• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী আজ

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী আজ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩০ মে ২০১৯

আজ ৩০ মে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৩৮তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল বিপথগামী সৈনিকের হাতে তিনি নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর।

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। 

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক। তার ঘটনাবহুল কর্মময় জীবন বাংলাদেশের মানুষের হূদয়ে চিরস্থায়ী আসন করে নিয়েছে। নানা কারণে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের অংশ। তিনি ছিলেন একজন পেশাদার সৈনিক। মাত্র ৬ বছর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তার ওপর মানুষের আস্থায় কোনো চিড় ধরেনি।

জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলী থানার বাগবাড়িতে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মনসুর রহমান কলকাতায় কেমিস্ট হিসেবে সরকারি চাকরি করতেন। শৈশব ও কৈশোরের একটি সময় গ্রামে কাটিয়ে পিতার সঙ্গে কলকাতায় এবং দেশ বিভাগের পর করাচিতে চলে যান জিয়াউর রহমান। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুলে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে তিনি কমিশন লাভ করেন। সামরিকজীবনে কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যেও তিনি একের পর এক কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তার কোম্পানি যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি খেতাব লাভ করে। ব্যক্তিগত বীরত্বের জন্য তিনি নিজেও একটি পিস্তল উপহার পান। সৈনিকজীবনে তিনি যেমন চরম পেশাদারিত্ব দেখিয়েছেন ঠিক জাতীয় সব সংকটকালেও শক্ত হাতে হাল ধরেছেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে তিনি তার পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে বিদ্রোহ করেন এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরে ২৭ মার্চ তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ হয়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। বিশ্বসম্প্রদায়কে বাংলাদেশের মানুষের এ ন্যায়সংগত সংগ্রামে সমর্থনের আবেদন জানান। নয় মাসের মুক্তিসংগ্রামে তিনি একটি সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে সমরনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে তিনি বীরোত্তম খেতাব লাভ করেন।

১৯৭৫ সালে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই বছরেরই ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানে খন্দকার মোশতাক আহমদ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করা হয়। জাতির ভাগ্যাকাশে তখন এক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল। বিশৃঙ্খলার মধ্যে আধিপত্যবাদের শ্যেন দৃষ্টিতে উৎকণ্ঠিত ছিল সারা জাতি।  ইতিহাসের সেই বিশেষ ক্ষণে সিপাহি-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন এবং নেতৃত্বের হাল ধরেন।

এরপর থেকে জিয়াউর রহমানকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি শুধুই এগিয়ে গেছেন। ব্যক্তিগত সততা, পরিশ্রমপ্রিয়তা, কর্তব্যনিষ্ঠা, দৃঢ় নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা, নির্লোভ, নির্মোহ, গভীর দেশপ্রেম প্রভৃতি গুণাবলি দিয়ে তিনি জাতির মধ্যে নতুন করে জাগরণের সৃষ্টি করেন। প্রতিদিন সারাদেশ চষে বেড়াতেন তিনি। তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল তিনি বাংলাদেশের মানুষের উপযোগী একটি স্বতন্ত্র জাতীয়তাবাদী আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটান। দেশে সমন্বয়ের রাজনীতি চালু করে সবাইকে এক কাতারে নিয়ে আসেন তিনি। তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপিতে একদিকে যেমন চরম বামপন্থিরা স্থান পায় তেমনি চরম ডানপন্থিরাও জায়গা করে নেয়। একটি উদার ও মধ্যপন্থি দল হিসেবে বিএনপিকে গড়ে তোলেন তিনি, যা বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় সবচেয়ে প্রয়োজন ছিল। এ ছাড়াও তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন, বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা ফিরিয়ে দেন। নিজে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা হলেও তিনি এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রাখেন। জিয়াউর রহমান বিভক্তির রাজনীতি দূর করে ঐক্যের রাজনীতির ডাক দেন। রাজনীতিবিদদের তিনি জনগণের দোরগোড়ায় যেতে বাধ্য করেন। স্বজনপ্রীতি, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনসহ নানান অপকর্মে জাতির যখন ত্রাহি অবস্থা ঠিক তখনই জিয়াউর রহমান শক্ত হাতে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। তিনি সমগ্র জাতির মধ্যে এক নব জাগরণের সূচনা করেন। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস জোগান তিনি। জিয়ার জীবদ্দশায় কেউ কোনো অভিযোগ তার বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে পারেননি। সাদামাটা জীবন যাপনের এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ কেন সমসাময়িক রাজনীতিবিদদের ইতিহাসে খুব বেশি নেই। সময় ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে তিনি নেতৃত্বে আসেন। কাউকে উৎখাত কিংবা উচ্ছেদ করে তিনি আসেননি। এখানেই জিয়াউর রহমান ও অন্যদের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য। তিনি বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। একটি বহুমাত্রিক সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তিনি সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে তা বাস্তবায়নের আগেই ঘাতকের বুলেটে প্রাণ হারান।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী এবারে ভিন্ন পরিবেশে পালিত হচ্ছে। তার সহধর্মিণী খালেদা জিয়া কারাগারে। দলের বহু নেতাকর্মীও বর্তমানে কারাগারে। আলোচিত ১/১১’র পর থেকেই বিএনপি কঠিন সময় পার করছে। এতকিছু সত্ত্বেও জিয়াউর রহমান আজো তার অমর কীর্তিতে বাংলাদেশের ইসলামী মূল্যবোধ ও জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী কোটি কোটি মানুষের হূদয়ে স্থান করে আছেন। তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ মিলেছিল ঢাকায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত স্মরণকালের নামাজে জানাজায়। সেদিন পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছিল ‘একটি লাশের পাশে সমগ্র বাংলাদেশ।’ জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিকে এদেশের মানুষ ভালোবাসে সে কারণেই।

কর্মসূচি : শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর শেরেবাংলানগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads