মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে নিজের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার যে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশি নাগরিক প্রিয়া সাহা, তা সত্য নয় বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি গতকাল রোববার এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি ওই সংবাদ সম্মেলনে শ ম রেজাউল করিম বলেন, সম্পত্তি কেউ অবৈধভাবে দখল করা বা তার ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য। মুসলিম মৌলবাদীরা ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে প্রিয়া সাহা যে অভিযোগ করেছেন, তাও অসত্য। এ সময় প্রিয়া সাহার বক্তব্যে বিভ্রান্ত হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট না করার আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, পিরোজপুর-১ সংসদীয় আসনের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে দেশের হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাইকে জানাতে চাই, আমার এলাকায় ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত কোনো ঘটনা ঘটেনি।
মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার এলাকায় মৌলবাদীদের কোনো অবস্থান নেই। আমার এলাকায় হিন্দু-মুসলিমের সম্প্রীতি, সহাবস্থান একটি অপূর্ব নিদর্শন সৃষ্টি করেছে। এটা হাজার বছরের ঐতিহ্য। আমাদের সম্প্রীতির জায়গা অনেক বড়। কাজেই প্রিয়া সাহার বক্তব্যে কোনো মানুষ যেন বিভ্রান্ত না হন বা কেউ যেন ফায়দা লুটে নিতে না পারেন, সে বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ইতোমধ্যে পিরোজপুর জেলার হিন্দু সম্প্র্রদায়ের নেতৃস্থানীয় সবাই প্রিয়া সাহার বক্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন বলেও দাবি করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে এবং একই ইউনিয়নের অধিবাসী হিসেবে দেশবাসীকে অবহিত করতে চাই, প্রিয়া সাহা পিরোজপুর-১ আসনের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের চর বানিয়ারি গ্রামে বসবাস করেন না। এ গ্রামে তার নিজস্ব কোনো সম্পত্তি বা বাড়িঘর নেই। এ গ্রামে তার বাবা ও ভাইদের সম্পত্তি রয়েছে। তাদের বাড়িতে কেউ থাকেন না।’
তিনি বলেন, ‘একটি পরিত্যক্ত ঘরে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রিয়া সাহার ভাই জগদীশ বিশ্বাসের কেয়ারটেকার কমলেশ বিশ্বাস নাজিরপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সে অভিযোগে তিনি কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেননি। এমনকি কাউকে সন্দেহও করেননি। সেই এজাহারে সাম্প্র্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য কোনো মৌলবাদী গোষ্ঠী বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কেউ এ-জাতীয় ঘটনা ঘটিয়েছে-এমন শঙ্কার কথা বলা হয়নি। এ অভিযোগটি পুলিশ তদন্ত করছে।’
এছাড়া মন্ত্রী উল্লেখ করেন, এ এলাকায় বলেশ্বর নদে চর জেগে ওঠায় বলেশ্বরের দুই পারের লোকদের মধ্যে সরকারি খাসজমির দাবি করা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে অসংখ্য মামলা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় জগদীশ বিশ্বাসের কেয়ারটেকার কমলেশ বিশ্বাস বাদী। তিনি হিন্দু-মুসলিম উভয় শ্রেণির লোকদের আসামি করেছেন।’
শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে বলেছেন, বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লক্ষ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান গুম হয়েছে। আমার নির্বাচনী এলাকার যেখানে প্রিয়া সাহার বাবার বাড়ি, সেখানে একজনও অন্য ধর্মাবলম্বী ব্যক্তি গুম হয়নি।’
পিরোজপুর-১ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আমার নির্বাচনী এলাকা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই মিলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অপূর্ব নিদর্শনের একটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এলাকা। এখানে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কখনোই কেউ অবিচারের শিকার হন না। এ এলাকায় এখনো হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা বসবাস করেন। কোনোভাবেই ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়নি। প্রিয়া সাহা দেশের বাইরে গিয়ে তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া ও জমি নিয়ে নেওয়ার যে অভিযোগ করেছেন, তা অসত্য।’
নিজ নির্বাচনী এলাকায় একজন হিন্দুও কোনোভাবে গুম হয়েছেন কি না, প্রিয়া সাহার অভিযোগের কোনো সত্যতা আছে কি না, সে বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য সাংবাদিকদের আহ্বান জানান মন্ত্রী।
এ বিষয়ে পিরোজপুর জেলা পূজা পরিষদের সভাপতি বিমল মণ্ডল, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি তুষার মজুমদারের দেওয়া বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে শ ম রেজাউল করিম বলেন, তারা কেউ প্রিয়া সাহার বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন এবং তাদের মতে প্রিয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
