• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত শিশু সামিউল হত্যা মামলার 

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত শিশু সামিউল হত্যা মামলার 

  • এমদাদুল হক খান
  • প্রকাশিত ০২ আগস্ট ২০১৯

রাজধানীর আদাবরে ছয় বছরের শিশু খন্দকার সামিউল আজিম ওয়াফি হত্যার মামলা প্রধান আসামি শামসুজ্জামান আরিফ ওরফে বাক্কু হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পাঁচ বছর হলো আত্মগোপনে চলে গেছেন। এরপর আর পুলিশ তার সন্ধান পায়নি। অন্যদিকে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার বাদী সামিউলের বাবা কে আর আজম গত বছর কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মৃত্যুর আগে তিনি মামলার অপর আসামি সামিউলের মা আশেয়া হুমায়রা এশাকে নিজ জিম্মায় জামিনে ছাড়িয়ে নেন। এছাড়া গত ৯ বছরেও এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়নি। আগামী ৬ আগস্ট মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন সন্দিহান অনেকেই।

সামিউলের বাবার বন্ধু অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম জানান, মামলাটি ভবিষ্যৎ অন্ধকার। গত ৯ বছরেও চাঞ্চল্যকর এই মামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি। দুটি কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ায় গত বছরের শুরুতে সামিউলে বাবা কে আর আজম মারা যান। এর আগে তিনি হলফনামা দিয়ে ২০১৫ সালের ২ এপ্রিল সামিউলের মা আশেয়া হুমায়রা এশাকে নিজ জিম্মায় জামিনে ছাড়িয়ে নেন।

২০১৪ সালের ৪ মার্চ হাইকোর্টের আদেশে জামিনে ছাড়া পান মামলার প্রধান আসামি শামসুজ্জামান আরিফ ওরফে বাক্কু। ওই বছরের ১৫ এপ্রিল থেকে আদালত তার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এর পর থেকে আজ পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। বাক্কু দেশে আছে না বিদেশে পালিয়ে গেছে, তা কেউ জানে না।

২০১০ সালের ২৩ জুন প্রথমে সামিউলকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহ গুম করতে ফ্রিজে ঢোকানো হয়। পরে তা বস্তায় ঢুকিয়ে ২০১০ সালের ২৪ জুন রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়। রাজধানীর মোহাম্মদপুর নবোদয় হাউজিংয়ের গ্রিনউড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ইংলিশ মিডিয়ামে প্লে গ্রুপে পড়ত সামিউল। সে সময় তার হত্যার ঘটনাটি নিয়ে আলোড়ন ওঠে দেশজুড়ে। গণমাধ্যম একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই ঘটনাটি নিয়ে। আর পুলিশ দ্রুত বিচারের আশ্বাস দেয়। সামিউল হত্যার পর নিজের স্ত্রী এবং তার কথিত বন্ধু শামসুজ্জামান আরিফ ওরফে বাক্কুকে আসামি করে মামলা করেন শিশুটির বাবা কে আর আজম। মামলায় স্ত্রী এশার বিরুদ্ধে সাক্ষীও দিয়েছেন তিনি। কিন্তু ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর তিনিই স্ত্রীকে জামিনে মুক্ত করতে আদালতে একটি হলফনামা  দেন। এর আগে আশেয়া হুমায়রা এশা বেশ কয়েকবার জামিন আবেদন করেন। ২০১৪ সালের ২০ মার্চ আদালত এক আদেশে বলেছেন, আসামি আশেয়া হুমায়রা এশার বিরুদ্ধে তার শিশুসন্তান ভিকটিম সামিউলকে মামলার অপর আসামি শামসুজ্জামান আরিফের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের কারণে উভয় আসামি পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার অভিযোগ আছে। উভয় আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অনৈতিক সম্পর্কের কারণে নিজ সন্তানকে খুন করার অভিযোগে আনীত মামলায় জামিন মঞ্জুর করার সুযোগ নেই। কারণ এ ধরনের ঘটনা সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। আশেয়াকে মুক্তি দেওয়া হলে সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই জামিন নামঞ্জুর করা হলো। পরবর্তী সময়ে বাদী একটি হলফনামা দিয়ে তার নিজ জিম্মায় তাকে জামিনের আবেদন করলে বিশেষ দায়রা জজ আমিনুল হক এশার জামিন মঞ্জুর করেন। ৪ বছর ৯ মাস কারাভোগের পর ২০১৫ সালের ২ এপ্রিল এশা জামিনে মুক্তি পান। কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়ার পর সামিউলের বাবার সঙ্গে রাজধানীর কচুক্ষেত এলকায় বাসা নিয়ে ফের সংসার শুরু করেন এশা। স্ত্রীকে জামিনে বের করার জন্য আদালতে দেওয়া এফিডেভিটে কে এম আজম উল্লেখ করেন, আমি কিডনি রোগী, মুমূর্ষু অবস্থায় আছি। আমার কেউ নেই। আমি এবং আমার স্ত্রী এশার মধ্যে এখনো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিদ্যমান। আমাকে দেখার মতো কেউ না থাকায় আমার সেবাযত্নের জন্য আমার স্ত্রীর পাশে থাকার প্রয়োজন বোধ করছি। তাই প্রয়োজনে আমার জিম্মায় তার জামিন মঞ্জুর করা হোক। আদালত এই এফিডেভিটের ভিত্তিতে এবং দ্রুত মামলাটির নিষ্পত্তি না হওয়ার আশঙ্কা  থাকায় জামিন মঞ্জুর করে।

২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার তৎকালীন এসআই কাজী শাহান হক এশা ও বাক্কুর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। মামলাটিতে ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দুই আসামির বিচার শুরু হয়। মামলাটিতে বাদী, ম্যাজিস্ট্রেট, চিকিৎসক এবং তদন্ত কর্মকর্তাসহ এ পর্যন্ত ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, বাক্কু ও এশার অবৈধ সম্পর্ক দেখে ফেলায় সামিউলকে অপহরণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন বাক্কু। এরপর আদাবরে নবোদয় হাউজিংয়ে সামিউলদের বাসার পাশে তার লাশ বস্তা বন্দি করে রাখা হয়। 

ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মবুিনল ইসলাম বলেন, বাদী মারা যাওয়ায় এ মামলায় কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ মামলাটির বাদী এখন রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের খরচেই মামলাটির বিচারকাজ চলছে। এ মামলায় যে পরিমাণ সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে বিচারক চাইলে যেকোনো সময় এ মামলার রায় ঘোষণা করতে পারেন। তবে বাক্কু গ্রেপ্তারের পর থেকেই তার সাজা কার্যকর হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads