• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
হুজুগ থেকেই গুজবের বিশৃঙ্খলা

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

হুজুগ থেকেই গুজবের বিশৃঙ্খলা

  • আজাদ হোসেন সুমন
  • প্রকাশিত ২৫ জুলাই ২০১৯

নেতিবাচক কোনো সংবাদ শুনলে তা যাচাই না করেই তার পেছনে ছুটতে থাকে বাঙালিরা। এতে দেশের ক্ষতি হলো নাকি কার প্রাণ গেল সেটা ভেবে দেখার সময় থাকে না তাদের। এমন মানসিকতার জন্য বাঙালিদের নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হুজুগে বাঙালি। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বিশেষ করে গণপিটুনির ঘটনা ঘটে এ হুজুগ থেকেই। বাঙালি অতি আবেগপ্রবণ, গুজব শুনে সহজেই বিশ্বাস করে। শুধু বিশ্বাসই করে না, সেটা প্রতিষ্ঠিত করতে নিজের অবস্থান থেকে জোরালো ভূমিকা রাখে। আর এতেই সমাজ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের মতে, অনাধুনিক শিক্ষা, অন্ধ বিশ্বাস ও গোঁড়ামি যেখানে প্রকট। সেখানেই গুজব প্রচারণাকারীরা হুজুগ সৃষ্টিতে সফল হয়। বর্তমানে দেশে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়া ছেলেধরা আতঙ্কও এরকমই। ১৫ দিন ধরে ছেলেধরা আতঙ্ক ও গণপিটুনির নামে এক ধরনের নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। অবশ্য সরকার এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে হার্ডলাইনে গেছে। হাটবাজার, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দিরে চলছে গুজববিরোধী প্রচারণা। পুলিশ গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গুজব প্রচারণা চালিয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত আইজিপি এ ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করছিলেন। এ সময় এ প্রতিবেদক তাকে প্রশ্ন করেন, ছেলেধরা আতঙ্ক ছড়িয়ে গণপিটুনির ঘটনা ঘটানো হচ্ছে, এটা পরিকল্পিত নাকি হুজুগ। জবাবে আইজিপি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সরলপ্রাণ। তারা সহজেই বিশ্বাস করে। আর এ সুযোগ নিয়ে থাকে দুষ্টচক্র। আমাদের টার্গেট এখন ওই দুষ্টচক্র। ইতোমধ্যে সাদা পোশাকের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও শুরু করা হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইনগুলোর ওপরও নজর রাখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আবদুল মান্নান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, গুজব নিয়ে কবি শামসুর রাহমান একটি কবিতায় লিখেছিলেন ‘এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে, চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে। কানের খোঁজে ছুটছি মাঠে, কাটছি সাঁতার বিলে, আকাশ থেকে চিলটাকে আজ ফেলব পেড়ে ঢিলে’। গুজব নতুন কিছু নয়, এটা শুধু বাংলাদেশের নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই গুজব নিয়ে অনেক বড় বড় ঘটনা, গল্প-কাহিনী আছে। বাঙালিদের বলে হুজুগে বাঙালি বলা হয়। শুধু অশিক্ষা, অন্ধ বিশ্বাস গোঁড়ামি থেকে নয়—বহু শিক্ষিত সমাজেও এই গুজবের প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশের কথাই বলি, ৫০ বছর আগে শিক্ষার তেমন প্রসার ছিল না। তখন না হয় গুজব বা হুজুগের প্রচলন ছিল। কিন্তু এখন আধুনিক এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কেন গুজবের হোলি খেলা। কেন মানুষ না জেনে শুধু আরেকজনের কথা শুনে এবং সেটা বিশ্বাস করে একজন মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে। এই সভ্য সমাজে এমন তো হওয়ার কথা নয় কিন্তু হচ্ছে। দিন দিন ভাইরাসের মতো ছড়িয়েও পড়ছে সর্বত্র। সরকার ও সরকারের প্রশাসনযন্ত্র প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েও রোধ করতে বেগ পেতে হচ্ছে।

এর কারণ হচ্ছে মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে, কেউ কেউ বিকারগ্রস্ত হচ্ছে। দেখছেন না মাদরাসাগুলোতে কী হচ্ছে। ইমামরা কী করছে। ভাবতে ঘেন্না লাগে। তিনি আরো বলেন, বিকৃত রুচির মানুষ সর্বত্র বিরাজমান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads