• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘বিবর্তনবাদ’ বাদ দেওয়ার দাবি হেফাজতের

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘বিবর্তনবাদ’ বাদ দেওয়ার দাবি হেফাজতের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ জুলাই ২০১৯

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী পাঠ্যপুস্তক থেকে অবিলম্বে নাস্তিক্যবাদী ধ্যান-ধারণার ‘বিবর্তনবাদ’ পাঠ বাদ দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি পাঠ্যবইয়ে ‘বিবর্তনবাদ’ অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা এবং রাষ্ট্রীয় সব কর্মকাণ্ড থেকে তাদের দূরে রাখারও দাবি জানান তিনি। গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান তিনি।

ওই বিবৃতিতে বাবুনগরী বলেন, ২০১৩ সালে শিক্ষার আধুনিকায়নের নামে নবম-দশম শ্রেণি থেকে শুরু করে মাস্টার্স পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ে ডারউইনের ‘বিবর্তনবাদ’ শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি আমাদের গোচরে এসেছে। আমরা দেখেছি ২০১২ সাল পর্যন্ত একই বইগুলোতে এই ‘বিবর্তন’ পাঠ ছিল না। এই শিক্ষার মাধ্যমে ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশের কোমলমতি মুসলিম শিক্ষার্থীর মননে আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাসকে ঘোরতর সন্দিহান ও ভঙ্গুর করে নাস্তিক্যবাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

বাবুনগরী বলেন, পাঠ্যবইয়ে ‘বিবর্তনবাদ’ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে সরকারের প্রতি অবিলম্বে ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস ও জাতিবিনাশী শিক্ষা বাতিল ও নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি। ‘বিবর্তন’-এর এ শিক্ষা চলতে থাকলে আগামী কয়েক প্রজন্ম পর সবার অগোচরেই দেশ নাস্তিক অধ্যুষিত রাষ্ট্রে পরিণত হবে।

আল্লামা বাবুনগরী আরো বলেন, নামে মুসলমান থাকলেও চিন্তা-চেতনায় সবাই নাস্তিক্যবাদী ধ্যানধারণা ও ভোগবাদে ডুবে থাকবে। আল্লাহ, রাসুল, ইসলাম নিয়ে কটূক্তি বাড়তে থাকবে। আলেম-ওলামা, ধর্মীয় শিক্ষা ও ধর্মভীরু মানুষকে বাধা ও বিরক্তিকর ভাবতে শুরু করবে। ধর্মীয় বিয়ে মানবে না। বিয়ের নানাবিধ দায়বদ্ধতা ছাড়াই লিভ টুগেদার ও অবাধ যৌনতার প্রতি আগ্রহী হবে। মদ, জুয়ার বিধিনিষেধ মানবে না। সমকামিতার বৈধতা দেওয়ার জন্য আন্দোলনে নামবে।

হেফাজত মহাসচিব বলেন, ডারউইনের বিবর্তনবাদে সৃষ্টিকর্তার ধারণা ভিত্তিহীন। তাই বিবর্তনবাদ সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকার করে না। পৃথিবীর প্রচলিত কোনো ধর্মকেই স্বীকার করে না। এই বিবর্তনবাদের পাঠ দিতে গিয়ে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান বইয়ে বাংলাদেশের মুসলমান ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হচ্ছে-‘ধর্ম মানুষের চিন্তা-চেতনার ফসল’ হিসেবে, নাউজুবিল্লাহ।

বিবৃতিতে অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাবুনগরী বলেন, নবম-দশম শ্রেণি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত বিবর্তন পাঠের বিষয়গুলো যেকোনো অভিভাবক দেখলে সহজেই বুঝতে পারবেন যে, তার সন্তানকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানান সস্তা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে  বোঝানো হচ্ছে যে, পৃথিবীর সবকিঝুই প্রকৃতি থেকে সৃষ্টি হয়ে বিবর্তনের মাধ্যমেই বর্তমান অবস্থায় এসেছে। মানুষ ও বানরের আদি পিতা একই ছিল। হজরত আদম ও হাওয়া (আ.) এসব কিছু না। সৃষ্টিকর্তা ও ধর্মের ধারণা অশিক্ষিত কর্তৃত্বপরায়ণশীল মানুষের তৈরি। বিজ্ঞানের বিবর্তনের এ আবিষ্কার কেউ খণ্ডাতে পারবে না। ৯৯ পার্সেন্ট বিজ্ঞানী বিবর্তনবাদকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

তিনি বলেন, দেশের সংবিধানে নাগরিকের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হলো স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম পালন, ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন, ধর্মীয় বিশ্বাস তথা ইমান-আকিদা ধারণ সবার নাগরিক অধিকার। সুতরাং ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যেকোনো হুমকি ও আগ্রাসী তৎপরতা থেকে রক্ষা করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের ইসলামী আকিদা-বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিরোধী বিবর্তনবাদ শিক্ষা দেওয়া সংবিধান প্রদত্ত ধর্মীয় অধিকার রক্ষার বিধানের গুরুতর লঙ্ঘন।

হেফাজত মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া প্রকৃত শিক্ষা হয় না, এমন প্রশংসনীয় বক্তব্যও বারবার দিয়েছেন। আলেম-ওলামা ও মাদরাসা শিক্ষার প্রতি তার আন্তরিকতা উল্লেখ করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের আরো মন্ত্রীরা ও গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারাও একই বক্তব্য দিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। এসব বক্তব্যের বিপরীতে জাতীয় শিক্ষায় ইমান-আকিদাবিরোধী ‘বিবর্তনবাদ’ শিক্ষার কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি না। যেখানে আধুনিক বিজ্ঞানে বাতিল করার কারণে এ বিবর্তনের পাঠ ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, কোরিয়া, রোমানিয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রে এই বাতিল পাঠ নতুনভাবে সংযোজন হয় কী করে?

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads