• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে জঙ্গিরা

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে জঙ্গিরা

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ৩১ মে ২০১৯

ছোটখাটো হামলা আর অনলাইনে হুমকির মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে জঙ্গিরা। অব্যাহত পুলিশি অভিযানের মুখে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে তারা এ অপকৌশল বেছে নিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। জঙ্গিরা গত ৩ বছরে আত্মগোপনে থেকে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন এ পথ বেছে নিয়েছে।

সূত্র জানায়, বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জেলের ভেতর থেকে পাঠানো একটি চিঠি গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ে। ওই চিঠিতে বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশের একাধিক স্থানে বড় ধরনের নাশকতার কথা লেখা ছিল। কিন্তু চিঠি জঙ্গিদের হাতে পৌঁছার আগেই গোয়েন্দাদের হস্তগত হওয়ায় তাদের সেই মিশন ভেস্তে যায়। এছাড়া আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস, নব্য জেএমবির প্রধান এবং নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে আবু মোহাম্মদ আল বাঙালি নামে একজনের নাম প্রকাশ করে। আবু আল বাঙালি গত ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনে জঙ্গি হামলার হুমকি দেয়। এদিন তারা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হামলার কথা জানান দেয়। পাশপাশি তারা বিক্ষিপ্তভাবে আস্তানা গেড়ে সংগঠিত হওয়ারও চেষ্টা করছিল। মূলত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গিরা এ বছর মাথাচাড়া দিতে পারেনি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন বাহিনীর তৎপরতার কারণে হামলা বা ঘাঁটি গাড়ার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় জঙ্গিরা এখন কোণঠাসা। তবে তারা বসে নেই, মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬৫১টি মামলায় ২ হাজার ৬৩১ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে ৫০৮টি মামলায় ২ হাজার ৭৫২ জন জঙ্গিকে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করা হয়েছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি তামিম চৌধুরী, মারজান তানভীর কাদেরী, মুসা, মেজর জাহিদুল ইসলাম মুরাদসহ কমপক্ষে ৬০ জঙ্গি নিহত হয়।

এ ব্যাপারে সিআইডি পুলিশপ্রধান মো. শফিকুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে হামলার মাধ্যমে জঙ্গিরা সফল হয়েছিল। এরপরই পাল্টা জবাব দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই ধারাবাহিক অভিযানের কারণে জঙ্গিরা সফল আক্রমণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, হলি আর্টিজানের হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে গতি অনেক বেড়ে যায়। এ কারণে জঙ্গিরা সংঘবদ্ধ হতে পারেনি। এতে জঙ্গি হামলার ঝুঁকির মাত্রা অনেকটা কমে এসেছে। তবে ঝুঁকি একেবারে নেই সেটাও বলা যাবে না। তারা সক্ষমতা হারিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে এসেছে এটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি জঙ্গিরা একজন বেঁচে থাকতেও জঙ্গিবাদ নির্মূল হয়ে গেছে এটা বলা যাবে না। কারণ হচ্ছে ওরা এতটাই উন্মাদ হয়ে যায় যে ওরা জঙ্গিবাদকে জিহাদ মনে করে, চেতনা মনে করে। মাস্টারমাইন্ড জঙ্গিরা অপেক্ষাকৃত কিশোর ও তরুণ জঙ্গিদের দলে ভিড়িয়ে ওদের ব্রেনওয়াশ করে দেয়। সুতরাং তারা এই পথে মরলে নিজেদের শহীদ এবং সঙ্গে সঙ্গে বেহেশতে যাবে বলে বিশ্বাস করে। এই যে বিশ্বাস, এই বিশ্বাস তো শুধু অভিযান চালিয়ে শেষ করা যাবে না। এ জন্য প্রয়োজন ওরিয়েন্টেশন, যা করতে বাংলাদেশকে নতুন করে ভাবতে হবে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সুবিধা না করতে পেরে জঙ্গিরা এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর বোমা ছুড়ছে। বিশেষ বিশেষ দিনে এবং বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির ওপর হামলার হুমকি দিচ্ছে। শুধু নিজেদের অস্তিত্বের জন্য এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তারা এ অপকৌশল বেছে নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads