• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
প্রশ্নের মুখে রাইড শেয়ারিং

ফাইল ছবি

জাতীয়

প্রশ্নের মুখে রাইড শেয়ারিং

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৫ মে ২০১৯

অ্যাপস-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা দিয়ে থাকলেও নিরাপত্তা ও আইনের প্রশ্নে পিছিয়ে আছে এই রাইড শেয়ারিং।

রাইড শেয়ারিং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখলেও আস্থা অর্জন করতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে বারবার। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সমস্যার কারণে জনবিমুখ হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। নিয়ম না মেনে রাইড দেওয়া, রাতে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বেশি ভাড়া দাবি করা, অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্য, যৌন হয়রানির শিকার হওয়া, ট্রাফিক আইন না মেনে চলা, মাত্রাতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চলানোসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও খামখেয়ালিপনার কারণে রাইড শেয়ারিং তার স্বকীয়তা হারাতে বসেছে। রাইড শেয়ারিংয়ের প্রতিষ্ঠানসমূহের অ্যাপস ব্যবহার করে বাইক বা কার চালাতে যেসব কাগজপত্র প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে থাকে তার সত্যতা নিশ্চিতে পদক্ষেপ না থাকা।

‘পাঠাও’-এর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানা যায়, কাউকে রাইডার হতে হলে অ্যান্ড্রয়েড ফোন থাকতে হবে, ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে, বাইক বা কারের রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে, জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে। এসব কাগজপত্র নিলেও তার সত্যতা যাচাই করার ক্ষেত্রে কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। সঠিক কাগজপত্র থাকলেও অনেক রাইডার ঠিকমতো বাইক বা কার চালাতে পারে না বলেও জানা যায়। এতে সড়ক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

ধানমন্ডি এলাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইরফান বলেন, রাইড শেয়ারিংয়ের চালককে না চিনে শুধু মাত্র প্রতিষ্ঠানের ওপর ভরসা করেই গাড়িতে চড়তে হয়। কিন্তু উঠে যদি দেখা যায়, চালক বেশ আনাড়ি এবং দ্রুতগতির। তখন ওই অ্যাপস কোম্পানির ওপর আর বিশ্বাস থাকে না।

উবার-পাঠাওয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে নিরাপত্তাব্যবস্থাতেও ঘাটতি দেখা যায়। কেউ এখানে সহজেই ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে নিবন্ধন করতে পারে। রাইড শেয়ারিং ব্যবহারকারী বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিরাপত্তাহীনতা ও চালকের ওপর ভারসার বিষয়টি এখন বেশ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

অনেক সময় চালক অসদাচরণ করে থাকেন এবং এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর কিছুই করার থাকে না। রাজধানীর ব্যাংক পাড়ার এক নারী ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি প্রতিদিনই রাইড শেয়ারিংয়ের বাইকে করে বাসায় যাওয়া-আসা করি। সব সময় চালক ভালো হন না।

এটা ঠিক যে, খারাপ কিছু ঘটে গেলে হয়তো অপরাধীদের পাকড়াও করা যাবে। কিন্তু চালকরা অপরাধ করবেন না এমন নিশ্চয়তা তো অ্যাপস কোম্পানি দিচ্ছে না। আর নিয়ম না মেনে ইচ্ছেমতো চালানোর অভিযোগ তো আছেই।’ এ ক্ষেত্রে চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও অ্যাপস কোম্পানিকে সঠিক দায়িত্ব নিতে হবে বলে মনে করেন এই নারী কর্মকর্তা। কিন্তু পাঠাওয়ের ক্ষেত্রে চালক কিংবা গ্রাহকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পদ্ধতি খুঁজে পাওয়াই কঠিন। ভাড়া নিয়ে অভিযোগ জানানোর কোনো ক্ষেত্রও সেখানে নেই। নির্দিষ্ট অংশে অভিযোগের সুযোগ থাকলেও সেটিতে প্রবেশ করার প্রক্রিয়া জটিল।

সম্প্রতি রাজধানীতে উবার পরিচালিত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী নিহত হওয়ার পর এসব প্রসঙ্গ আবারও আলোচিত হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, উবার চালক যে ঠিকানা দিয়ে নিবন্ধন করেছিলেন, তা ছিল ভুয়া, যা যাত্রী নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

অন্যদিকে এক বছর আগে রাইড শেয়ারিং নীতিমালা হলেও সে অনুযায়ী সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধন হয়নি। নীতিমালার কয়েকটি ধারা নিয়ে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের আপত্তি এবং পুলিশের পৃথক কয়েকটি সুপারিশের কারণে নীতিমালা আটকে আছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষের সঙ্গে কথা না বলে শুধু আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নীতিমালা তৈরির কারণে এটি গ্রহণযোগ্য নীতিমালা হয়নি।

নিরাপত্তা, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, রাইডের নিয়ম না মানার বিষয়ে পাঠাও রাইড শেয়ারিংয়ের জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, ‘রাইড শেয়ারিংয়ের নিয়ম যদি কোনো রাইডার না মানেন, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আমাদের জরুরি কল করে অভিযোগ দিলেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এখানে রাইডার ও ব্যবহারকারী দুজনই আমাদের গ্রাহক হওয়ায় আমাদের দু ইদিক থেকেই ভেবে দেখতে হয়। তবে সব সময়ে যে ব্যবহারকারীও নিয়ম মেনে চলেন বা ভালো ব্যবহার করেন তা কিন্তু নয়। ব্যবহার থেকে শুরু করে সবকিছুতেই কোম্পানি দেখভাল করে থাকে। নিয়ম-কানুন শেখানো হয়, তারপর তাকে রাস্তায় পাঠানো হয়।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সূত্রমতে জানা যায়, মোটর বাইক ১১৭৮৪ ও কার ৮৮৫৩ (উবার), মোটর বাইক ২০০০০ ও কার ২০০০ (পাঠাও), মোটর বাইক ১১৭৮৪ ও কার ৬০১ (পিকমি), মোটর বাইক ২৬১১০ ও কার ১১৬১ (ওভাই), মোটর বাইক ৩০৮২২ ও কার ১৬৫৩ (সহজ), মোটর বাইক ৪৩৮৬ (চালডাল) রাজধানী ঢাকায় চলছে।

এ ছাড়া অন্যান্য পরিবহনের মধ্যে বাস-মিনিবাস ৭০০০, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ১৪০০০ ও ট্যাক্সি ক্যাব চলছে ৫০০টি। রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে রাজধানীতে উল্লেখযোগ্য হলো স্যাম, উবার, পাঠাও, মুভ, লেটস গো, ইজিয়ার, ওভাই, ডাকো ক্যাপ্টেইন, সহজ রাইড, আমার বাইক। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান শুধু মোটরসাইকেল অথবা শুধু প্রাইভেটকারের শেয়ারিং সেবা দিচ্ছে। তবে বেশির ভাগই মোটরসাইকেলের পাশাপাশি প্রাইভেটকারও জোগান দিচ্ছে। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান অন্যান্য পরিবহন সেবাও দিয়ে থাকে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads