• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
তাজউদ্দীন আহমদের জন্মদিন আজ

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

তাজউদ্দীন আহমদের জন্মদিন আজ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ২৩ জুলাই ২০১৯

জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদের জন্মদিন আজ। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় চার নেতার একজন। ১৯২৫ সালের আজকের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার দরদরিয়া গ্রামে জন্ম হয় এই মহান নেতার। তার বাবা মৌলভী মো. ইয়াসিন খান এবং মা মেহেরুননেসা খান। ৪ ভাই, ৬ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ।

তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৪৪ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৪৮ সালে আইএ এবং ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন এবং ঢাকায় আইন ব্যবসা শুরু করেন।

ছাত্রজীবন থেকেই তাজউদ্দীন আহমদ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৪৩ সাল থেকে তিনি মুসলিম লীগের সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং ১৯৪৪ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। পাকিস্তান আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তাজউদ্দীন আহমদ বাংলা ভাষার অধিকার, বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সব আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মুসলিম লীগ সরকারের গণবিচ্ছিন্ন রাজনীতির প্রতিবাদে তিনি এ দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। তিনি ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের (১৯৪৯) অন্যতম উদ্যোক্তা। তিনি ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত পূর্ববাংলা ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে তিনি ভাষা আন্দোলনকালে গ্রেপ্তার হন এবং কারা নির্যাতন ভোগ করেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য এবং ১৯৫১ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত এ সংগঠনের নির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৭ সালে তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন এবং পরে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে গণহত্যা শুরু করে। এই সময় শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। এরপর ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় তাজউদ্দীন আহমদ ফরিদপুর কুষ্টিয়া পথে পশ্চিম বাংলার সীমান্তে পৌঁছান। তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার জন্য দিল্লি যান। দিল্লিতে তার সঙ্গে ভারত সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয়। তবে ভারত সরকারের কাছ থেকে সাহায্য পেতে হলে একটি স্বাধীন সরকারের বৈধতা বা স্বীকৃতি থাকা প্রয়োজন। তখনই তিনি প্রবাসী সরকার গঠনের চিন্তা করেন। তাজউদ্দীন আহমদ ইন্দিরা গান্ধীর কাছে স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতির জন্য অনুরোধ করেন। ইন্দিরা গান্ধী তাকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, উপযুক্ত সময়ে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

৪ এপ্রিল দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদের আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। ১০ এপ্রিল নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা আগরতলায় একত্রিত হয়ে এক সর্বসস্মত সিদ্ধান্তে সরকার গঠন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই সরকার স্বাধীন সার্বভৌম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’। স্বাধীনতার সনদ (Charter of Independence) বলে এই সরকারের কার্যকারিতা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হয়।

১১ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদ বেতারে ভাষণ দেন। ১৭ এপ্রিল নবগঠিত মন্ত্রিসভার প্রকাশ্য শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় কুষ্টিয়ার মেহেরপুর মহকুমার সীমান্তবর্তী গ্রাম বৈদনাথতলায়, যার নতুন নাম হয় মুজিবনগর। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, পাকিস্তান আজ মৃত এবং অসংখ্য আদম সন্তানের লাশের তলায় তার কবর রচিত হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশ আজ বাস্তব সত্য। সাড়ে সাত কোটি বাঙালি অজেয় মনোবল ও সাহসের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে এবং প্রতিদিন হাজার হাজার বাঙালি সন্তান রক্ত দিয়ে এই নতুন রাষ্ট্রকে লালিত-পালিত করছেন। দুনিয়ার কোনো জাতি এই নতুন শক্তিকে ধ্বংস করতে পারবে না।

১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরে আনুষ্ঠানিকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তাজউদ্দীন আহমদ হন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। অস্থায়ী সরকার ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত কলকাতা থেকে কার্য পরিচালনা করে। তাজউদ্দীন আহমদ দৃঢ়তা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এতে নেতৃত্ব দেন।

১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধের পর শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে আসলে তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তখন তিনি অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর বন্দি করা হয় তাজউদ্দীন আহমদকে। এরপর ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে অপর তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads