• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
মারাত্মক ঝুঁকিতে তিস্তা ব্যারাজ

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

অটোমেশন সিস্টেম বিকল

মারাত্মক ঝুঁকিতে তিস্তা ব্যারাজ

  • কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৪ জুন ২০১৯

তিস্তা ব্যারাজের স্বয়ংক্রিয় পরিচালন পদ্ধতি (অটোমেশন অপারেটিং সিস্টেম) বিকল হয়ে পড়ায় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে ব্যারাজ ও এর আনুষঙ্গিক স্থাপনা। একই সঙ্গে সম্ভাব্য ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ব্যারাজ প্রকল্প এলাকার হাজারো মানুষ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এক বছর ধরে ব্যারাজটির স্বয়ংক্রিয় পরিচালনা পদ্ধতি বিকল থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ছিল নীরব। চলতি বর্ষা মৌসুমে পানি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে ব্যারাজটি। এতে হুমকির মুখে পড়বে ব্যারাজ পার্শ্ববর্তী হাজারো মানুষের জীবন ও সম্পদ।

এদিকে গত বছর ব্যারাজের অপারেশনাল সিস্টেম আধুনিকায়নের নামে ছয় কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ আছে। বিষয়টি অনুসন্ধানে কন্ট্রোল টাওয়ারে গিয়ে পাওয়া যায়নি অটোমেশন সিস্টেমের কোনো যন্ত্রপাতি। প্রথমে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পরে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী দাবি করেন, আধুনিকায়ন হলেও লোকবল না থাকায় ম্যানুয়াল সিস্টেমে ব্যারাজ অপারেট করা হচ্ছে।

ব্যারাজের যান্ত্রিক ও পানি ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, ব্যারাজের পানি নিঃসরণ ক্ষমতা সাড়ে চার লাখ কিউসেক। এর বাড়তি পানি বা ঢল এলে ব্যারাজের পাশে ফ্লাড বাইপাসের ফিউজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গিয়ে বিকল্প পথে ঘুরে পড়ার কথা। কিন্তু ২০১৭ সালের তীব্র ঢলে বাড়তি চাপেও ফ্লাড ফিউজ ওপেন না হওয়ায় চরম ঝুঁকিতে পড়ে ব্যারাজটি। জেনারেটর দিয়ে টুলি পদ্ধতিতে গেটগুলো ওপরে তোলা ও নামানো হচ্ছে।

ব্যারাজের পানি ব্যবস্থাপনা শাখা আরো জানায়, প্রতিবছর তিস্তা নদী প্রায় ৫ কোটি মেট্রিক টন পলি বহন করে। এই পলি ব্যারাজের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ডালিয়া থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে বিশাল বিশাল চর ও দ্বীপচর।

বর্তমানে ব্যারাজটির ৫২টি গেট ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই খুলে রাখা হয়েছে। এতে ব্যারাজে পলির আধার ও প্রধান সেচ খাল হুমকির মুখে পড়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থের বরাদ্দ ও সুষ্ঠু তদারকির অভাবে তিস্তা ব্যারাজটির সিলট্রাফে অর্থাৎ পলির আধার থেকে নিয়মিত পলি উত্তোলন করা হচ্ছে না। ফলে প্রতিবছর ২০ লাখ মেট্রিক টন পলি জমা হচ্ছে এই আধারে। একই সঙ্গে পলির আধার থেকে ওই পলি ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রধান সেচ খালে গিয়ে পড়ছে। এতে প্রধান খালের পানির স্তর ৩ ফিট কমে গিয়ে সঠিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রধান খালের পানির স্তর ৩ ফিটের মতো কমে গেলেও খালটি সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এতে আগামী ১০ বছরের মধ্যে অকার্যকর হয়ে পড়বে। এতে তিস্তা ব্যারাজের সুফল থেকে বঞ্চিত হবে কৃষকরা।

অভিন্ন নদী তিস্তার পানি নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে উজানের দেশ ভারতের বিরুদ্ধে। তীব্র খরার সময় একতরফা পানি প্রত্যাহার আর বর্ষায় ঢল সামলাতে সব বাঁধ খুলে দেয় তারা। যে বছর পানি বা ঢল বেশি নামে সে বছর দুর্দশার অন্ত থাকে না ব্যারাজের ভাটি অঞ্চল রংপুরে। এবার মৌসুমের শুরুতেই সিকিমের ভারী বর্ষণ ঢল হয়ে ধেয়ে আসছে। এলাকাবাসী জানায়, গত বছরের চেয়ে ব্যারাজের উজানে এবার পানি বেশি।

এ ব্যাপারে তিস্তা ব্যারাজের যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুজ্জোহা জানান, ব্যারাজের পানি নিষ্কাশনের জন্য ৫২টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। ব্যারাজের তেমন কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি নেই। যতটুকু ত্রুটি আছে, তা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।

তবে এ অবস্থায় ব্যারাজ ও এর সব স্থাপনা, এলাকার মানুষের প্রাণ ও সম্পদ সবকিছুই অনিরাপদ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads