• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
শিশুরা স্কুলবিমুখ

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

অভিভাবকরাও আতঙ্কে

শিশুরা স্কুলবিমুখ

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৩ জুলাই ২০১৯

ছেলেধরা গুজব থেকে সৃষ্ট আতঙ্কে বিদ্যালয়ে যেতে চাচ্ছে না শিশুরা। তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে। এমনকি অভিভাবক সঙ্গে যেতে চাইলেও তাদের আতঙ্ক কমছে না। অভিভাবকদের নানা আশ্বাসেও বিদ্যালয়গামী শিশুদের ভয় কাটছে না।

ছেলেধরা গুজবে সারা দেশে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে সন্দেহভাজন যে কাউকে গণপিটুনি দিয়ে পরিস্থিতিকে আরো অসহনীয় করে তোলা হয়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বিষয়টি সারা দেশে ব্যাপকভাবে সামনে এসেছে। এর শুরুটা হয় মূলত তথ্যপ্রযুক্তিকে ব্যবহার করে।

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের ছয়ানি বকশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফরিন আকতার। তার বাবা কামরুজ্জামান বলেন, প্রতিদিনের কাজ নিয়ে তাকে ব্যস্ত থাকতে হয়। আফরিন এতদিন একাই স্কুলে যাওয়া-আসা করত। তবে ছেলেধরা গুজবটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে আফরিন একা স্কুলে যেতে চাচ্ছে না। ছেলেধরা তাকে নিয়ে যাবে বলে ভয় পাচ্ছে। বিষয়টি গুজব বুঝলেও আমাদের মধ্যেও এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে তাকে নিয়মিত স্কুলে নিয়ে যেতে হচ্ছে এবং স্কুল থেকে নিয়ে আসতে হচ্ছে।

একই এলাকার আথাইল শিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের স্কুলে অনেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকছেন। তবে আমরা নিজ থেকে উদ্যোগ নিয়ে অভিভাবকদের ভীতি দূর করার ব্যবস্থা করছি। শিক্ষার্থীদেরও ভয় দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ অভিভাবকদের মধ্যেও এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে। অপেক্ষাকৃত শহরের মানুষ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকলেও গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ আসলে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। তারাও তাদের বাচ্চাদের নিয়ে ভয়ে আছেন।

চাঁদপুরের মতলব থানার একটি গ্রামের বাসিন্দা মানিক মিয়া। তিনি বলেন, গুজবটি শুরু থেকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের এলাকায়। আমরা আসলে নিজেরাও কিছুটা ভয়ে আছি। ছেলেধরা গুজব থেকে ব্যক্তিগত রেষারেষিতে বদলা নেওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে শোনা যাচ্ছে। তাই নারী যারা পর্দা হিসেবে বোরকা পরিধান করে থাকেন তারা ভয়ে আছেন।

বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান বলেন, শিশুরা যা শোনে তাই বিশ্বাস করে থাকে। বিষয়টি গুজব হলেও দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই ভয় তাদের মনের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে। যতটাই আমরা আশ্বস্ত করি না কেন, তার মধ্যে ভীতি থাকবেই।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলেন, ছেলেধরা বিষয়টি যে গুজব এটি এরই মধ্যে সবার কাছে স্পষ্ট। এই নিয়ে আতঙ্কিত না হতে আমি অভিভাবক ও বিদ্যালয়গামী বাচ্চাদের আহ্বান করব। নির্ভয়ে বাচ্চারা স্কুলে যাবে এটিই আমাদের চাওয়া ও সরকারের চাওয়া।

এই ভয় থেকে স্কুলে অনুপস্থিতি বেড়েছে কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, কিছু জায়গা থেকে এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে স্কুলে অনুপস্থিতি ব্যাপক হারে কমে গেছে এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই।

এদিকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যাকাণ্ড রোধে সতর্কতা জারি করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। দেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। সব শিক্ষক, গভর্নিং বডির সদস্য ও অভিভাবকদের নিয়ে সচেতনামূলক কর্মকাণ্ড হাতে নিতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে সারা দেশে চলমান বন্যার কারণে অনেক এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তার সঙ্গে এই ছেলেধরা গুজব নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে সর্বমহলে। প্রায় সপ্তাহ দুই আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি মহল গুজব ছড়িয়ে দেয়, পদ্মা সেতুর জন্য মাথা সংগ্রহ করা হচ্ছে। যদিও এর ভিত্তি পাওয়া যায়নি। সেতু কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুরু থেকেই একে গুজব বলে আসছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads