• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ঈদকে কেন্দ্র করে হামলার আশঙ্কা

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

ঈদকে কেন্দ্র করে হামলার আশঙ্কা

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ০২ জুন ২০১৯

জঙ্গিরা বসে নেই। নব্য জেএমবি ও আনসার আল ইসলামের ব্যানারে তারা আত্মগোপনে থেকেও সক্রিয় হচ্ছে। সংগঠিত হয়ে ঈদের পর বা ঈদের ছুটিতে নাশকতামূলক তৎপরতায় লিপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস’র মদদে বাংলাদেশে জঙ্গিরা ঘাপটি মেরে থেকেও কৌশলে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। জঙ্গিদের সম্ভাব্য হামলা ও নাশকতা ঠোকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরাও বসে নেই। তারাও জঙ্গি নিয়ন্ত্রণে যারপরনাই চেষ্টা করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মুঠোফেনে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার হুমকি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি বলেন, জনগণ আমাদের পাশে আছে। জনগণের সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যে আমরা সফলতার সঙ্গে জঙ্গিদের বিতাড়িত করেছি। কিছু জঙ্গি ঘাপটি মেরে আছে। তাদের ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীচক্র পুনরায় বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না। আমাদের গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সজাগ আছে। তারা জঙ্গিদের নাশকতা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তিনি আরো বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সফল অভিযানে জঙ্গিরা বাংলাদেশে মুখ থুবড়ে পড়েছে। তারা এতটাই দুর্বল যে বাংলাদেশে বড় ধরনের হামলা চালাতে সক্ষম নয়। ফলে তারা ছোটখাটো ঘটনা ঘটিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) স্বঘোষিত খিলাফত রাষ্ট্রটির পতন ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার বিমান হামলা, তাদের সমর্থনপুষ্ট সিরিয়ার সরকারি ও বিদ্রোহী অন্যান্য গোষ্ঠীর বহুমুখী আক্রমণে আইএস মধ্যপ্রাচ্যে পর্যুদস্ত হয়েছে। তাদের অনেক যোদ্ধা মারা পড়েছে, জীবিতরা ছত্রভঙ্গ। আইএস ২০১৪ সালের জুনে তাদের কথিত খিলাফতের ঘোষণা দেয়। সিরিয়ার রাকাকে রাজধানী ঘোষণা করে। পার্শ্ববর্তী ইরাকের মসুল শহরকে ঘোষণা করে দ্বিতীয় রাজধানী। অতি দ্রুত তারা সিরিয়া ও ইরাক দখল করে এবং একটা সময়ে এ দুই দেশের বিরাট অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, যেখানে এক কোটি লোকের বাস। তারা নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোতে ব্যাপক নৃশংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। বহু মানুষের শিরশ্ছেদ ঘটায়। তবে তিন বছরের মাথায় আইএসের পতন শুরু হয়। ২০১৭ সালের জুলাইতে ইরাকি সরকারি বাহিনী মসুল শহর আইএসের কাছ থেকে পুনর্দখল করে। সিরিয়ার রাকা আইএসমুক্ত হয় অক্টোবরে। নভেম্বরে ইরান ঘোষণা করে, তাদের দেশে আইএস শেষ। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ইরাকি সরকারি বাহিনী আইএসের পরাজয় উদযাপন করে। তবে সিরিয়া ও ইরাকে পতন হলেও বিশ্বব্যাপী আইএসের হামলার ঝুঁকি কমেনি। বিশ্বের ১১০টি দেশের যে জঙ্গিরা আইএসে যোগ দিতে সিরিয়া ও ইরাকে গিয়েছিল, তারা নিজ নিজ দেশে ফিরে গিয়ে হামলা চালায়। একজনের দ্বারা (‘লোন উলফ’) হামলার ঘটনা বাড়তে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, সুইডেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, মিসর, ইরানসহ বিভিন্ন দেশে তাদের হামলা হয়েছে। ইন্টারনেটে আইএসের উগ্র প্রচারণা থামছে না। বর্তমানে তারা বাংলাদেশ ও ভারতকে টার্গেট করে ইন্টারনেটে হুমকি অব্যাহত রেখেছে। তারা বাংলাদেশে আবু মোহাম্মদ আল বাঙালি নামে একজনকে প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা আবু মোহাম্মদ আল বাঙালির বাহ্যিক কোনো উপস্থিতি বা অস্তিত্ব টের পায়নি। গোয়েন্দারা ধারণা করছে— এটা কোনো ছদ্মনাম হতে পারে। যাই হোক, আইএস ঘোষিত প্রধানকে গ্রেফতার করার জন্য ইতোমধ্যে গোয়েন্দারা নিজেদের নেটওয়ার্ক আরো বিস্তৃত করেছে। গোয়েন্দাদের দাবি, জঙ্গিরা ঘাপটি মেরে আছে, তারা সক্রিয় বা নাশকতামূলত তৎপরতায় লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করলে ফাঁদে আটকা পড়ে যাবে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা ঈদের ছুটির পর গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থাপনায় বা জনাকীর্ণ স্থানে তারা হামলার পরিকল্পনা করতে পারে। এমনকি ঈদের ছুটিতে ফাঁকা পেয়ে নাশকতায় লিপ্ত হতে পারে। চোরাগোপ্তা হামলা চালাতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে।

এ ব্যাপারে অ্যান্টিটেরোরিজম ইউনিটের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মনিরুজ্জামান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গুলশানে হলি আর্টিজানের ঘটনার পর ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও জঙ্গিদের তেমন কোনো বড় আক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। বাংলাদেশে জঙ্গিরা এখন নিঃশেষের পর্যায়ে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তারা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে আছে। বাংলাদেশেও এই মুহূর্তে জঙ্গিরা কোণঠাসা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতার কারণে অনেক ঘটনা ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আশঙ্কার কথা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছি না। কারণ যেহেতু হুমকি আছে সেহেতু আমাদেরও তাদের মোকাবেলা করার প্রস্তুতি আছে। তিনি বলেন, জঙ্গিরা বাংলাদেশে আর সুবিধা করতে পারবে না। কারণ কারো না কারো সহায়তা ছাড়া জঙ্গিরা নাশকতায় লিপ্ত হতে পারে না। এই সহায়তা এখন কোথাও পাচ্ছে না। জনগণ তাদের উপস্থিতি টের পাওয়ার মাত্র প্রশাসনকে জানিয়ে দিচ্ছে। এমনকি যে পরিবারের সন্তানটি জঙ্গি হয় সেই পরিবারও জঙ্গি সন্তানের পাশে না দাঁড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, সম্ভাব্য জঙ্গি ডেরাগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে। সম্ভাব্য জঙ্গি অবস্থানে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। একই সঙ্গে সারা দেশে পুলিশ সদস্যদের সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads