• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ডুবতে বসেছে মিল্ক ভিটা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

ডুবতে বসেছে মিল্ক ভিটা

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১৯ জুন ২০১৯

দেশে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যে আস্থার নাম বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড মিল্ক ভিটা। কিন্তু অনিয়ম, দুর্নীতি আর আমলতান্ত্রিক জটিলতায় ডুবতে বসেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে পল্লী উন্নয়ন ও সবমায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলছেন, মিল্ক ভিটার পণ্যে এখনো দেশের মানুষের আস্থা বেশি। প্রতিষ্ঠানটি যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, মিল্ক ভিটা।

সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা আর অনিয়মের কারণে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে মিল্ক ভিটা। একই সঙ্গে রয়েছে গতিশীল নেতৃত্বের প্রকট সংকট। দুধের অভাবে স্বাধীনতার পর শিশুদের মর্মান্তিক অবস্থা তৈরি হয়। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য বঙ্গবন্ধু দ্রুত সমবায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

জানা যায়, মিল্ক ভিটার আওতায় রয়েছে মোট তিন হাজারের কিছু বেশি প্রাথমিক সমবায় সমিতি। দুই হাজার ২০০-এর কাছাকাছি নিবন্ধিত কেন্দ্রীয় সমিতির ইউনিয়ন। এগুলোর সদস্য সংখ্যা এক লাখ ২৩ হাজার জন। মিল্ক ভিটা ৪৩টি চালু কারখানার মাধ্যমে দেশের ৩২টি জেলা ও ১৩৭টি উপজেলায় সমবায়ী কৃষকদের কাছ থেকে বছরে ৯ কোটি লিটারেরও বেশি

দুধ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করে। সংগ্রহ করা দুধ থেকে পাস্তুরিত তরল দুধ, মাখন, ঘি, ক্রিম, মিষ্টি দই, টক দই, লাবাং, রসমালাই, চকোলেট, ফ্লেভারড মিল্ক, আইসক্রিমসহ ১৫-১৭টি দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদিত হয়ে মিল্ক ভিটার নামে দেশব্যাপী বাজারজাত হয়। তবে বাজারজাত প্রক্রিয়ায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পেরে উঠছে না মিল্ক ভিটা।

জানতে চাইলে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বাংলাদেশের খবরকে গতকাল তার দপ্তরে বলেন, মিল্ক ভিটার ভেতরের সমস্যায় আমি এখনো যেতে পারিনি। তবে বাহ্যিকভাবে দৃশ্যমান সমস্যা হচ্ছে, এর ভেতরে জনবল অনেক বেশি। এর উৎপাদন সময়ের সঙ্গে না বেড়ে কমে গেছে। উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও সেটি হচ্ছে না। আর একটি বড় সমস্যা হচ্ছে, বিপণন প্রক্রিয়া। এখনো আমরা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পিছিয়ে। আমরা এসব বিষয় চিহ্নিত করে কাজ শুরু করেছি। হয়তো সময় লাগবে। আশা করি, মিল্ক ভিটা আগামীতে শক্ত অবস্থান পাবে।

তিনি বলেন, গ্রাহকের আস্থা আছে মিল্ক ভিটার পণ্যে। এটি আমাদের ব্যবহার করতে হবে। আমাদের প্রস্তাব ছিল, আমদানি করা দুধে শুল্ক বাড়ানোর। সেটি নতুন বাজেটে করা হয়েছে। যদিও অনেকে বলে, এটি শিশুদের খাবার। কিন্তু আমরা শিশুদের খাবারে শুল্ক বাড়াইনি। আমদানি করা নিম্নমানের দুধ পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে আসছে। সেগুলো যাতে দেশে আসতে না পারে, তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

দেশের দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রাসীভাবে বাজার দখলের চেষ্টা করলেও অনেক গ্রাহকের আস্থা কেবল মিল্ক ভিটায়। তবে আস্তে আস্তে দেশে দুধের বাজার হারাতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো মিল্ক ভিটার ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে উঠেছে। এর সঙ্গে মিল্ক ভিটার অভ্যন্তরীণ সংকট সম্ভাবনাকে আরো দুর্বল করে দিচ্ছে।

জানা গেছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় কোনো ষড়যন্ত্রের মুখে যেন মিল্ক ভিটা মুখ থুবড়ে না পড়ে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যমান জনবলের দক্ষতা ঘাটতি রয়েছে। অনেক পুরনো কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, যারা পেশাগতভাবে দক্ষ নন। এছাড়া অতিরিক্ত জনবল থাকায় এক ধরনের বিশৃঙ্খলা চলছে। তবে সরকার এসব সমস্যার সমাধান খুঁজছে। শিগগিরই হয়তো মিল্ক ভিটায় শুদ্ধি অভিযান শুরু হবে। যারা মিল্ক ভিটায় চাকরি করছেন তারা এই প্রতিষ্ঠানের লাভ-ক্ষতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো গুরুত্ব না দেওয়ায় বর্তমানে লাভজনক হলেও মিল্ক ভিটার যে অবস্থানে থাকার কথা জাতীয় পর্যায়ে সে অবস্থানে নেই। অথচ প্রতিষ্ঠানটি যে পরিমাণে সরকারি সহায়তা পেয়ে থাকে সে অনুযায়ী জাতীয় চাহিদা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। মিল্ক ভিটার একটি সূত্র জানায়, অব্যবস্থাপনার কারণে খামারিরাও প্রতিষ্ঠানটিকে আর দুধ সরবরাহ করতে চাচ্ছেন না। এছাড়া দুধের দাম নিয়ে অসাধুচক্র নানা রকম ফন্দিফিকির করে থাকে। এতে খামারিরা প্রতারিত হচ্ছেন। আবার মিল্ক ভিটা খামারিদের উৎপাদিত দুধ লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে অনেক সময় বাধ্য হচ্ছে। অব্যাহত লোকসানের মুখে কৃষক ও খামারিরা এ পেশাকে অলাভজনক মনে করতে শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে মিল্ক ভিটা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা ছড়িয়ে পড়ছে। এই নেতিবাচক ধারণা থেকে এই প্রতিষ্ঠানকে ইতিবাচক জায়গায় নিয়ে আসা সম্ভব। সেটি নিয়ে আসতে হবে। বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল এই মিল্ক ভিটা। যেসব বাধা বা জটিলতার কারণে মিল্ক ভিটা এগোতে পারছে না সেসব সমস্যা অপসারণ করতে হবে। মিল্ক ভিটায় একসময় দুই লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হতো। এখন সেটি ৯০ হাজার লিটার নেমে এসেছে। অথচ দেশে দুধের চাহিদা বেড়েছে। দৈনন্দিন পুষ্টি বিবেচনায় মানুষ এখন খাবারের তালিকায় দুধ কিংবা দুগ্ধজাত পণ্য রাখছে। সেখানে মিল্ক ভিটার উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ৩ লাখ লিটার উৎপাদন করা উচিত ছিল। আমারা সেটি করতে পারিনি। এখানে দুর্নীতির চক্র ভাঙতে হবে। প্রচারের অভাব ও দুর্বল মার্কেটিংয়ের কারণে মিল্ক ভিটা এগোতে পারছে না। সংকট চিহ্নিত করে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছি। তিনি আমাকে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads