানান তিনি।

খুলনায় ২০০ বিদেশি নাগরিকের অবস্থান

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১ ও ৩২ পোল্ডারে বাজুয়া, সুতরখালী ও কামারখোলায় বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৫৬ জন চীনা খুলনায় অবস্থান করছেন। দাকোপ থানার ওসি মোকাররম হোসেন জানান, বিদেশি নাগরিকদের অবস্থানরত এলাকার পাশে পুলিশ অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছে। প্রত্যেক ক্যাম্পে একজন করে অফিসার ও তিনজন করে পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। তবে উপজেলার ৪৪টি গির্জায় পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হয়নি বলেও তিনি জানান।

রূপসা থানার ওসি মোল্লা জাকির হোসেন জানান, পাথরঘাটায় খুলনা ওয়াসার পানি ট্রিটমেন্ট প্রকল্পে কর্মরত ২৬ জন চীনের নাগরিককে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলার তিলক ও জয়পুর গির্জায়ও নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা কোর কমিটির সভায় উল্লেখ করা হয়, খুবি, কুয়েট, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও দুটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পর পর দুদিন অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা পুলিশকে অবহিত করার জন্য বলা হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, গত রোববার সর্তকতা ও তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে বিভিন্ন রেঞ্জের ডিআইজি, র্যাব, এসবি, সিআইডি, পিবিআইসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর প্রধানদের বার্তা পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি নদীবন্দরগুলোতেও নিরাপত্তার জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কর্তাদের নির্দেশনার পাশাপাশি দেশের বিমাবন্দরগুলোতে বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে।

মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সব বিমানবন্দরেই অধিকতর সতর্কতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার তারিক আহমেদ জানান, পোশাকে এবং সিভিল ড্রেসে তাদের কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। স্ক্যানিংয়ের জায়গাতেরও লোকবল বাড়ানো হয়েছে। সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে নিরাপত্তা কর্মীদের। তিনি আরো জানান, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুটি প্রবেশ পথে এপিবিএনের সতর্কতা ও টহলও জোরদার করা হয়েছে।

দেশের সব কারাগারেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক ইকবাল হাসান বলেন, আগামী ১৮ মে বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে কারাগারগুলোতে অধিকতর সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এটি রেড অ্যালার্ট নয়, তবে সবাইকে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কারাগারের নিরাপত্তা আরো জোরদার করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

কারা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে মোট ৬৮ কারাগারে ৭০ হাজারের বেশি বন্দি রয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারেই আড়াইশর বেশি জঙ্গি সদস্যকে রাখা হয়েছে।

কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারের সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমরা এমনিতেই সতর্ক। তারপরও সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে। জঙ্গিদের আদালতে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ নিরাপত্তা নেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি রাজধানীর পার্শ্ববর্তী বসিলা এলাকায় জঙ্গি আস্তানায় হানা দেয় র্যাব। সেখানে র্যাবের অভিযান টের পেয়ে আস্তানায় জঙ্গিরা আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দুজন মারা যায়। সেখানে ওই বাড়িটির টিনের চালা উড়ে যায়। এর একদিন পরই সন্ধ্যায় রাজধানীর ব্যস্ততম গুলিস্তানে টহল পুলিশের ওপর বোমা হামলা চালানো হয়। সেখানে হামলায় ২ পুলিশ সদস্য ও এক আনসার আহত হন। এ ঘটনাকে জঙ্গি হামলার বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।

আসন্ন বুদ্ধপূর্ণিমায় এমন কোনো জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এমন কোনো নির্দিষ্ট হুমকি নেই। তারপরও আমরা বিগতদিনের হামলার বিষয় মাথায় রেখেই এ সকল নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads