• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
এবার আত্রাই নিয়ে মমতার বিরোধ

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

এবার আত্রাই নিয়ে মমতার বিরোধ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১৩ জুলাই ২০১৯

বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকেছে এমন তিন-চারটি অভিন্ন নদীর ওপর বাংলাদেশ যাতে বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে না পারে, সেজন্য দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই চিঠিতে দিল্লিকে ঢাকার সঙ্গে অবিলম্বে বৈঠকে বসে বিষয়টির নিষ্পত্তি দাবি জানিয়েছেন তিনি।

এ নদীগুলো হলো আত্রাই (বা আত্রেয়ী), টাঙ্গন, পুনর্ভবা ও তুলাই, যার সবগুলোই তাদের গতিপথের একটা পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে আত্রাই নদীটিকে বালুরঘাট শহরের জীবনরেখা বলেও ধরা হয়।

তবে দিল্লিতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের অনেকেই মনে করছেন, তিস্তা চুক্তির বিরোধিতার ক্ষেত্রে নিজের অবস্থানকে আরো কঠোর করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই মমতা এই চাল দিয়েছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার আত্রাইসহ এই নদীগুলো থেকে বাংলাদেশ পানি টেনে নিচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় অভিযোগ করেন তিনি। সেদিন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা থেকে নির্বাচিত বিধায়ক নর্মদা চন্দ্র রায় সভায় বলেন, বর্ষা মৌসুমে এই নদীগুলোতে বাংলাদেশ নানা ধরনের স্থায়ী ও অস্থায়ী বাঁধ বসিয়ে জল সরিয়ে নিচ্ছে। পরে দেখা যাচ্ছে, বর্ষার পর চাষের জন্য এসব নদীর জল সবচেয়ে বেশি দরকার, তখন আর পশ্চিমবঙ্গের চাষিরা সেচের কোনো জলই পাচ্ছেন না। ফলে গোটা জেলায় সেচ ও পানীয় জলের সরবরাহ ভেঙে পড়ছে বলেও তিনি দাবি করেন।

সাধারণত এ ধরনের ক্ষেত্রে বিধানসভায় সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের মন্ত্রীরাই। কিন্তু বাংলাদেশ এবং পানি যেহেতু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রিয়’ বিষয়, তাই রাজ্যের সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে থামিয়ে দিয়ে তিনি নিজেই তখন বলতে ওঠেন।

মমতা বলেন, আত্রাই থেকে বাংলাদেশ যে অন্যায়ভাবে জল সরিয়ে নিচ্ছে, সে-কথা আমি বহুবার দিল্লিকে জানিয়েছি। বিষয়টি আন্তর্জাতিক কূটনীতির বিষয়, ফলে ভারত সরকারকেই এখানে দায়িত্ব নিতে হবে। ঢাকার সঙ্গে তাদের কথা বলতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বিষয়টিকে তারা খুব ক্যাজুয়ালি নিচ্ছে। এভাবে নিলে চলবে না। আমি আবারো তাদের বৈঠকে বসতে তাগাদা দেব। এর পরদিনই বুধবার পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জরুরি চিঠি পাঠানো হয়, যাতে আত্রাইসহ এই নদীগুলো নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বৈঠক আয়োজনের কথা বলা হয়।

পশ্চিমবঙ্গের সেচ মন্ত্রণালয়ের জানিয়েছে, চিঠির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি স্যাটেলাইট ছবির প্রতিলিপিও জুড়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, ওই উপগ্রহ-চিত্রে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, আত্রাইয়ের উজানে বাংলাদেশ বাঁধের মতো কাঠামো তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে নদীর জল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তৃণমূল সভাপতি ও বালুরঘাটের সাবেক এমপি অর্পিতা ঘোষও বলছিলেন, আত্রাই আসলে খুব ইউনিক একটি নদী। ভারতে উৎস হলেও তারপর সেটা বাংলাদেশে ঢুকেছে, পরে আবার ভারতে ঢুকেছে। পুরো বালুরঘাট শহর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জীবন-জীবিকা নির্ভর করে এই নদীটির ওপর। এখন ভারতের সঙ্গে কোনো কথা না বলেই বাংলাদেশ তাদের অংশে এই নদীটির ওপর বাঁধ বসিয়ে জল টেনে নিচ্ছে-আমাদের আপত্তি এখানেই। ফলে বালুরঘাটে এসে আত্রাই শুকিয়ে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে এক বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, এর আগেও তিনি তোর্সা-জলঢাকা, এসব নদীর জল দিয়ে তিস্তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এখন আত্রাই-পুনর্ভবা নিয়ে তিনি আরো একবার প্রমাণ করতে চাইছেন জলের ইস্যুতে তিনি রাজ্যের স্বার্থে কোনো আপস করবেন না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তার এসব চালাকি বুঝে গেছেন।

দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক বহু বছর ধরে হয়নি। কমিশনের পূর্ণাঙ্গ বৈঠক না হলে এ ধরনের বিষয়গুলোর মীমাংসা যে কঠিন, সেটা তারাও মেনে নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads