• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
সুন্দরবনবিনাশী প্রকল্প বাতিলের আহ্বান জাতীয় কমিটির

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

সুন্দরবনবিনাশী প্রকল্প বাতিলের আহ্বান জাতীয় কমিটির

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ জুলাই ২০১৯

রামপালসহ সুন্দরবনবিনাশী সব প্রকল্প বাতিলসহ বনের ভেতর দিয়ে কয়লা, তেল ও ফ্লাইঅ্যাশ পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে তেল-গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

গতকাল শুক্রবার কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান। 

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৪ জুলাই বাকুতে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর অধিবেশনে বাংলাদেশ সরকারকে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আরো কয়েক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় সমীক্ষা চালানোরও কথা বলেছে তারা। এই অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে সরকারি প্রতিনিধিদল আবারো নানা ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছে, সেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যেগুলোর সবগুলোই তারা বারবার ভঙ্গ করেছে। এমন সব উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছে যেগুলো মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।

তারা বলেন, বিষাক্ত পণ্যবাহী নৌপরিবহনের ঝুঁকি থেকে সুন্দরবন রক্ষার অঙ্গীকার ও আইন থাকা সত্ত্বেও সরকার গত কয়েক বছরে এই বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফারাক্কার কারণে সৃষ্ট বৈরী প্রভাব নিরসনেও কিছু করা হয়নি। বারবার বিষাক্ত পণ্যবাহী জাহাজ ডোবার পরে স্থানীয় জনগণ এবং স্বেচ্ছাসেবীরা প্রাণান্তকর চেষ্টা করে ক্ষয়ক্ষতি সামান্য কিছু কমাতে পারলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর ভূমিকা ছিল খুবই দায়িত্বহীন। সরকার একদিকে এই নৌপথে বিষাক্ত পণ্যবাহী জাহাজ পরিবহন বন্ধ করছে না অন্যদিকে দেশ-বিদেশের ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও অচিন্তনীয় ঝুঁকি তৈরি এবং সুন্দরবনবিনাশী রামপাল প্রকল্প নিয়ে এখনো অগ্রসর হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালে ইউনেস্কো অধিবেশনে দেওয়া অঙ্গীকার ভঙ্গ করে সুন্দরবনের চারপাশে আরো দুই শতাধিক বিষাক্ত পণ্যের প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। কয়েক দিন আগে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে কয়েকটি সিমেন্ট কারখানা স্থাপনের। সুন্দরবনের কাছে বরগুনা, পায়রায় আরো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে।

জাতীয় কমিটির নেতারা আরো বলেন, সরকার দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য রামপাল প্রকল্প করছে বলে দাবি করে, এবারো ইউনেস্কো অধিবেশনে এটাই করুণভাবে উপস্থাপন করেছে যে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খুব দরকার। বাংলাদেশের পক্ষে লবিংয়ে যোগ দিয়েছে কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা, যাদের অনেকের বাংলাদেশে নদী ও বনবিনাশী বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ আছে। কিন্তু বিদ্যুতের জন্যই রামপাল, রূপপুর, মাতারবাড়ী, পায়রা, বাঁশখালী প্রকল্প করা জরুরি, তা মোটেই সত্য নয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে এর চেয়ে অনেক কম ব্যয়বহুল, পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ পথ আছে তা আমরা সরকারি মহাপরিকল্পনার বিকল্প রূপরেখায় পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছি।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইউনেস্কোর দায়িত্ব বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে সুন্দরবন রক্ষা করার। আসলে মূল দায় তো সরকারেরই থাকার কথা। দেশে গত ১০ বছর ধরে সুন্দরবিনাশী সব প্রকল্প বন্ধ করতে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ আন্দোলন করছেন, বিশেষজ্ঞরা কথা বলছেন। জনমত, বিশেষজ্ঞ মত, দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থ, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে সুন্দরবনের অতুলনীয় ভূমিকার গুরুত্ব সরকারের কাছে থাকলে সরকার অনেক আগেই এসব প্রকল্প বাদ দিয়ে সুন্দরবনকে আরো শক্তিশালী করায় মনোযোগ দিত। আমরা তাই আবারো সরকারের কাছে দাবি জানাই, ইউনেস্কোর অধিবেশনে বারবার মিথ্যার ঝুড়ি সাজানোর চেষ্টা বাদ দিয়ে রামপালসহ দেশকে অরক্ষিত করার সুন্দরবনবিনাশী সব প্রকল্প অবিলম্বে বাতিল করুন, বিশ্ববাসীর কাছে দেশকে আর কলঙ্কিত করবেন না। দেশকে মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবেন না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads