• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
খাদ্যে ভেজাল থামছে না

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

খাদ্যে ভেজাল থামছে না

প্রতিরোধ করা গেলে ৫০ ভাগ ক্যান্সার কমে যাবে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৬ মে ২০১৯

খাদ্যে ভেজাল থামছে না। অথচ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভেজাল খাবার ক্যান্সারের জন্য ৫০ শতাংশ দায়ী। আর বাংলাদেশে খাদ্য দূষণমুক্ত করা গেলে ক্যান্সার পঞ্চাশ ভাগ কমিয়ে আনা যেত এবং কিডনি ও লিভারের অসুখও ব্যাপকমাত্রায় কমিয়ে আনা যেত।

মৌসুম শুরুর আগেই বাজারে এসেছে কেমিক্যাল ব্যবহার করে পাকানো আম। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা অভিযান চালিয়ে সেসব ধ্বংসও করছে। ভেজাল ঠেকাতে পথে পথে ঘুরছে ভ্রাম্যমাণ আদালতও। তবে সরকারের এ ধরনের নানা উদ্যোগের পরও থামছে না খাবারে ভেজাল। সম্প্রতি বিএসটিআইয়ের এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির পণ্যে ভেজালের তথ্য। যে কারণে বাজার থেকে ৫২টি পণ্য তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

কিন্তু কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না খাবারে ভেজাল দেওয়ার প্রবণতা, যা সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে জনস্বাস্থ্যে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই খাবারে ভেজাল ঠেকানো গেলে ক্যান্সারের মতো রোগও অর্ধেক কমে যাবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, নিষিদ্ধ হলেও কার্বাইড, রাইপেন, ইথোফেনসহ অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে বছরের এই সময়ে আম, লিচু, কলাসহ অন্যান্য ফল পাকানোর কাজ করে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আড়তগুলোতে এসব রাসায়নিক ব্যবহার হচ্ছে দেদার। এসব রাসায়নিক দিয়ে ফলের গায়ে স্প্রে করার কারণে অপরিপক্ব ফল হলুদ বর্ণ পায় এবং পেকে যায়।

আবার অপরিপক্ব লিচু বড় করার জন্য ব্যবহার করা হয় জোবাস, ম্যাগনল এবং কোরবান নামের কেমিক্যাল। গাছ থেকে ঝরে পড়া রোধ করতে ব্যবহার করা হয় সিনথেটিক পাইরয়েড। বেল্ট, রিপকট, ফ্লোরা, জিকোজেন, ডেসিস ব্যবহার করা হয় লিচুতে পোকার আক্রমণ যেন না হয় সেজন্য। আর হলুদ-মরিচ-জিরা-ধনিয়া জাতীয় গুঁড়ো মসলাতে ফাঙ্গাসের আক্রমণ ঠেকাতে ব্যবহার করা হয় বিষাক্ত রং। এসব উপাদান মানবদেহের জন্য বিপজ্জনক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে থাকে।

ভেজাল ও বিষমিশ্রিত দুধ পানে ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার বিকলসহ টাইফয়েড, ডায়রিয়া, কলেরার ঝুঁকি তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে কিডনি এবং লিভারের অকার্যকারিতার হার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ এই ভেজাল খাবার। জানতে চাইলে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘ফলে যেসব রাসায়নিক দেওয়া হয় যেমন কার্বাইড, এটা খাবারের সঙ্গে যুক্ত করার মতো কোনো রাসায়নিক নয়। ফলে এটি পুরোটাই ক্ষতিকর এবং ত্বকের অ্যালার্জি, শ্বাসের অ্যালার্জি থেকে শুরু করে খাদ্য পরিপাকতন্ত্র, লিভার, কিডনি সব অর্গানকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। পাকস্থলীতে ক্ষত তৈরি করে যাকে পেপটিক আলসার বলা হয়।’

এছাড়া ইথোফেন যদি পরিমাণমতো ব্যবহার করা যায় তাহলে কম ক্ষতিকর মন্তব্য করে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘কিন্তু আমাদের দেশে ইথোফেনের পরিমাপ করার পদ্ধতি কোনো ফলের আড়তে বা গুদামে নেই। ফলে এখানে অবিবেচকের মতো তা ব্যবহার হয়ে থাকে এবং এর প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্যে। এটি পরিপাকতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। একইসঙ্গে খোলা বাজারে হলুদ-মরিচের গুঁড়োর সঙ্গে মেশানো হয় ইটের গুঁড়ো, চকপাউডারসহ নানা জিনিস। যা কি না কোনোভাবেই খাদ্যের পর্যায়ভুক্ত না। আর এ কারণে লিভার, কিডনির কার্যকারিতা বিকল করে নানা রোগের জন্ম দেয়।’

ডা. লেলিন চৌধুরী আরো বলেন, ‘দেশে কিডনি এবং লিভারের অকার্যকারিতার হার যে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে এর অন্যতম প্রধান কারণ এই ভেজাল খাবার। আর বাংলাদেশে খাদ্যকে দূষণমুক্ত করা গেলে ক্যান্সারকে শতকরা পঞ্চাশভাগ কমিয়ে আনা যেত এবং কিডনি ও লিভারের অসুখকে ব্যাপকমাত্রায় কমিয়ে আনা যেত।’

একই কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। তিনি বলেন, ‘খাদ্যকে ভেজালমুক্ত করা গেলে ক্যান্সার কমপক্ষে অর্ধেকে নেমে আসত। একইসঙ্গে নানা ধরনের বিষাক্ত ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুত করা নিম্নমানের খাদ্যের কারণে আগামী প্রজন্ম গুরুতর অসুখের ঝুঁকি নিয়ে বড় হচ্ছে।’

আ ব ম ফারুক বলেন, ‘দীর্ঘদিন বিষাক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে গর্ভবতী মা ও তার পেটের ভ্রুণের ক্ষতি হয়। সন্তানও ক্যান্সার, কিডনিসহ মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। গর্ভবতী নারীরা জন্ম দিতে পারে বিকলাঙ্গ শিশু ও গর্ভের শিশুরও প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী দেশে দুই কোটির বেশি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত।’

তবে এসব ভেজাল খাবারে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads