• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

সিরাজগঞ্জে পশুর হাটে কদর বেশী দেশীয় গরুর

  • সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৫ আগস্ট ২০১৯

ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের হাটগুলোতে প্রচুর গরু-ছাগল ওঠেছে। গতবারের চেয়ে খুব বেশি দাম কম না হওয়ায় কৃষক ও খামারীরাও খুশি। তবে ক্রেতারা বলছেন, দাম বেশী হওয়ায় তাদের বাজেটে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। খামারীরা বলছে, খৈল-ভুষিসহ খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গরু-লালন পালনে ব্যয় বেশি হওয়ায় দাম একটু বেশী। তবে খামারীদের আশঙ্কা যদি ভারতীয় গরু অবৈধপথে দেশে প্রবেশ করে তবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এ জন্য সরকারকে কঠোর হওয়ার দাবী জানিয়েছেন কৃষক-খামারীরা।

কৃষি বিভাগ বলছে, ঈদে লাভের আশায় কৃষকরা কঠোর পরিশ্রম করে গবাদিপশু পুষেছে। জেলার ৯ উপজেলায় এ বছর কোরবানির জন্য ১ লাখ ৪৪ হাজার ২৪৩টি গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৮ হাজার ৪০৬টি গরু, ৪৭ হাজার ৬১৭টি ছাগল এবং বাকিগুলো ভেড়া ও মহিষ। এসব পশু দেশীয় দানাদার ও প্রাকৃতিক খাবার দেওয়া হচ্ছে। যদিও সাম্প্রতিক বন্যা এ কার্যক্রমে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। সবকিছু মনিটরিং করছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

জানা যায়, শাহজাদপুর, উল্লাপড়া, সদর, বেলকুচি, চৌহালী, তাড়াশ, রায়গঞ্জসহ ৯ উপজেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সোয়া লাখ গবাদিপশু। কিন্তু প্রতি বছরের মতো এ বছরও জেলায় অতিমাত্রায় দেশীয় গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ চলছে। এবারও এসব দেশীয় পশু জেলার কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে। খামারিরা গাভী পরিচর্যার পাশাপাশি ষাঁড়ের পরিচর্যাও করছেন। তবে গো খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে পশু মোটাতাজা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিদের। অবশ্য তাদের আশা- মোটাতাজাকরণে খরচ যত বেশিই হোক, কোরবানির হাটগুলোয় যদি শেষ পর্যন্ত বিদেশি পশু স্থান না পায় তাহলে তারা লাভের মুখ দেখবেন।

সোমবার বিকেলে সরেজমিনে সলঙ্গা হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে ছোট-বড় প্রচুর পরিমাণ কোরবানীর গরু উঠেছে। ঐতিহ্যবাহী সলঙ্গা হাটটি ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু হয়। সলঙ্গা হাটটিতে সাধারণ প্রতি সোমবার গরু-ছাগল-মহিষও ভেরা বিক্রি হয়। জেলার স্বনামধন্য হাট হওয়ায় হাটে ক্রেতার সংখ্যা বরাবরই বেশী থাকে। সলঙ্গা  প্রতি হাটে প্রায় ৭-৮ হাজার গরু ওঠে।  হাটে ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার গরুর কেনা-বেচা চলছে। তবে কিছু গরু ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা দাম হাকাচ্ছে বিক্রেতারা।  তবে গ্রাহকদের চাহিদা সবচেয়ে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা দামের গরুর প্রতি। ছাগলের চাহিদাও রয়েছে প্রচুর।

 

হাটে পোশাক পরিহিত পুলিশসহ সাধা পোশাকে ও গোয়েন্দা পুলিশের মাধ্যমে কঠর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জালনোট শনাক্তের জন্য মেশিন বসানো হয়েছে। হাটটিতে ক্রেতারা  কোনো দালালের মাধ্যমে নয়, সরাসরি কৃষক ও খামারীদের কাছ থেকে তাদের চাহিদা মোতাবেক কোরবানীর পশু কিনছেন। তবে এখনো হাটে ভারতীয় গরু না ওঠায় বিক্রেতারা অনেকটা স্বস্তিতে রয়েছেন।

 

সলঙ্গা থানার শহরিয়ার পুর গ্রামের রিপন আহম্মেদ নামের গরু ক্রেতা জানান, হাটে প্রচুর পরিমাণের দেশীয় গরু উঠেছে। তবে গতবারের চেয়ে গরু প্রতি ৫-৭ হাজার টাকা বেশি মনে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় গরু হাটে না থানায় গরুর দাম এবছর একটু বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

সলঙ্গা থানার আমশড়া গ্রামের আলী আশরাফ নামে এক গরু ক্রেতা বলেন, ভারতীয় গরু হাটে না থাকায় এবছ আমাদের গরু প্রতি ৭-১০ হাজার টাকা বেশি গুণতে হচ্ছে। তবে হাটে দালালদের দৌরত্ব না থাকায় প্রতি বছর আমার এই হাট থেকেই গরু কিনে থাকি।

তাড়াশ উপজেলার মাধবপুর গ্রামের ফজলার রহমান খান, সলঙ্গা থানার চড়িয়া উজির গ্রামের বাবলু সরকার, থানার মালতি নগড় গ্রামের আব্দুর করিমসহ  কয়েকজন  গরু বিক্রেতা জানান, দেশীয় গরুর চাহিদা বেশি। গত ৪ মাস আগে যে কোনো গরুর দাম থেকে ১০-১৫ হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এবার আমাদের একটু লাভ বেশি হচ্ছে। তবে বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতা কম থাকায় এখন র্পযন্ত বিক্রি একটু কম হচ্ছে।

পাবনার মির্জাপুর উপজেলার চয়ড়া গ্রামের রানা মাসুদ,সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার মাকিদয়িার গ্রামের আশরাফুল ইসলাম, ক্ষুদ্র শিমলা আব্দুস সালাম আকন্দসহ কয়েক জন ছাগল বিক্রেতা জানান, প্রতি বছর বিভিন্ন জেলা থেকে এই হাটে ছাগল ক্রয় করে নিয়ে যায়। হাটে প্রতি ছাগল বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার থেকে  ২১ হাজার টাকায়।

সলঙ্গা হাট ইজাদার জাহাঙ্গীর আলম লাবু জানান, হাটের পক্ষ থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা । এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ক্রেতাদের চাহিদার মধ্যে খামারে বা বাড়িতে পোষা গরুই প্রাধান্য পাচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। পশু আমদানির ওপর দাম নির্ভর করলেও এ বছর সব ধরনের পশুর দাম তুলনামূলক একটু বেশি হবে বলে মনে করছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে।

এ ছাড়া এবারের কোরবানিতে দেশীয় গরুর কদর থাকবে বলে মনে করছেন সকলেই। এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর লাবু বলেন, এবারের ঈদে বিভিন্ন এলাকার খামার ও গৃহস্থদের বাড়ির গরু তাদের হাটে প্রাধান্য পাচ্ছে। অন্য বছরের মতো এবারে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা খামারের সংখ্যাও কম নয়। তবে বিভিন্ন গ্রামের গৃহস্থদের বাড়িতে বাড়িতে ৩-৪ টি দেশীয় গরু পালন করেছেন অনেকে। আর ওই সব গরু এবারের কোরবানির ঈদের ক্রেতাদের হবে প্রধান টার্গেট।

সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জেড জেড মো. তাজুল হুদা জানান, কোরবানীর পশুর হাটগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাটে ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টি ও দালাল মুক্ত করার জন্য পোশাকধারী পুলিশসহ সাদা পোশাকে ও গোয়েন্দার মাধ্যামে থানা এলাকায় প্রতিটি পশুর হাটে ব্যাপক নিরাপত্ত জোরদার করা হয়েছে। জালনোট শনাক্তের জন্য মেশিন বসানো হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads