• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
তিন কোটি শিক্ষার্থী পাবে ইউনিক আইডি

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

তিন কোটি শিক্ষার্থী পাবে ইউনিক আইডি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ জুলাই ২০১৯

দেশের তিন কোটির বেশি শিক্ষার্থী ইউনিক আইডি (একক পরিচয়) পাবে। পাঁচ বছর বয়সী প্রাক-প্রাথমিক থেকে ১৭ বছর বয়সের দ্বাদশ শ্রেণির সব শিক্ষার্থী পাবে এই আইডি। যাতে ১০ বা ১৬ ডিজিটের শিক্ষার্থী শনাক্ত নম্বর থাকবে। পরবর্তীতে তা ওই শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর হয়ে যাবে। এতে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে আলাদা করে তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হবে না। ২০২০ সাল থেকে ইউনিক আইডি দেওয়া শুরু করবে সরকার।

২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সমন্বিত ও কার্যকর সিআরভিএস ব্যবস্থা গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রত্যেক নাগরিকের একটি ইউনিক আইডি তৈরি করার নির্দেশনার আট বছর পর এই প্রথম শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে ইউনিক আইডি করার উদ্যোগ নেওয়া হলো। ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস’ (সিআরভিএস) বাস্তবায়নের আলোকে এই আইডি দেবে সরকার।

সূত্রমতে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রোফাইল প্রণয়ন’ এবং শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ শীর্ষক দুটি প্রকল্পের আওতায় এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন জেনারেলের কার্যালয় ও নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনিআইডি) অণুবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারি দপ্তরের সহায়তায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ‘প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য প্রোফাইল প্রণয়ন’ প্রকল্পের আওতায় পাঁচ বছর বয়সী প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সময় থেকে ভর্তি হওয়া ১০ বছর বয়সী পঞ্চম শ্রেণির এক কোটি ৮৭ লাখ শিক্ষার্থীর সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। জন্মনিবন্ধন সনদের তথ্যসহ যাবতীয় তথ্য বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া হবে। এসব তথ্য সংগ্রহের কাজ করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি ১৬৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দিয়েছে।

এদিকে ব্যানবেইস সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত (১১ থেকে ১৭ বছর) প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে ইউনিক আইডি। সম্প্র্রতি ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ প্রকল্পের জন্য প্রায় ৩১৩ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে একনেক।

ব্যানবেইস সূত্র আরো জানায়, দেশের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বিশেষ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে আগে থেকেই সিআরভিএস কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে। সিআরভিএস ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে সিআরভিএস সংক্রান্ত স্টিয়ারিং কমিটি গঠন হয়। পরের বছর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সিআরভিএস সচিবালয় গঠন হয়। সিআরভিএস সংক্রান্ত স্টিয়ারিং কমিটির নির্দেশনায় এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের সহায়তায় ‘সিআরভিএস সচিবালয়’ সিআরভিএস বাস্তবায়নের কাজ করছে।

সামগ্রিক বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘ইউনিক আইডি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। পাঁচ বছর বয়সী প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটা ডাটাবেইসের আওতায় নেওয়া হবে। জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী শিশুর বয়স যখন পাঁচ বছর হবে তখন থেকেই একটি সিস্টেমে নেওয়া হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে এর আওতায় আনা হবে।’

অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সিআরভিএসর আলোকে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এক কোটি ৮৭ লাখ শিশুর প্রোফাইল তৈরি করা হবে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে, প্রকল্প শেষ হবে ২০২১ সালে।

‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিককেই চিহ্নিত করার মাধ্যমে ব্যক্তির জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও তথ্য নিবন্ধিত করা এবং এর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরিসংখ্যান তৈরি করার নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়াই হচ্ছে সিআরভিএস। আন্তর্জাতিকভাবে জন্ম, মৃত্যু, মৃত্যুর কারণ, বিবাহ, তালাক এবং দত্তক-এ ছয়টি বিষয়ই সিআরভিএসর অংশ হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশে সিআরভিএস এ এই ছয়টির পাশাপাশি আরো মাইগ্রেশন, এনরোলমেন্ট এবং সার্ভিস ডেলিভারি এই তিনটি বিষয় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। এটাকে আমরা বলছি সিআরভিএস প্লাস প্লাস।’

অধ্যাপক শামসুল আলম আরো বলেন, ‘এটি একটি সিটিজেন ডাটা স্টাকচার। এই ডাটা স্ট্রাকচারের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর সব তথ্য থাকবে। এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে গেলে শুধু ইউআইডি নম্বর দিলেই সব তথ্য পাওয়া যাবে। নতুন করে কোনো তথ্য প্রয়োজন হবে না। সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ইউআইডি নম্বর চেক করলেই সব তথ্য পাবে। এখানে কোনো তথ্য ভুল হওয়ার সুযোগ নেই এবং নকল করার সুযোগ থাকবে না। এই ডাটাবেইসে তার সারা জীবনের তথ্য সংযোজিত হবে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব তথ্যই থাকবে। একটি সময়ে গিয়ে দেশের সব মানুষ এই ডাটাবেইসের মধ্যে চলে আসবে। জনসংখ্যার পরিসংখ্যান করতে নতুন করে কোনো সময় ও অর্থ ব্যয় হবে না।’

তিনি জানান, এই ডাটাবেইসে শিক্ষার্থীর ফল, কোন বিষয়ে ভালো এবং তার ব্যক্তিজীবনের অনেক তথ্যই থাকবে। চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ডাটাবেইস কাজে লাগবে। শনাক্ত নম্বরটি দিলেই সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর তার তথ্য জানতে পারবে। তিনি আরো বলেন, ‘শিশুদের জন্মসনদ রয়েছে। কিন্তু যারা স্কুল-গোয়িং তাদের শনাক্তকরণ কীভাবে হবে? আর যদি ধরি জন্মসনদ রয়েছে, তাতেও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। অনেকেরই একাধিক জন্মসনদ রয়েছে। সে কারণে স্কুলগোয়িং শিশুদের থেকে এটি শুরু করা হচ্ছে। দেশে কত শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে, তা জানা যাবে সহজে। কোনো শিক্ষার্থী অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলে তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায় না। ধরে নেওয়া হয় ঝরে গেছে। এই ইউনিক আইডিটা ১০ ডিজিট হবে না ১৭ ডিজিটি হবে সেটি নির্ধারণ করা হবে জাতীয় পরিচয়পত্র অণুুবিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে। কারণ কাজটি তাদেরই করতে হবে। আর এই আইডিটাই যখন শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তখন এনআইডিতে রূপান্তর হবে। নম্বর একই থাকবে।’

ব্যানবেইসের মহাপরিচালক ফসিউল্লাহ জানান, সব প্রতিষ্ঠানকে এক করে একটি সিস্টেমের ভেতর নিয়ে আসা হচ্ছে। এ সিস্টেমের আওতায় শিক্ষার্থীরা একটি ইউনিক আইডি পাবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ সহজ হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো শনাক্তকরণ নম্বরটি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজে লাগবে। শিক্ষার্থীর সব তথ্য এ নম্বরের মাধ্যমে একটি ডাটাবেইসে পাওয়া যাবে।

ফসিউল্লাহ আরো জানান, একটি শিশু যখন স্কুলে ভর্তি হবে তখন তার সব তথ্য সে দিয়ে দেবে। এ তথ্য ডাটাবেইসে জমা করে তাকে একটি ইউনিক আইডি দেওয়া হবে। ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য তার বাবা-মার তথ্যের সঙ্গে অনলাইনে মিলিয়ে নেওয়া হবে। পরবর্তীকালে সে যখন কোনো পাবলিক পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে যাবে বা অন্য যেকোনো কাজে শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডিটির মাধ্যমে ডাটাবেইস থেকে তার তথ্য বেরিয়ে আসবে। নতুন করে তথ্য অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন  নেই। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সব তথ্য একসঙ্গে পাওয়া যাবে।

এ ছাড়া আগামী বছর থেকে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সব তথ্য যেমন সারা দেশের প্রতিটি শ্রেণির আলাদা আলাদা শিক্ষার্থী-শিক্ষক সংখ্যা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি-অনুপস্থিতি, পরীক্ষাসহ সবকিছুর তথ্য অনলাইনে ‘লাইভ তথ্য’ অনলাইনে পাওয়া যাবে বলেও জানিয়েছেন ব্যানবেইসের মহাপরিচালক ফসিউল্লাহ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads