• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মন্ত্রণালয়ের সাড়া দেয়নি ৪৩ হজ এজেন্সি

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

মন্ত্রণালয়ের সাড়া দেয়নি ৪৩ হজ এজেন্সি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩১ মে ২০১৯

পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব যাওয়ার জন্য রাজধানীসহ সারা দেশের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সেলস কাউন্টার থেকে প্রায় ৩২ হাজার হজ ফ্লাইটের টিকেট বিক্রি হয়েছে। মোট বিক্রীত টিকেটের মধ্যে রাজধানীতে ২৬ হাজার ১৭৫টি, চট্টগ্রামে ৪ হাজার ২০৩টি, সিলেটে ১ হাজার ৪৪২টি ও কক্সবাজারে ৭৯টিসহ মোট ৩১ হাজার ৮৮৯টি টিকেট বিক্রি হয়।

তবে টিকেট বিক্রির পরিমাণ প্রায় ৩২ হাজার হলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের টিকেটের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার প্রায় ৭ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ৪২ হাজার ২৭৮টি পে-অর্ডার কেটেছে বিভিন্ন এজেন্সি।

ধর্ম মন্ত্রণালয় ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের বিষয়ে কী করা হয়েছে এবং কী কী করণীয়; অর্থাৎ তাদের হজ পালনে সামগ্রিক চিত্র জানতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ডাকে সাড়া দেয়নি ৪৩ হজ এজেন্সি। গত মঙ্গলবার বায়তুল মোকাররমের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে এসব এজেন্সির মালিক ও মোনাজ্জেমদের সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও তারা উপস্থিত হননি। শুধু তাই নয়, কী কারণে সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হননি তারা সে সম্পর্কে মন্ত্রণালয়কে কিছু জানানোও হয়নি। এ কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রত্যেক এজেন্সির কাছে হজ কার্যক্রম সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে।

সূত্র জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের প্রায় ৩২ হাজার টিকেট বিক্রি হলেও এখন পর্যন্ত সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনসের কোনো কনফার্ম টিকেট বিক্রি হয়নি। তবে সৌদি এয়ারলাইনসের জন্য ১৬ হাজার ৩৬১টি পে-অর্ডার কেটেছে একাধিক হজ এজেন্সি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধর্ম মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা করে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে কনফার্ম টিকেট বিক্রি শুরু হবে।

চলতি বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ হজযাত্রী হজে যাবেন। তার মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৭ হাজার ১৯৮ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ১ লাখ ২০ হাজার হজযাত্রী।

মোট হজযাত্রীর মধ্যে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস শতকরা ৫০ ভাগ ও অবশিষ্ট ৫০ ভাগ সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস পরিবহন করবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছর সুষ্ঠুভাবে হজ সম্পাদনের লক্ষ্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও ধর্ম সচিব আনিছুর রহমানের নির্দেশনায় এবং হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে হজ-সম্পর্কিত সব প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

জানা গেছে, গত বছর পর্যন্ত হজের বিমান টিকেট কতিপয় নির্দিষ্ট এজেন্সির কাছে থাকায় টিকেটপ্রাপ্তি নিয়ে ঝামেলা হতো। এজেন্সিগুলো টিকেটের স্বল্পতা দেখিয়ে একতরফা ব্যবসা করত। সম্প্রতি সচিবালয়ে বিমানমন্ত্রী ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে হজের অগ্রগতি সম্পর্কিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদি এয়ারলাইনস বিমান টিকেট নির্দিষ্ট কোনো ট্রাভেল এজেন্টের কাছে বিক্রি না করে হজ এজেন্সিগুলোর কাছে সরাসরি বিক্রি করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিভিন্ন এজেন্সির হজযাত্রীদের হজ ভিসার জন্য আশকোনা হজ অফিসে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার আগে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিটি হজযাত্রীর বিমান টিকেট কাটতে হবে। অন্যথায় ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা নেওয়া হবে না অর্থাৎ হজ ভিসা হবে না। ১৬ জুনের মধ্যে সব এজেন্সিকে ক্রয় করা টিকেটের কপিসহ ভিসার জন্য হজ ক্যাম্পে পাসপোর্ট জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

হাবের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, অনেক এজেন্সিই এখন বাড়ি ভাড়া করতে সৌদি আরব রয়েছে। ফলে টিকেট বিক্রিতে এখনো গতি নেই। তবে নির্ধারিত ১৬ জুনের আগেই টিকেট বিক্রি হবে বলে মনে করেন তিনি।

অন্যদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ হজ ম্যানেজমেন্ট পোর্টালে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট হজযাত্রীর নির্ধারিত কোটার মধ্যে সরকারি হজযাত্রীর কোটা ৬ হাজার ৮১৬ জন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধিত হয়েছে ৬ হাজার ৪৯২ জন (প্যাকেজ-১-এ ২ হাজার ২৬৪ জন ও প্যাকেজ-২-এ ৪ হাজার ২২৮ জন)। এসব হজযাত্রীর মধ্যে ৬ হাজার ২২০ জনের পাসপোর্ট জমা হয়েছে। তার মধ্যে প্যাকেজ-১-এ ২ হাজার ১১৭ জন ও প্যাকেজ-২-এ ৪ হাজার ২২৮ জন। সরকারি হজযাত্রীর পিলগ্রিম আইডি প্রদান করা হয়েছে ৬ হাজার ২৩৭ জনের। সৌদি ই-হজ সিস্টেমে ৪ হাজার ৬২০ জনের পাসপোর্ট তালিকাভুক্ত হয়েছে।

অবশ্য বেসরকারি ব্যবস্থানায় কোটা ১ লাখ ২০ হাজার। মোট ৫৯৮টি হজ এজেন্সির মাধ্যমে এবারের হজ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন হজ এজেন্সি কর্তৃক ১ লাখ ১৩ হাজার ৭৮৯ জনের পিলগ্রিম আইডি প্রদান করা হয়েছে। বেসরকারি গাইড এন্ট্রি হয়েছে ৩ হাজার ৩২৩ জনের।

গত বুধবার পর্যন্ত সৌদি ই-হজ সিস্টেমে ৮ হাজার ১০০ জনের পাসপোর্ট তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। মোট ৩৪৬টি এজেন্সি ৫৫ হাজার ৭৬০ জন হজযাত্রীর টিকেট ক্রয়ের জন্য পে-অর্ডার ইস্যু করেছে।

৪৩ হজ এজেন্সি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ডাকে সাড়া দেয়নি : ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ডাকে সাড়া দেয়নি ৪৩ হজ এজেন্সি। গত মঙ্গলবার বায়তুল মোকাররমের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে এসব এজেন্সির মালিক ও মোনাজ্জেমদের সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও তারা উপস্থিত হননি। শুধু তাই নয়, কী কারণে সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হননি সে সম্পর্কে মন্ত্রণালয়কে কিছু জানানোও হয়নি।

এ কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রত্যেক এজেন্সির কাছে হজ কার্যক্রম সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব এস এম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে।

সাক্ষাৎকারে অনুপস্থিত হজ এজেন্সিগুলো হলো- আল হারামাইন ট্রাভেলস, চিটাগাং এয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ইস্টার্ন ট্রাভেলস, ইন্টার গালফ ট্রাভেলস লিমিটেড, জনতা ট্রাভেলস লিমিটেড, জোনাকি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড, ওভারসিজ লিনকস লিমিটেড, প্যান ব্রাইট ট্রাভেলস প্রাইভেট লিমিটেড, রিয়েল ইন্টারন্যাশনাল, রিমাল ট্রাভেলস, রয়েল এয়ার সার্ভিসেস, সানশাইন এভিয়েশন সার্ভিসেস লিমিটেড, ইউরো বেঙ্গল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম, বদরপুর ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস, হলিউড ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস প্রাইভেট লিমিটেড, চট্টগ্রাম ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল, টপ মোস্ট ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিকেশন, এয়ার কানেকশন ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস, এ লাইট ট্রাভেলস, সেন্টার পয়েন্ট ট্রাভেলস লিমিটেড, দেশ ও বিদেশ, আল বোরাক ইন্টারন্যাশনাল আল কাবা ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, আল করিম ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস, বাংলা এয়ার সার্ভিসেস, বাংলাদেশ ডায়মন্ড হজ গ্রুপ, ব্রাইটন এয়ার সার্ভিসেস, ব্রডওয়ে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, কাপলান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস, দারুল ঈমান ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস, ঢাকা শাহজালাল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস, ফারিহা ওভারসিজ, ফ্রিডম হজ গ্রুপ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, গ্রামীণ হলিডেজ, গালফ এয়ার ট্রাভেল সার্ভিসেস, হামিম ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস, হামজা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, হিমেল ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, ইকরা ওভারসিজ, ইসলামিয়া এয়ার সার্ভিসেস ও জাবালে নূর ইন্টারন্যাশনাল।

ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে তা হলো- এজেন্সির লাইসেন্স নম্বর, এজেন্সির নাম, সৌদি হজের কোটা কতজনের পাসপোর্ট হাতে পেয়েছে, পে-অর্ডার করেছে কি না, কতজনের টিকেট হয়েছে, কোন এয়ারলাইনসের পিএনআর কী, আইবিএন-এ কতজনের টাকা পাঠানো হয়েছে, চুক্তি হয়েছে কি না, হলে কত নম্বর, না হলে কবে করবে, মক্কার বাড়ি কতজনের কোন কোন তারিখের মধ্যে চূড়ান্ত হবে, মক্কা কোথায় কতজন থাকবে, আজিজিয়া কতজন, অন্য জায়গায় কতজন, মদিনার বাড়ি কতজনের কোন কোন তারিখের মধ্যে চূড়ান্ত হবে, কাউন্সিলর হজের নিকট বাড়ির ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে কি না, কত তারিখের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসে জমা দেবে।

উল্লেখ্য, আসন্ন হজে যথাসময়ে হজযাত্রীদের সৌদি আরব পাঠানোর সুবিধার্থে দুই শতাধিক হজ এজেন্সির মালিক বা মোনাজ্জেমের সঙ্গে বৈঠক ও সাক্ষাৎকার গ্রহণ মঙ্গলবার থেকে শুরু করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ মনিটরিং টিম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads