• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
দুর্নীতি ঢুকেছে দুদকে

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

দুর্নীতি ঢুকেছে দুদকে

দুর্নীতি সম্পৃক্ততায় বেশ কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১৯ মে ২০১৯

দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডে সুনাম কুড়ালেও দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে খোদ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে)। অথচ গত কয়েক বছরে বেশ সুমান কুড়িয়েছে দুর্নীতিবিরোধী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির কিছু অসাধু কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটির সুনামকে নষ্ট করছেন। অবশ্য এদের বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, দুদকের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শরষের মধ্যে ভূত থাকলে ভূত তাড়াবে কে!      

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক ফজলুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ-আসামিদের সঙ্গে গোপন যোগাযোগ, আর্থিক লেনদেন ও দুর্নীতির অনুসন্ধানের তথ্য ফাঁস। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমর্রত ছিলেন ফজলুল হক। তিনি বন বিভাগের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্পদের অনুসন্ধানে দীর্ঘ ১৩ মাস সময় নেন। তিনি অনুসন্ধান-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথির কাগজপত্র বেআইনিভাবে এক কর্মচারীর মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে হাতে হাতে দিয়েছিলেন। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি দুদক মহাপরিচালক (প্রশাসন) রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় বিষয়টি হাতেনাতে ধরে ফেলেন।

এ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, খারাপ কাজ করলে বরখাস্ত হতেই হবে। এই কর্মকর্তা সদ্য পদোন্নতি পেয়েছেন, তারপরও কোনো ক্ষমা নেই। অন্যায় যারাই করবে, তারা আমাদের নজরে আসবে, তাদের বহিষ্কার করা হবে। দুদকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কোনো তালিকা করা হয়েছে কি না-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোনো লিস্ট করছি না। যাদের চলমান কাজের মধ্যে গলদ পাওয়া যাবে, তাদের বহিষ্কার করা হবে।

দুর্নীতি, অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে দুদকের এক কর্মকর্তাকে চলতি বছরই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তার নাম এস এম শামীম ইকবাল। তিনি দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

দুদক থেকে দেশে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় বিষয়ে অজস্র চিঠি বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তিকে পাঠানোর কারণে আবাসনে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে বৈরী পরিবেশ ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা যৌক্তিক পর্যায়ে এনে বন্ধ করা অত্যাবশ্যক। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় কথা বলেছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, দুদকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কৌশলে দুর্নীতির অভিযোগ যাদের চিঠি দেওয়া হচ্ছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বিভিন্নভাবে। যোগাযোগ করে অর্থ দাবি করছেন। অর্থের বিনিয়োগ তাদের তলব করার সময় পিছিয়ে দিচ্ছেন। কিংবা ফাইল চাপা দিয়ে রাখছেন। আবার অর্থ না দিলে সন্তোষজনক জবাব দিলেও বিনা কারণে হয়রানি করছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে অসদাচরণ করছেন। অনেকে বলছেন, দুদকে শুদ্ধি অভিযাগ চালাতে হবে। অন্যথায়, দেশের দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।

এদিকে, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্য নিয়ে হাজির হচ্ছে সংস্থাটি। এতেও এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে সরকারের বিভিন্ন মহলে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ে দুদক তাদের একটি প্রতিবেদন দিয়েছে এরই মধ্যে। এসব প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও তার অধীনস্ত বিভাগে দুর্নীতির কথা বলা হলেও স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর বিভাগে দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে দুদক প্রতিবেদন দেয়। ওই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, নিরপেক্ষ তদন্ত করলে দুর্নীতিবিরোধী এই সংস্থায়ও দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে। দুদক কর-কাস্টমস বিভাগকে ‘টার্গেট’ করে সেখানে তাদের ‘অফিস স্থাপনের’ চেষ্টা করলে তা হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগের এক মামলায় দুদকের হাতে গ্রেফতার হয়ে পরে মামলা থেকে খালাস পান। সরকার তাকে এনবিআর চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়। এনবিআরের আয়কর বিভাগের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির ১৩ উৎস এবং এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে ২৩টি সুপারিশ করে একটি প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর জমা দিয়েছে দুদক। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সবারই দুর্নীতি আছে আমাদের দেশে, এই সংস্কৃতিটা পরিবর্তন করতে হবে। সেটি পরিবর্তনের জন্য আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।

এদিকে, সংঘবদ্ধ একাধিক অসাধু চক্র দুর্নীতি দমন কমিশনের নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছে। চক্রের সদস্যরা নিজেদের দুদক কর্মকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করে বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, ব্যাংক-বীমা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কমর্রত ব্যক্তিসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিতদের কাছ থেকে অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিচ্ছে। কমিশনের নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিটের তৎপরতায় বেরিয়ে এসেছে এ ধরনের চাঁদাবাজির ঘটনা।

টেলিফোনে অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত-সংক্রান্ত কোনো কাজ করা হয় না। লিখিত চিঠি বা নোটিশ ছাড়া কেউ যাতে সারা না দেন। দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষেত্রে কাউকে অব্যাহতি দেওয়া বা কারো বিরুদ্ধে মামলা করার ভয় দেখিয়ে ফোন করা হলে তারা যেন তাৎক্ষণিকভাবে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুদকের অনেক কার্যক্রম সাধারণ মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে এর ভেতরে যাতে ঘাপটি মেরে কোনো অসাধু চক্র না থাকে, সেদিকে নজর থাকতেই হবে। অন্যথায়, মানুষ হয়রানির স্বীকার হবেন। দুদকের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads