• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
রাজধানীসহ সারা দেশে দুর্ভোগ

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

বাড়ছে নদ-নদীর পানি

রাজধানীসহ সারা দেশে দুর্ভোগ

  • এ এইচ এম ফারুক
  • প্রকাশিত ১৩ জুলাই ২০১৯

টানা বৃষ্টিতে রাজধানীসহ সারা দেশে জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। গুলিস্তান, বঙ্গবাজার, নিউমার্কেট, যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি, রাজারবাগ, মালিবাগ ও মিরপুরসহ অধিকাংশ এলাকায় বৃষ্টির পানি আটকে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

অপরদিকে ভারী বর্ষণের কারণে দেশের ১০ জেলায় নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব জেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। পানিতে বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার ও সড়ক নিমজ্জিত হয়ে চরম বিপাকে পড়েছে মানুষ।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে, তাতে বন্য পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। তবে এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়ছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

সরেজমিন দেখা গেছে, বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে পানি জমে গেছে। কোথাও কোথাও হাঁটুপানি দেখা গেছে। বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা আর যানজটে হাবুডুবু খাচ্ছে নগরবাসী। বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে মাঝারি আর ভারী বর্ষণের কারণে এমন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে নগরবাসীকে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা আর উন্নয়ন-খোঁড়াখুঁড়ির কারণেই দীর্ঘ সময় ধরে এই পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টির কারণে দুপুরে মিরপুরের কাজীপাড়ার পুরো সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। যানবাহনগুলো ধীরগতিতে চলছিল। সেখানে বেশ কয়েকটি যানবাহন বিকল হয়ে যায়। গণপরিবহন না পেয়ে নগরবাসীকে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। ওই এলাকার সড়কে যানবাহনের পাশাপাশি নৌকাও চলতে দেখা গেছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা রমিজ উদ্দিন বলেন, বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা মিরপুরের জন্য বড় সমস্যা। কয়েক বছর ধরে নগরবাসী এর যন্ত্রণা ভোগ করলেও সিটি করপোরেশন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বৃষ্টি হলেই হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি জমে যায়। পানির মধ্যে যানবাহনও চলতে পারে না। বিকল হয়ে যায়। অনেকেই সড়কে নৌকা নামিয়েছে।

এদিকে বৃষ্টিতে নগরীর খিলগাঁও এলাকায় পানি জমে থাকার চিত্র তেমন দেখা না গেলেও এখানে সড়কগুলোতে সিটি করপোরেশন ড্রেন নির্মাণের কাজ করছে। খোঁড়াখুঁড়ির মধ্যে বৃষ্টি ওই এলাকায় দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। সড়কগুলোতে পানি আর কাদামাটি একাকার হয়ে পড়েছে।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ধানমন্ডি-২৭ নম্বরেও পানি জমে গেছে। এই এলাকাটি অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ায় সড়কে জমে থাকা পানিতে যানবাহন চলাচল করলে বড় বড় ঢেউ উঠছে। পাশাপাশি সড়কটিতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ সিটির রাজারবাগ এলাকায়ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় খবর পাওয়া গেছে।

রাজধানীর ব্যস্ততম নিউমার্কেট ও বঙ্গবাজার মার্কেটের সামনের সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সকালে সড়কের সামনে পার্কিং করা মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা বৃষ্টির পানিতে প্রায় ডুবু ডুবু অবস্থার সৃষ্টি হয়।

দক্ষিণ সিটির গুলিস্তান, নিমতলী, নাজিমউদ্দিন রোড, লালবাগ, আজিমপুর, পলাশী, বকশিবাজার, উর্দু রোড, শেখ সাহেব বাজার, আজিমপুর ও নয়াপল্টন লাইনসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা দেখা যায়। ফলে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে সাধারণ মানুষকে কাকভেজাসহ নিদারুণ ভোগান্তি পোহাতে হয়।

সরেজমিন নিউমার্কেট ঘুরে দেখা যায়, আজিমপুর কবরস্থানের দক্ষিণ গেটের সামনে থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টিতে রাস্তা ডুবে গেছে। নিউমার্কেটের সামনে পার্কিং করা প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল ডুবু ডুবু অবস্থা। রাস্তা পারাপারের জন্য ভ্যানচালকরা নেমে পড়েন। সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের সামনে বঙ্গবাজার থেকে ফায়ার সার্ভিস মোড় পর্যন্ত সড়ক পানিতে ডুবে যায়। এ সময় পানি ঠেলে যাওয়ার সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করে বিকল হয়ে পড়ে।

অপরদিকে রাজধানীর অন্যতম কাঁচামালের আড়ত যাত্রাবাড়ীতে বৃষ্টির পানিতে বন্যার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়। দুপুরে মুষলধারে বৃষ্টিতে মূল সড়কের উত্তর পার্শ্বে অপেক্ষাকৃত একটু নিচু স্থানে অবস্থিত এ আড়তে বৃষ্টির পানি জমতে থাকে। একপর্যায়ে পানি নেমে যাওয়ার সময় প্রবল স্রোত আড়তের বাইরে থাকা কুমড়াসহ বিভিন্ন কাঁচা পণ্যসামগ্রী ভাসিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। এ সময় ব্যবসায়ীদের বৃষ্টিতে ভিজেই তাদের মালামাল পানি থেকে উদ্ধার করে আড়তের ভেতর নিয়ে যেতে দেখা যায়। স্থানীয় এবং ব্যবসায়ীরা কেউ কেউ কৌতুকের ছলে এ বৃষ্টিকে ১৯৮৮ সালের বন্যার সঙ্গে তুলনা করেন। তারা বলেন, আজ মুষলধারে বৃষ্টির কারণে যাত্রাবাড়ী এলাকায় ৮৮ সালের বন্যার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিকালে সনাতন সম্প্রদায়ের রথযাত্রা উপলক্ষে মিছিল বের হবে-এ কারণে হাইকোর্ট, পলাশী, ঢাকা মেডিকেল, বকশীবাজারসহ বিভিন্ন সড়ক বন্ধ করে দেয়ায় নগরবাসীকে এক সড়ক থেকে আরেক সড়কে চক্কর খেতে হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, আরো ২-১ দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।

জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা ছিল শান্তিনগর এলাকা। আমরা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ওই এলাকার জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ করেছি। এখন বৃষ্টি হলে ঢাকা দক্ষিণে বড় ধরনের জলাবদ্ধতা হয় না।

তিনি আরো বলেন, আমাদের ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা আছে। কোথাও জলাবদ্ধতা দেখা দিলে তারা সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করে দেন। তা ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও পরিচ্ছন্নতা-পরিদর্শকরা কাজ করছেন।

 

শেরপুর প্রতিনিধি সুজন সেন জানান, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার ৫৬ গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে প্রায় ১৭ হাজার মানুষ। গত পাঁচ দিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শ্রীবরদীর তিনটি ও ঝিনাইগাতীর পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত গ্রামগুলোর কাঁচা ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, রোপা আমন ধানের বীজতলা, সবজি বাগান ও পুকুরের মাছ পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া বাড়িতে পানি ওঠায় চুলা জ্বালাতে পারছেন না প্লাবিত এলাকার মানুষ। শুকনো খাবার খেয়েই দিন পার করছেন তারা।

অন্যদিকে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, আবহাওয়া অপরিবর্তিত থাকলে পানিবন্দিদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে।

ঝিনাইগাতীর সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন চাঁন, ধানশাইল ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল বলেন, গৌরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান মন্টু, মালিঝিকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম তোতা বলেন, তাদের ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ঢলের পানিতে ১৫ হেক্টর রোপা আমন ধানের বীজতলা আংশিক নিমজ্জিত আছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু সিরাজুস সালেহীন বলেন, আমি বেশ কিছু এলাকা পরির্দশন করেছি, কিছু এলাকার পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেননি তিনি।

বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা উপজেলা প্রশাসনের। তবে যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান, সুনামগঞ্জে আবারো অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। রাস্তঘাট, জনপদ, হাট-বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্লবিত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

৫ দিন টানা বৃষ্টিপাতের কারণে আমন ধানের চারা ও বীজতলা পানিতে বিনষ্ট হয়ে গেছে। সবজি বাগানসহ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক। পরপর দুই দফায় মৎস খামারিদের অবিরাম বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের তোড়ে পানিতে ভেসে গেছে ৫ উপজেলার প্রায় তিন কোটি টাকার মাছ। নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন বিপাকে।

ঢল ও বর্ষণে জেলার ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না অভিভাবকরা।

এদিকে জেলার সব প্রধান নদ-নদীসহ সীমান্ত নদীগুলোর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত চার দিনে টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারবাজার ও ধরমপাশা উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালের রিডিং অনুযায়ী সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতি উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তা ছাড়া বন্যা মোকাবেলায় প্রশাসনের সব প্রস্ত্ততি রয়েছে বলে তিনি জানান।  

লালমনিরহাট প্রতিনিধি এস কে সাহেদ জানান, লালমনিরহাটে বৃষ্টি কমলেও উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা নদীর পানি বিপদ সীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানিও বিপদ সীমা ছুঁইছুঁই হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রধান এই দুই নদীসহ জেলার সব কটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

এর ফলে অবনতি হয়েছে লালমনিরহাটের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি। প্ল­াবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, কুলাঘাট ও মোগলহাট ইউনিয়নের তিস্তা ও ধরলার নদীর চরাঞ্চল প্ল­াবিত হয়ে পড়েছে। এসব ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছেন।

এদিকে তিস্তায় পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের তালেবমোড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়াও জেলার তিস্তার তীরবর্তী বেশ কিছু বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।

বন্যার পানিতে ডুবে গেছে চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট, হাট বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলো বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। 

লালমনিরহাটের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বজলে করিম বলেন, যেহেতু গত কয়েকদিন থেকে বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামছে, সেহেতু তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তা নদীর পানি বিপদ সীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চরাঞ্চল প­াবিত হয়েছে এবং নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে লালমনিরহাটে বন্যা ভয়াবহ পরিস্থিতি ধারণ করতে পারে বলেও তিনি জানান।

জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে তালিকা করা হয়েছে। দুর্গত মানুষের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬৮ টন চাল।

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শুক্রবার তিস্তার পানি প্রবাহ বেলা ৩টা থেকে বিপদ সীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যারাজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে চেঙ্গী নদীর পানি কমতে শুরু করলেও অপরিবর্তিত রয়েছে মাইনী নদীর পানি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত দীঘিনালা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেছে এলাকার বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি ভেঙে গেছে। এতে জনসাধারণকে নানা দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে। গত ৫ দিনে খাগড়াছড়িতে ৩৪২ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে জেলার ৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ১২টি কেন্দ্রে প্রায় ৩ হাজার পানিবন্দি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে খাবারসহ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে প্রশাসন। এদিকে খাগড়াছড়ির মধুপুর এলাকায় টানা বৃষ্টির কারণে দোকানপাটসহ সড়কের একটি অংশ দেবে গেছে। দীঘিনালা-মেরুং সড়কের বড়মেরুং এলাকায় স্টিলব্রিজ নামক সড়ক ডুবে যাওয়ায় মেরুং এবং লংগদুর সঙ্গে দীঘিনালার সড়ক যোগাযোগ এখনো বন্ধ রয়েছে। পানছড়ির দুদুকছড়া ব্রিজে ফাটল দেখা দিয়েছে। এদিকে পাহাড়ধসের শঙ্কায় ঝুঁকিতে বসবাসরত কিছু পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। খাগড়াছড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছে খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য ও উপজাতীয় শরর্ণাথীবিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

এ ছাড়া গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাবুছড়াতে পাহাড়ধসে নিহত যোগেন্দ্র চাকমার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম।

সিলেট থেকে আবু তাহের চৌধুরী জানান, সিলেটে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বাড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার রিডিং অনুযায়ী সিলেটে সুরমা, কুশিয়ারাসহ নদীগুলোর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, দুপুর ১২টায় সিলেটে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার সাড়ে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কানাইঘাটে প্রবাহিত হয়েছে বিপদ সীমার ১৩ দশমিক ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর পানি বিয়ানীবাজারের শেওলায় প্রবাহিত হয়েছে বিপদ সীমার ১২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। শেরপুরে প্রবাহিত হয়েছে বিপদ সীমার ৮ দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। জৈন্তাপুরে সারী নদীর পানি প্রবাহিত হয়েছে বিপদ সীমার ১১ দশমিক ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং কানাইঘাটে লোভাছড়ার পানি প্রবাহিত হয়েছে বিপদ সীমার ১৪ দশমিক ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এ ছাড়া সকাল ৯টার প্রাপ্ত তথ্যে জকিগঞ্জের আমলশীদে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবাহিত হয়েছে বিপদ সীমার ১৫ দশমিক ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।

এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ১০০টির বেশি গ্রামের মানুষ। এ ছাড়া ৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। এদিকে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও ধলাই এবং গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি ও জাফলং পাথর কোয়ারির সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে এসব পাথর কোয়ারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় দুই লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads